বারাসত, 28 জানুয়ারি: কোভিড, এইচএমপিভি-র পর নয়া আতঙ্কের নাম গুলেইন বারি সিনড্রোম ! সম্ভবত এই রোগে আক্রান্ত হয়েই এবার মৃত্যু ঘটেছে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ৷ এনআরএস হাসপাতালে ইস্যু করা মৃত্যু শংসাপত্রে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, 'সাসপেক্টেড কেস অফ গুলেইন বারি সিনড্রোম' ৷
তবে, এই মৃত্যুর ঘটনার পরেও অযথা আতঙ্কিত বা চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেই দাবি করলেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম ৷ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনের তরফে তিনি একটি বিবৃতি জারি করেন ৷ সেখানে নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, "গুলেইন বারি সিনড্রোম নতুন কোনও ধরনের বা বিরল রোগ নয় ৷ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও দেশে বা রাজ্যে নতুন কিছু নয় ৷"
তবে, সবাইকে আশ্বস্ত করে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেছেন, "মূলত অ্যাকিউট ফ্ল্যাসিড প্যারালাইসিসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে ৷ আক্রান্ত হন সাধারণত 15 বছরের কম বয়সী বাচ্চা ৷ সময়মতো চিকিৎসা না-হলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৷ তাই সর্বদা নজর রাখছে পোলিও বিভাগের বিশেষজ্ঞরা ৷" তবে, স্বাস্থ্য সচিবের দাবি অনুযায়ী, "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দফতর এনপিএসপি-র তরফে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বর মাস শেষের পর রাজ্যে এই রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি ৷"
স্বাস্থ্য সচিব দাবি করলেও, রাজ্যে গুলেইন বারি সিনড্রোম আক্রান্তের হদিশ মিলেছে ৷ পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে ভর্তি রয়েছে দুই শিশু ৷ তারা এই মুহূর্তে ভেন্টিলেশনে রয়েছে ৷ তাদের শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক ৷ আর এরই মধ্যে এনআরএসে গুলেইন বারি সিনড্রোমে এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে ৷
গত 22 জানুয়ারি বিকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে গলা ব্যাথার কথা জানিয়েছিল সে ৷ তারপর 23 জানুয়ারি সকালে সে বাবা-মাকে জানায়, আগের রাতে জ্বর আসায় ওষুধ খেয়েছিল ৷ কিন্তু, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে হাতে-পায়ে জোর পাচ্ছিল না দ্বাদশের ওই পড়ুয়া ৷ একথা শুনে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ চিকিৎসকের সামনেই চেয়ার থেকে পড়ে যায় সে ৷ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে ৷
কিন্তু, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু হলেও, পরে সেখান থেকে কলকাতার নীলরতন সরকার বা এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় দ্বাদশের পড়ুয়াকে ৷ এরপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই শরীরে জোর হারিয়েছে সে ৷ রাতে খাবার খাওয়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়েছিল ৷ গত শুক্রবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, সেদিন দুপুরেই সিসিইউ-তে দেওয়া হয় তাকে ৷ কিন্তু, সব চেষ্টা ব্যার্থ করে সোমবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তার ৷
মৃত কিশোরের মা অবশ্য এনআরএস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন, "হাসপাতালের তরফে একটা ইনজেকশন দিতে হবে জানিয়েছিল ৷ কিন্তু, সেটা হাসপাতালে ছিল না ৷ যত টাকা লাগুক আমরা বাইরে থেকে এনে দেব বলেছিলাম ৷ কিন্তু, অনুমতি দেয়নি ৷ ডায়ালিসিস করতে হবে জানিয়েও, তা করেনি ৷ শেষে প্লাজমা থেরাপি করার পরে জানিয়েছিল ছেলে বিপদমুক্ত ৷ তারপর গতকাল হাসপাতালের তরফে আমাদের জানায় জিবিএসে (গুলেইন বারি সিনড্রোম) আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ছেলের ৷ কিন্তু, কোনও রিপোর্ট হাতে দেয়নি ৷ শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে ৷ তাতে জিবিএসের কথা উল্লেখও আছে ৷"
উল্লেখ্য, গুলেইন বারি সিনড্রোম মূলত স্নায়ুর সমস্যা ৷ এই রোগের উপসর্গ হল হাঁটাচলায় সমস্যা, ধীরে ধীরে শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ অকেজো হতে শুরু করবে ৷ সময়ের সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে ৷ শ্বাস-প্রঃশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া ৷ অনেক সময় মুখ বেঁকে যাওয়া ও কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দেয় ৷ রক্তচাপের পরিমাণও বেড়ে যায় ৷ বেশ কিছু সময় প্রস্রাবের ক্ষেত্রেও জ্বালা দেখা যায় ৷ তবে, সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ থেকে সেরে ওঠাও সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের ৷