দাসপুর, 4 অগস্ট: এক হাতে জুতো জোড়া, অন্য হাতে মিড-ডে মিলের সবজির ব্যাগ ৷ কাদামাটির রাস্তায় একটু ব্যালেন্স হারালে আর রক্ষা নেই ৷ কম করে প্রায় দু’কিলোমিটার বেহাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে রোজ পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা স্কুলে আসেন ৷ একই অবস্থা গ্রামবাসীদেরও ৷ জুতো হাতে নিয়ে গ্রামের বাইরে বের হতে হয় ৷ এমনই অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ব্লকের নিজ নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীপুর গ্রামের ৷
কাদা রাস্তায় ঝুঁকির যাতায়াত (ইটিভি ভারত) এই গ্রামে ঢোকার রাস্তার হাল দেখলে, যে কেউ আঁতকে উঠতে বাধ্য ৷ এমনই দাবি চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দাদের ৷ গ্রামে প্রবেশের দু’টি রাস্তা রয়েছে ৷ অভিযোগ গত 10 বছর ধরে দু’টি রাস্তাই বেহাল ৷ বর্ষায় কাদায় ভরতি ৷ পা-পিছলে গেলে কাদা, জল মেখে উঠতে হবে ৷ আর শীত ও গ্রীষ্মে রাস্তা শুকনো থাকলেও, খানাখন্দে ভরা ৷
প্রতিবার ভোটের সময় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই রাস্তা মেরামতির প্রতিশ্রুতি দেন ৷ কিন্তু, ভোট ফুরালে আর কারও দেখা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ৷ বছরের পর বছর ধরে এই বেহাল রাস্তা দিয়ে যাতায়াত দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে গ্রামবাসীদের জন্য ৷ ফলে, রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷ এমনকি আশেপাশের গ্রামের মানুষও ৷ কারণ, তাদের সন্তানরা ওই কাদা রাস্তা দিয়েই চণ্ডীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় ৷ আর বর্ষাকালে কাদা মাটি লেগে জামাকাপড় তো নষ্ট হয়ই ৷ তার জেরে পড়াশোনার ক্ষতি হয় মাঝেমধ্যেই ৷
গ্রামবাসীদের অভিযোগ এই বেহাল কাদা-মাটির রাস্তায় কোনও গাড়ি ঢুকতে চায় না ৷ যদি কাদায় চাকা বসে যায়, সেই ভয়ে ৷ এমনকি যাদের বাইক আছে, তারা কাদার জন্য গ্রামের বাইরে বাইক রাখেন ৷ কাদা রাস্তায় বাইক নিয়ে দুর্ঘটনাও অতীতে ঘটেছে বলে অভিযোগ ৷
সবচেয়ে বেশি সমস্যা গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে ৷ বর্ষার সময় কাঁধে ঝুড়ির মধ্যে ঝুলিয়ে বা কোলে করে 2 কিলোমিটার পথ হেঁটে গ্রামের বাইরে নিয়ে যেতে হয় রোগীদের ৷ এখানেও কাদায় পড়ে দুর্ঘটনার প্রবল সম্ভাবনা থাকে ৷ গ্রামবাসী এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বহুবার রাস্তা সারাইয়ের আবেদন করা হয়েছে ৷ কিন্তু, প্রশাসনের তরফে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ কোনও জবাব মেলেনি বলে অভিযোগ ৷
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের অভিযোগ, "আমরা নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি ৷ বাচ্চাদের স্কুল পাঠাতে গিয়ে জামা-কাপড় কাদা করে রোজ বাড়ি ফেরে ৷ এর জন্য এক জোড়া অতিরিক্ত জামা-কাপড় ব্যাগে দিয়ে পাঠাতে হয় ৷ বহুবার এই নিয়ে আবেদন করা হয়েছে ৷ কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি ৷ ভোটের সময় ওরা আসে, প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ কিন্তু, ভোট ফুরিয়ে গেলে আর দেখা পাওয়া যায় না নেতা-নেত্রীদের ৷"
চণ্ডীপুর স্কুলের শিক্ষক সুশান্ত জানা বলেন, "স্কুলের মিড-ডে মিল আমাদের চালাতে হয় ৷ প্রায় 118 জন বাচ্চা স্কুলে পড়াশোনা করে ৷ তাই আমরাই প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা এক হাতে জুতো, আরেক হাতে ব্যাগ বয়ে নিয়ে আসি এই কাদা পেরিয়ে ৷ কিছুই করার নেই আমাদের ৷ বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোন সমাধান হয়নি ৷ বাচ্চাদের মিড-ডে মিল খুবই প্রয়োজনীয় ৷ এছাড়া চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড় গাড়ি ঢোকে না এখানে ৷ আমাদেরই প্রথমে ফাস্ট এড দিতে হয় ৷ কিন্তু, এভাবে কত দিন চলবে ?" আর নিজ নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছবি বাগরার দাবি, রাস্তা মেরামতির জন্য নাকি টেন্ডার ডাকা হবে ৷ নিয়ম অনুযায়ী কাজ হয়ে যাবে ৷ কিন্তু, কবে তা হবে, তার জবাব দিতে পারেননি পঞ্চায়েত প্রধান ৷