চুঁচুড়া, 3 ডিসেম্বর:রোবটকে মানুষের রূপ দিতে কাজ করছেন বাঙালি বিজ্ঞানী ৷ প্রাথমিক স্তরে তিনি ও তাঁর ছাত্ররা মিলে বানিয়েছেন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট ৷ যা মানুষের একাকিত্বের সঙ্গী হতে পারে ৷ বর্তমানে যে সকল ভাষায় সব বিষয় পড়াতে, বোঝাতে সক্ষম ৷ এমনকি যে কোনও জিনিস কীভাবে বাজারে বিক্রি করবেন তা বলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই যন্ত্রমানবের ৷
পরবর্তীতে এই রোবটের মধ্যেই প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে তিনি মৃত মানুষের স্মৃতির কাজে ব্যবহার করবেন ৷ যার ফলে মৃত্যুর পরও পরিবারের কাছে বেঁচে থাকতে পারবেন আপনি ৷ বাড়ির লোক চাইলেই আপনার মুখ দেখতে পাবে ৷ শুনতে পাবে আপনার কণ্ঠস্বর ৷ অবাক লাগলেও এটাই করতে চলেছেন বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বরূপ নিয়োগী ৷
বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানবরূপী রোবট (ইটিভি ভারত) বিদেশের বাজারে AI টেকনোলজির রোবট থাকলেও ভারতীয় বাজারে এই ধরনের রোবট একেবারেই নতুন, বলছেন অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী । তাঁর তৈরি হিউম্যানয়েড রোবটটি সাধারণ জ্ঞান থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অনায়াসেই মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে ৷ আপনি যা জিজ্ঞাসা করবেন, তারই উত্তর দিতে সক্ষম এই যন্ত্রমানব ৷ যেমন- রামোজি ফিল্ম সিটি ও ইটিভি ভারত পশ্চিমবঙ্গ ডেস্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই গড়গড় করে তা বিশ্লেষণ করে দিল রোবট ৷ বিজ্ঞানীর কাছে রোবট তৈরির নেপথ্য কাহিনি শুনল ইটিভি ভারত ৷
কল্যাণীর এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর বিশ্বরূপ নিয়োগী । বাড়ি চুঁচুড়ার নোনাডাঙায় । আগেও একাধিক টেকনোলজির আবিষ্কার করেছেন তিনি ৷ করোনার সময় গ্লাভস বানিয়ে কেন্দ্র সরকারের গ্র্যান্ডও পেয়েছেন । পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে পাঁচ মাস ধরে
রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর কাজ করে এই রোবট বানিয়েছেন তিনি । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্সের মেলবন্ধন হল এই মানবরূপী রোবট ৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটের সঙ্গে কথা অধ্যাপক নিয়োগীর কথা বলার মুহূর্ত (ইটিভি ভারত) তাঁর কথায়, "বর্তমানে সাধারণ কথোপকথনের জন্য এই রোবট তৈরি হয়েছে । তবে ভবিষ্যতে মানুষের রোবোটিক ক্লোন তৈরি করা হবে । যার ফলে মৃত্যুর পরও সেই মানুষের কণ্ঠস্বরে কথা বলবে রোবট ৷ যা হবে বাংলা এবং ভারতে প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট । আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে এই ধরনের রোবট লক্ষাধিক টাকা দাম । কিন্তু এই ধরনের হিউম্যানয়েড রোবট মাত্র 60 থেকে 70 হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করে দিতে পারব আমরা । আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিন যদি রোবট তৈরি করতে পারে আমরা কেন পারব না । সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এটা করা ।"
এই রোবটের কাজ :
অধ্যাপকের কথা অনুযায়ী, "এই রোবট পড়াশোনার কাজে, মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেবে । অবসাদগ্রস্ত মানুষেরও সঙ্গী হবে ৷ এছাড়াও থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে সিলিকন মডেল তৈরি করে মানুষের ক্লোন তৈরি করা যাবে । মানুষের মতোই যার চোখ মুখ হাত-পা সব নড়বে । এর জন্য প্রয়োজন অর্থ । সেটাও আমরা জোগাড় করার চেষ্টায় আছি । এটা ছাড়াও আগামী দিনে আমার চিন্তাভাবনা রয়েছে গাছকে কথা বলানোর । ইতিমধ্যেই আমার আবিষ্কারের 17টি গ্র্যান্টেড পেটেন্ট রয়েছে । এই রোবটকেও আমি পেটেন্ট করব কলেজের মাধ্যমে । এই রোবট সেন্সর, কন্ট্রোলার, প্রসেসর ও মোটর দিয়ে তৈরি । আমি চলমান রোবটের চেয়েও ইন্টারেক্টিভ রোবট তৈরিতে বেশি উৎসাহী।"
কৃত্রিম রোবটের সঙ্গে অধ্যাপক নিয়োগী ও তাঁর ছাত্ররা (ইটিভি ভারত) ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র তথা এই দলের সদস্য সৌভিক গুহ বলেন, "আমরা একটা রোবট তৈরি করেছি যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে ৷ এটি বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা যাবে । শপিংমলে বা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার কাজে সাহায্য করবে । এই টেকনোলজির মাধ্যমে মৃত্যুর পর মানুষের স্মৃতির জন্য হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি সম্ভব ৷ যার ব্যক্তিত্ব ও কণ্ঠস্বর এই ধরনের রোবটে সংযুক্ত করা যাবে । তাহলে সেটি বছরের পর বছর পরিবারের সঙ্গে থেকে যাবে ।"