কলকাতা, 2 মে: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবের ভূমিকায় স্তম্ভিত আদালত। একজন উচ্চতর সরকারি আধিকারিক যেভাবে প্রশাসনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিচারপতি ৷ বৃহস্পতিবার নিজের এজলাসে বসে মুখ্যসচিবকে নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন বিচারপতি ৷
রাজ্যের একাধিক সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বিচারপর্ব শুরু করা যাচ্ছে না রাজ্যের মুখ্য সচিবের অনুমোদনের না পাওয়ায়। আগের শুনানিতে তাঁকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু এদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, মুখ্যসচিব আরও 7 সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। তারপরই অবাক হয়ে যান বিচারপতি বাগচি। তিনি বলেন, "এটা কী হচ্ছে? এটা অত্যন্ত অন্যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হচ্ছে। আমরা বলিনি আপনি অনুমতি দিন। আমরা বলেছি, আপনি খালি আপনার দায়িত্ব পালন করুন।"
এদিন রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত আদালতের কাছ থেকে আরও কিছু সময়ের দাবি করেন ৷ এরপর বিচারপতি বাগচি বলেন, "আপনি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়ে রাজ্য সরকারের প্রশাসনের সব থেকে উচ্চতর আধিকারিকের এই অনুমোদনের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না? সাংবিধানিক গণতন্ত্র পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে চলে। যেভাবে মুখ্যসচিব অনুমোদন দিচ্ছেন না তাতে বিচারের কী হবে? এটা সংগঠিত ও সাংগঠনিক ষড়যন্ত্র। একজন মুখ্যসচিবের কলম উঠছে না? ভাবা যায়? কিন্ত আমরাও জানি ব্যাতিক্রমী ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতও ব্যাতিক্রমী আচরণ করবে। হাইকোর্ট রীতিমতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মুখ্যসচিবের সঙ্গে তাঁর অনুমোদনের জন্য! আমরা ভাবতেই পারছি না রাজ্য প্রশাসনের কী পরিমান প্রভাব কাজ করছে সরকারের সবথেকে উচ্চপদস্থ একজন আমলার উপর !"
অন্যদিকে, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিষয়ে রাজ্যপাল অনুমতি দিয়েছেন আগেই ৷ সেই বিষয়ে বিচারপতি বাগচি জানান, ওটাতে রাজ্য প্রশাসন প্রভাব খাটাতে পারেনি বলেই অনুমোদন আগেই হয়ে গিয়েছে। ফের আগামিকাল এই মামলার ফের শুনানির জন্য রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ। উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক সাহার মত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে চার্জ ফ্রেম করে বিচারপর্ব শুরু করা যাচ্ছে না ৷ কারণ হিসাবে উঠে আসে রাজ্যের মুখ্যসচিবের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না বলে। সেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের বক্তব্য একাধিক বার জানতে চেয়েছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। কিন্তু প্রত্যেকবার মুখ্যসচিবের তরফে নির্বাচনের অজুহাত দেওয়া হয়েছে ।