কলকাতা, 24 জুন:তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত স্কুলের পরিচালন সমিতির সঙ্গে বিরোধের জেরে স্কুল ঢোকাই বন্ধ হয়েছিল। বন্ধ হয়েছিল বেতনও। অবশেষে ছ'বছর পর শাপমুক্তি ঘটল কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ৷
শিক্ষকের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরীর বক্তব্য (ইটিভি ভারত) 2012 সালে বীরভূমের তেঁতুলবেড়িয়া জুনিয়র হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ মিয়া। 2016 সালে ওই স্কুলেরই টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান তিনি। সৌমেন্দ্রনাথের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন কমিটির সঙ্গে 2016 সাল থেকেই তাঁর মতানৈক্য শুরু হয়। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজারাম ঘোষ ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ছিলেন। কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে স্কুলের খেলার মাঠে অবৈধ নির্মাণ শুরু করেন। তাতে বাধা দেওয়ায় শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন।
শুধু তাই নয়, থানাতেও প্রভাব খাটান ওই তৃণমূল নেতা। পুলিশ ওই শিক্ষককে শাসানি দেয় স্কুলে ঢুকলে গ্রেফতার করতে তারা বাধ্য হবে, এমনই অভিযোগ সৌমেন্দ্রর ৷ তিনি জানান, দিনের পর দিন স্কুলে এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে শিক্ষা দফতরও কোনওরকম পদক্ষেপ করেনি। স্থানীয় পুলিশও তাঁকে স্কুলে ঢুকতে সাহায্য করেনি। ওই শিক্ষকের আরও অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে পদত্যাগ করার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।
শেষমেশ তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। যদিও সেই পদত্যাগ পত্রের ভিত্তিতে স্কুল কোনও সিদ্ধান্তের কথা না জানানোয় তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন ৷ শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন তাঁকে যেন স্কুলে যোগদান করানোর ব্যবস্থা করা হয়। ওই শিক্ষকের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী এদিন আদালতে জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়ে বেতন বন্ধ করে দিতে পারে না। আজ পর্যন্ত তাঁকে শোকজ, সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। একজন স্কুলের শিক্ষককে কিছু না-জানিয়ে তাঁর বেতন বন্ধ করা সম্পূর্ণ নিয়ম বিরুদ্ধ ৷ এমনকী স্কুল যেসব অভিযোগ এনেছিল তার কোনও প্রমাণ নেই ৷
তাছাড়া, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না-নিলে এবং তিন বছর অতিক্রান্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না ৷ রাজ্য সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বন্ধ করে 6 বছর বসে থাকতে পারে না ৷ রাজ্য সরকার এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা তাঁর কোনও সদুত্তর কোর্টকে দিতে পারেনি। বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না-নিয়ে বেতন বন্ধ করে বসে থাকতে পারেন কি? আইন তো অন্য কথা বলছে, আপনারা এভাবে বসে থাকতে পারেন না। বিচারপতি নির্দেশ দেন ওই শিক্ষককে অবিলম্বে স্কুলে যোগদান করাতে হবে ৷ 2017 সাল থেকে সব মিলিয়ে 6 বছরের সমস্ত পাওনা সুদ সমেত শিক্ষককে মিটিয়ে দিতে হবে।