নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিতর্কে ঘি ঢাললেন পরাকর প্রভাক কলকাতা, 29 মার্চ: নির্বাচনী বন্ড বিতর্কের আগুনে খানিকটা যেন ঘি ঢাললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের স্বামী পরকলা প্রভাকর ৷ তিনি অর্থনীতিবিদ ৷ তিনি এই বন্ডকে দেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি বলেছেন ৷ ইতিমধ্যে এই বন্ডকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে ৷ বন্ডে কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা পেয়েছে এবং কে এই টাকা দিয়েছে, সেই সব তথ্যই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করাও হয়েছে ৷
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এ নিয়ে জানিয়েছে, "পরকলা প্রভাকর শুধু নির্মলা সীতারামনের স্বামী নন, তিনি দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মধ্যে একজন ৷ ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে তিনি যা বলছেন, আমরাও তাই বলছি । যাঁরা বিজেপির বড় বড় প্রকল্পের বরাত পাচ্ছেন, তাঁরা অনেক বেশি বেশি করে টাকা এই সব জায়গাগুলিতে দিয়েছেন ৷ এমনকী যাঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই সক্রিয়, পরে দেখা যাচ্ছে তাঁরাই বিজেপিকে ফান্ডিং দিচ্ছে ৷"
এদিন এই নিয়ে অর্থনীতির শিক্ষক শান্তনু বসু ইটিভি ভারতকে বলেন, "নির্মলা সীতারামন নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন না ৷ এটা সকলে জেনেই গিয়েছেন ৷ আসলে এই মুহূর্তে সবাই হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে ৷ নির্বাচন কমিশনকে কোনও অর্থ দেওয়া আর কোনও নির্দিষ্ট পার্টিকে অর্থ দেওয়ার মধ্যে তফাৎ আছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনটা কোনও পলিটিকাল পার্টি বা কর্পোরেটের নয় ৷ নির্বাচনটা নাগরিকদের জন্য ৷ কর্পোরেটের একটি ভোটও নেই, ভোট আছে আপনার আমার ৷ সেক্ষেত্রে নির্বাচনী বন্ড সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দলকে জ্বালানি সরবরাহের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৷ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কমিশনকে দেওয়া হচ্ছে না ৷ এই টাকাটা যদি নির্বাচন কমিশনের ঘরে আসত, তাহলে অনেকটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা যেত ৷ এই কারণেই আমি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলব ৷ সংবিধান বলছে, নাগরিকের উপরে কোনও কিছু হতে পারে না ৷ কাজেই ইলেক্টোরাল বন্ড যে নাগরিক স্বার্থে দেওয়া হচ্ছে, এমন নয় ৷ তাই এটা সংবিধান বিরোধী ৷"
এদিকে এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী ৷ এদিন তিনি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে বলেন, "অতীতে যেভাবে কাঁচা টাকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হত, তার থেকে নির্বাচনী বন্ডের ব্যবস্থা অনেক ভালো ৷"
বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা আরও বলেন, "নির্বাচনী বন্ড যখন ছিল না, তখনও রাজনৈতিক দলগুলিকে কর্পোরেটগুলি বেআইনিভাবে টাকা দিত ৷ তাহলে আপনারা কি বলতে চাইছেন নির্বাচনী বন্ডের থেকে কাঁচা টাকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিয়ে দেওয়া ভালো ছিল ? এখন সেদিক থেকে দেখতে গেলে বিষয়টি একটু ভালো হয়েছে ৷ কিন্তু এর মাধ্যমে কি আমরা স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে গিয়েছি ? না ৷ কতগুলি নিয়মে স্বচ্ছতা আনলেই ভালো হবে ৷ আমি যদি একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হয়ে কাউকে 100 কোটি টাকা দিয়ে দিই, প্রশ্ন উঠতে বাধ্য এই টাকা কোথা থেকে এলো ? অতএব, স্বচ্ছতা প্রয়োজন ৷ কিন্তু এটাও ঠিক আগে যে ব্যবস্থা ছিল তার থেকে এটা ভালো ৷ আমাদের গণতান্ত্রিক সত্তা অনেক ব্যাপক, অনেক বিরাট ৷ পরিবর্তনই তো আসল ৷"
আরও পড়ুন:
- নির্বাচনী বন্ড: বিজেপি পেয়েছে প্রায় 7 হাজার কোটি, দলগুলির দেওয়া খামবন্দি তথ্যও প্রকাশ কমিশনের
- লোকসভা ভোটের আগে বড় ধাক্কা, নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক; রায় সুপ্রিম কোর্টের
- পাকিস্তান থেকে টাকা এসেছে, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে মোদি-মমতাকে আক্রমণ সেলিমের