ওবিসির সার্টিফিকেট বাতিলে আইনজীবীদের বক্তব্য (নিজস্ব ছবি) কলকাতা, 22 মে: বাতিল প্রায় 5 লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট এমনই নির্দেশ দিয়েছে ৷ নির্দেশ অনুযায়ী 2010 সালের পর থেকে অর্থাৎ তৃণমূল জমানায় দেওয়া সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল ৷ তবে এতদিন এই শংসাপত্র ব্যবহার করে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না। এখন থেকে চাকরির ক্ষেত্রে 2010 সালের পর দেওয়া শংসাপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না ৷ হাইকোর্টের ভিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, 1993 সালের পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন আইন (West Bengal Commission for Backward Classes Act, 1993) অনুযায়ী নতুন করে ওবিসি তালিকা বানাতে হবে এবং সেই নতুন তালিকা বিধানসভায় অনুমোদন করাতে হবে ৷
2010-এর আগে যারা ওবিসি তালিকাভুক্ত ছিলেন তাঁরা থাকবেন ৷ তবে 2010-এর পরবর্তী সময়ে ওবিসি তালিকাভুক্তরা নাম বাদ যাবে । 2010-এর পরবর্তী সময়ে যারা ওবিসি কোটায় চাকরি পেয়েছেন বা পাওয়ার অবস্থায় আছেন তাদের কোটা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না । তাঁদের চাকরিতে কোনও প্রভাব পড়বে না ।
2012 সালের আইনের আওতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী ওবিসি তালিকাভুক্ত হয়ে চাকরি এবং রাজ্যে বিভিন্ন পদে সংরক্ষণের সুবিধে পেয়ে এসেছে ৷ আইনের এই ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল ৷ সেই মামলাগুলির শুনানিতে বুধবার আদালত এই নির্দেশ দেয় ৷ তবে আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ওবিসি তালিকাভুক্ত যে গোষ্ঠীগুলি এই সংরক্ষণের ফলে চাকরি করছে অথবা রাজ্য সরকারের কোনও পরীক্ষার পাশ করেছে, তাদের উপর এই নির্দেশের কোনও প্রভাব পড়বে না ৷
2012 সালের দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যাক্টের অধীনে ওবিসি তালিকায় থাকা একাধিক গোষ্ঠীর সংরক্ষণ বাতিল করেছে আদালত ৷ এই রায়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, 2010 সালের আগে 66টি গোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে রাজ্য সরকার একটি এগজিকিউটিভ অর্ডার দিয়েছিল ৷ সেই গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে কোনও চ্যালেঞ্জ করা হয়নি ৷ তাই সেই গোষ্ঠীগুলি এই নির্দেশের বাইরে ৷
2010 সালের 5 মার্চ থেকে 2012 সালের 11 মে পর্যন্ত সময়কালে রাজ্য একাধিক এগজিকিউটিভ অর্ডারে 42টি গোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকায় স্থান দিয়েছিল ৷ সেগুলি এদিনের নির্দেশে আদালত খারিজ করে দিয়েছে ৷ একটি রিপোর্টে ওই গোষ্ঠীগুলিকে অনগ্রসর শ্রেণির তালিকাভুক্ত করাটা বেআইনি বলে জানানো হয়েছে ৷ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত এই পদক্ষেপ করেছে ৷ বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, রাজ্য বিধানসভার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস কমিশন বা অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনকে দেওয়া পরামর্শ ও উপদেশ 1993 সালে প্রণীত ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যাক্টের ভিত্তিতে ৷
আদালত রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে বিধানসভায় একটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৷ সেখানে রাজ্য ওবিসির তালিকায় প্রয়োজনে নতুন সংযোজন করতে হবে ৷ শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি বিচার করে আগের তালিকা থেকে বেশ কিছু নাম বাদও দিতে হবে ৷
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ 2010-এর পর যেসব ওবিসি শংসাপত্র তৈরি হয়েছে তা 1993 আইনের বিরুদ্ধে ।
প্রসঙ্গত, 2010 সালে একটা অন্তর্বর্তী রিপোর্টের ভিত্তিতে বামফ্রন্ট সরকার অতি অনগ্রসর শ্রেণি সৃষ্টি করে যার নাম OBC (Other Backward Class)। কিন্তু 2011 সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর চূড়ান্ত রিপোর্ট ছাড়াই ওবিসি-র তালিকা তৈরি করে আইন প্রণয়ন করে যা পশ্চিমবঙ্গ কমিশন অফ ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস আইন, 1993-এর বিরোধী । এর ফলে প্রকৃত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় ।
এই মামলায় 2012-এর আইন খারিজ করার আবেদন জানান মামলাকারী অমলচন্দ্র দাস ৷ হাইকোর্টের কাছে তিনি আরও আবেদন করেছিলেন যাতে নতুন করে 1993 সালের আইন মেনে প্রকৃত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের চিহ্নিত করে নতুন করে OBC তালিকা তৈরি করা হয় । মামলাকারীর বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা প্রকৃত পিছিয়ে পড়া শ্রেণি তারা তৃণমূল সরকারের এই কাজের জন্য OBC লিস্টের অন্তর্ভুক্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷ তবে 2010 সালে অমলবাবু এই মামলাটি করলেও কোনও বিচারপতিই এই মামলা গ্রহণ করতে চাননি ৷ অবশেষে 14 বছর পর আজ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেন ও নির্দেশ দেন ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের ৷
আরও পড়ুন :
- মোদির ওবিসি সত্ত্বা নিয়ে রাহুলের তোপ, কী বলছে অনগ্রসর জাতির জাতীয় কমিশন
- মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর মন্ত্রিসভায় ওবিসিদের জন্য মেধাশ্রী প্রকল্পকে সিলমোহর