কলকাতা, 14 ডিসেম্বর: বাসের রেষারেষির জেরে পথ দুর্ঘটনা এড়াতে সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতর একটি 6 পাতার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি জারি করেছে ৷ কিন্তু এক সপ্তাহ কাটতে না-কাটতেই আবারও পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু কলকাতায় ৷ তাহলে কি নির্দেশিকা জারি সার হল ?
বৃস্পতিবার সন্ধ্যা 7.18 মিনিট নাগাদ হাওড়া থেকে মধ্যমগ্রামগামী একটি বেসরকারি বাস মহাত্মা গান্ধি ও সিআর অ্য়াভিনিউ ক্রসিংয়ে এক পথচারীকে ধাক্কা মারে। সেই ব্যক্তিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। 54 বছর বয়সি এই ব্যক্তির নাম শম্ভুনাথ সাউ। জোড়াসাঁকো থানা বাসটিকে আটক করলেও বাসের চালক পলাতক।
বাসের রেষারেষির জেরে পথ দুর্ঘটনার উপর রাস টানতেই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা আদর্শ আচরণবিধি জারি করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। বেসরকারি বাসের উপর নজরদারি চালাতে বাসগুলিকে যেমন অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করে সেগুলিকে ট্র্যাক করা হচ্ছে, তেমনই নিয়মিত ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতনতামূলক শিবির চালানো থেকে বাসে কমপ্লেইন বাক্স রাখা হচ্ছে । লিখিতভাবে নির্দেশিকা জারি হলেও ফের কলকাতার বুকে এই পথ দুর্ঘটনায় উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। অন্যদিকে, ফুটপাতের অভাব পথচারীদের হুড়োহুড়িতে দুটি বাসের ফাঁক দিয়েই রাস্তা পারাপার হওয়ার চেষ্টার মতো গলদ দেখিয়েছে বাস মালিক পক্ষ ৷ পাল্টা পরিবহণ বিভাগ চালকদের কমিশনের লোভে বেপরোয়াভাবে রেষারেষি করে বাস চালাবার যুক্তিও খাড়া করছে।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দোপাধ্যায় বলছেন, "এমজি রোডের মতো এমন একটি ঘিঞ্জি রাস্তায় প্রতিদিন প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার দু-পাশে কয়েক হাজার দোকান। এই রাস্তা দিয়ে অটো, রিকসাও চলচল করে। এই রাস্তায় অটোর দৌরাত্ম্যও কিছু কম নয়। যেখানে সেখানে অটো থামিয়ে যাত্রী নামানো ওঠানো করা হচ্ছে। যাত্রী তোলার জন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষি করে। অন্যদিকে ওই রাস্তায় ফুটপাতে দোকানে দোকান ভরা। তাই পথচারীরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হয়। তাই কলকাতার রাস্তার সার্বিক পরিকাঠামো উন্নতির প্রয়োজন।"
যদিও তপনবাবু এক কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে চালকদেরও কিছুটা 'গ্রুমিং'-এর প্রয়োজন রয়েছে। যেমন, মাথা ঠান্ডা রেখে বাস চালানো। কোনও গাড়ির চালক কিছু বলে উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও উত্তেজিত না হওয়া। বাস চালানোর সময় কোনও ধরনের নেশা না করা। ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু স্পষ্ট জানিয়েছেন, এমজি রোডের মতো একটি জনবহুল রাস্তায় সন্ধ্যায় 10 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগের বেশি গতিবেগে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে নাগরিকদের বোধ হয় আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট জায়গা কোথাও নেই।
পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাসিশ চক্রবর্তীর বলেছেন, "অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করা হবে বাসগুলিকে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে চালক এবং তিনি যেই বাসটি চালাচ্ছেন সেটির উপরে নজরদারি চালানো হবে। অ্যাপটি যেহেতু চালকের মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাই সেই বাসটির বা সবকটি বাসের প্রতিমুহূর্তের গতিবিধি দফতরের হাতের মুঠোয় থাকবে। তবে প্রতিটি মোবাইলের সঙ্গে এই অ্যাপটিকে যুক্ত করতে গেলে তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।"
তিনি আরও বলেন, "মালিকদের চালক ও কন্ডাক্টরদের কমিশন ব্যবস্থার পরিবর্তে মাসিক বেতন ও ইনসেনটিভ দেওয়ার কথা ভাবতে বলা হয়েছে ৷ এর ফলে রেষারেষি হয়তো অনেকটাই কমবে। তবে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে জানাতে চায় পরিবহণ বিভাগ যে, যদি বাসের গাফিলতির জন্য পথ দুর্ঘটনা হয় সেই ক্ষেত্রে চালকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে দফতর।"