কলকাতা, 23 অক্টোবর: নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে সরব পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। আজ সল্টলেকে রাজ্যের সেচ দফতরের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভের পাশাপাশি 9 দফা দাবির স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে। সেই স্মারকলিপির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধিকেও।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের অভিযোগ, "পশ্চিমবঙ্গে নদীতীর ভাঙন ক্রমবর্ধমান। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির হাজার হাজার বাসিন্দার জীবন ও জীবিকার গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রক উভয়ের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এই পরিবেশগত এবং মানবিক সংকট গত কয়েক বছরে আরও চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে, গঙ্গা-পদ্মা, ভাগীরথী-হুগলি এবং দামোদর নদীর তীরে নদী ভাঙনের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। আইআইটি খড়গপুর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি) এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির পরামর্শ মেনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।"
কংগ্রেসের অভিযোগ, আইআইটি খড়গপুরের নেতৃত্বে গবেষণায় বলা হয়েছে, নদী থেকে অত্যধিক পলি তোলা, উজানের প্রবাহ বদল ঘটেছে। জলের এই অনিয়মিত প্রবাহ, বিশেষ করে বর্ষায় নদীর তলদেশের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে ৷ এটি নদীর ক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে তোলে। নদী বাঁধের দুর্বল পরিকাঠামোর হাইড্রোলজিক্যাল চাপ সহ্য করার ক্ষমতা নেই। পুরানো কাঠামোগুলি ভারী বৃষ্টি এবং বন্যার সময় বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু নদী তীরবর্তী এলাকায় অত্যাধিক গাছ কাটার ফলে এই ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। জঙ্গল কেটে অবৈধ নির্মাণ এবং নদীর তীরে নগর সম্প্রসারণ পরিস্থিতির জেরে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। তাই, সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।"
কংগ্রেসের দাবিগুলি একনজরে:
আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নদীবাঁধ শক্তিশালীকরণ, বা নতুন বাঁধ স্থাপন করতে হবে। আধুনিক জিও-টেক্সটাইল এবং বোল্ডার-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
নদী চ্যানেলগুলির টেকসই 'ড্রেজিং' নীতি গ্রহণ করা উচিত। নদীগুলির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি থেকে অতিরিক্ত পলি অপসারণের বিরুদ্ধে সঠিক ও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
নদীর তীরে জৈব-প্রকৌশল এবং বনায়নের মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। ম্যানগ্রোভ, ভেটিভার ঘাস এবং বাঁশের মতো গভীর শিকড় যুক্ত উদ্ভিদ রোপন করতে হবে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ISRO) উপগ্রহ চিত্র, ড্রোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে 'রিয়েল-টাইম' নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নদী ভাঙ্গনের ফলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন ছাড়াই হাজার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাই, বর্তমান বাজার মূল্যের ভিত্তিতে জমি ও সম্পত্তির ক্ষতির জন্য অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ।
জীবিকার সহায়তা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির জন্য বিকল্প জমির ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা-সহ পুনর্বাসন স্থাপন করতে হবে।
নদী তীরের ক্ষয় নিয়ে একটি উচ্চ-স্তরের টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। যেখানে আইআইটি, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন এবং পরিবেশবিদদের মতো প্রধান প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
অবৈধ বালি খনন বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোগিতায় গঙ্গার ধারে সমস্ত অবৈধ বালি উত্তোলন অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাই।
ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের যোগসাজশে যে সমস্ত অননুমোদিত ইটভাটা গড়ে উঠেছে তা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
অবিলম্বে নদীর তীরে সমস্ত নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করা এবং আর কোনও নির্মাণকাজ করতে দেওয়া হবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে।