কলকাতা, 6 জানুয়ারি: চিনে ছড়িয়ে পড়া যে ভাইরাস নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে, সেই হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগীর হদিশ দেড়মাস আগেই মিলেছিল কলকাতায় ৷ গত নভেম্বরের গোড়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় ৷
সে কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয় ৷ গত 12 নভেম্বর তার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসে ৷ সেখানে দেখা যায় যে শিশুটি এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৷ বেসরকারি হাসপাতালে ওই শিশুটি ভর্তি হয়েছিল চিকিৎসক সহেলী দাশগুপ্তর তত্ত্বাবধানে ।
তিনি জানান, পাঁচ মাস দু’দিনের ওই শিশুটি যাদবপুরের বাসিন্দা । তবে বাবা-মায়ের চাকরির সূত্রে বর্তমানে সে থাকে মুম্বইতে । নভেম্বরে কলকাতায় আসার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ তার জ্বর ছিল ও পেট খারাপ হয়েছিল ৷ তারপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ সেখানে ওর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশনের পরিমাণও কমে যায় । তখন তাকে ব্রিদিং সাপোর্ট দেওয়া হয় ৷
ড. সহেলী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘করোনা পরবর্তী সময় থেকেই আমরা লালারস সংগ্রহ করে এটি টেস্ট করে থাকি, সেটা এক্ষেত্রেও করা হয়েছিল । সেখানে ওর এইচএমপিভি পজেটিভ আসে । তারপর মোটামুটি কিছুদিন আইসিউতে থাকার পর দু’সপ্তাহের মধ্যে আমরা ওকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছি । এখন শিশুটি ভালো আছে ।’’
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে এইচএমপিভি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে ৷ চিনে এই রোগ হু হু করে ছড়াচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে ৷ যেহেতু চিন থেকে ছড়াচ্ছে বলে খবর, তাই এই নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয় ৷ কারণ, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা কারোরই ভালো নয় ৷
এর মধ্যে সোমবার জানা যায়, ভারতে একাধিক শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৷ তার মধ্যেও কলকাতায় এক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বলে খবর মেলে ৷ এখন হইচই হচ্ছে বলেই বিষয়টি সামনে এসেছে ৷ না হলে এই ভাইরাসে আগেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন ৷ তাই এই নিয়ে যে বাড়তি আতঙ্কের প্রয়োজন নেই, তা চিকিৎসকদের কথাতেই স্পষ্ট ৷ ড. সহেলী দাশগুপ্তর কথায়, গত ছ‘মাসের মধ্য়ে এই শিশুটিই প্রথম যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ৷
এই নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন ড. সুবর্ণ গোস্বামী ৷ পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পদে কর্মরত ড. গোস্বামী বলেন, ‘‘এটা নিয়ে মাথাব্যথার কারণ নেই । বহু পুরনো ভাইরাস । ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা এখনই বন্ধ করার কিছু নেই । চিনের বিষয় আলাদা । ওখানে করোনা হওয়ার পর থেকেই সমস্ত ভাইরাসের উপর নজরদারি করে । সর্দি-কাশি-জ্বর, এই ভাইরাসের মূল লক্ষণ । নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই । নতুন করে টেস্ট করার কিছু নেই । শ্বাসনালীর সমস্যা শীতে বৃদ্ধি পায় । তাই করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের যে অভ্যাসগুলো ছিল, সেইগুলো ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন ।"
শিশুদের মধ্যে এই রোগী আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই জানাচ্ছেন ড. প্রভাসপ্রসূন গিরি ৷ এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "প্রতিবছর আমরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের পাই । খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট দেখা যায় ।’’ তা বলে এই ভাইরাসকে একেবারে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু আমাদের দেখতে হবে এতদিন আমরা যে কেস করে এসেছি, তার সঙ্গে বর্তমানে যে ভাইরাস হচ্ছে তাদের মধ্যে কোনও জেনেটিক মিউটেশন হচ্ছে কি না । যদি দেখা যায় আগের তুলনায় বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে, তার সঙ্গে হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে, তখনই আমাদের বিষয়টি চিন্তার হবে ।’’