কলকাতা, 4 এপ্রিল: সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে এবং তার স্বপক্ষে যে অভিযোগ জমা পড়ছে তার একটিও যদি সত্যি হয় তাহলে তা লজ্জাজনক ৷ মন্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি সংক্রান্ত হাইকোর্টের স্বতঃস্ফূর্ত মামলার শুনানি ছিল হাইকোর্টে ৷ সেই শুনানি চলাকালীনই এমনই মন্তব্য প্রধান বিচারপতির ৷
শিবজ্ঞানম বলেন, "ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট অনুয়ায়ী এই রাজ্য মেয়েদের জন্য সব থেকে নিরাপদ বলা হয়েছে। কিন্তু সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যা ঘটনা ঘটেছে আইনজীবীরা হলফনামা দিয়ে তাঁদের উপর অত্যাচারের ঘটনার কথা আদালতকে জানিয়েছেন। এত অভিযোগের একটাও যদি সত্যি হয় তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ৷" শেখ শাহজাহানের তরফে আদালতে হাজির আইনজীবীর উদ্দেশ্যে মন্তব্য প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের।
শাহজাহানের আইনজীবী এদিন আরজি জানান, যাতে তার মক্কেলের বিরুদ্ধে ওঠা ভূরি ভূরি অভিযোগের উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তখনই শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ ছুড়ে দেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
এদিন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল প্রায় 600টি'রও বেশি অভিযোগ সামনে আনেন। একই সঙ্গে মহিলাদের উপর যে ভাবে নির্যাতন হয়েছে সেই ব্যাপারে খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করার আরজি জানান। রাজ্য লিগাল এড সার্ভিসকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করার আরজি আইনজীবীর। আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল মামলার শুনানির পর বলেন, "তিনি যে হলফনামা এদিন আদালতে দিয়েছেন সেখানে 700 জনের বেশি অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে 100টি'র বেশি মহিলাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বাকি জমি দখলের অভিযোগ। বিএলআর ছাড়া এইভাবে জমি দখল করা যায় না।"
অন্যদিকে এদিন ইডি'র আইনজীবী এসভি রাজু সন্দেশখালির ঘটনায় আরও এফআইআর এবং চার্জশিটের কপি ইডি'র হাতে তুলে দেওয়ার আরজি জানিয়েছেন। আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এই মামলার আদালত বান্ধব হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন ৷ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছে কিছু দুষ্কৃতি। সেই জমি রাজ্য কীভাবে ফেরত দেবে? রাজ্য কি জমি দখল করেছিল?এই বক্তব্যের পালটা রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত বলেন, "জনস্বার্থ মামলা, ব্যক্তিগত স্বার্থের মামলা বা রাজনৈতিক স্বার্থের মামলা হয়ে যাচ্ছে না তো! এখানে সেটাই বেশি হচ্ছে।"
প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে উদ্দেশ্যে করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযোগের কতগুলো শেষ পর্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে তার হিসাব নিয়ে দেখুক আদালত।" সন্দেশখালির মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে মুখ খুলতে পারেননি বলে যে বড় মাত্রায় অভিযোগ করা হচ্ছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এরপর তিনি জানান, যাঁরা আদালতে জনস্বার্থ মামলা করছেন তাঁরা কি সত্যিই জনস্বার্থে মামলা করছেন? এই দিকটা খতিয়ে দেখার আরজি জানাচ্ছি। প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল যে মামলা করেছেন তিনি কি কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে নাকি একজন সাধারণ ভারতবাসী হিসাবে করেছেন, সেটা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।