কলকাতা, 30 জানুয়ারি: মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত মামলাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ঝগড়ার ঘটনায় এজলাসে দুঃখপ্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম । মঙ্গলবার প্রথমার্ধের শুনানি শেষে এক নম্বর আদালত কক্ষ ত্যাগ করার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের অন্যতম বড় হাইকোর্টে এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত । তিনি কোনও বিচারপতির নাম উল্লেখ না করেই বলেন, দেশের অন্যতম বিচারালয়ে এই ধরনের ঘটনার দীর্ঘ প্রভাব পড়ে ।
প্রধান বিচারপতি আজ বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার । আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ঘটনায় লজ্জিত এবং দুঃখিত ।"
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তিতে ভুয়ো শংসাপত্র বানানোর অভিযোগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চে সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করলে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দেন । যদিও সেই নির্দেশের লিখিত প্রমাণ না থাকায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে সিবিআইয়ের হাতে সমস্ত নথি তুলে দিতে নির্দেশ দেন এবং সিবিআইকে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে নির্দেশ দেন । এ দিকে, পরদিন সকালে সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআর খারিজ করতে নির্দেশ দেয় বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ ।
দুই বিচারপতির এই রেষারেষি শেষ পর্যন্ত এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, বিচারপতি গগঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে বসেই অভিযোগ তোলেন যে, বিচারপতি সৌমেন সেন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করছেন ৷ প্রমাণ হিসাবে শীতকালীন ছুটির আগে বিচারপতি অমৃতা সিনহা ও বিচারপতি সৌমেন সেনের পারস্পরিক কথোপকথনও প্রকাশ্যে আনেন তিনি ।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বিচারপতি সৌমেন সেন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে নিজের চেম্বারে ডেকে বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে ৷ তাঁকে বিরক্ত করা চলবে না । পাশাপাশি বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে থাকা দুটি প্রাথমিক মামলা খারিজ করতে হবে এবং শুনানির সময় লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ রাখতে হবে । এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয় কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে । বাধ্য হয়ে সেদিনই রাতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত মামলা হিসাবে বিবেচনা করে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে । বর্তমানে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে ।
আরও পড়ুন:
- কলকাতা হাইকোর্টের 2 বিচারপতির সংঘাত, মেডিক্যাল নিয়োগ মামলা স্থানান্তরিত সুপ্রিম কোর্টে
- কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাত মামলা, বিচারপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের
- প্রায় 12 হাজার প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারবে রাজ্য, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার সুপ্রিম কোর্টের