প্রয়াগরাজ, 29 জানুয়ারি: মহাকুম্ভের সঙ্গমে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু-মিছিল ৷ প্রাথমিকভাবে সংবাদসংস্থা এফপি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনে করা হয়েছিল কমবেশি 17 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ তবে বুধবার সন্ধ্যায় মহাকুম্ভের দায়িত্বে থাকা ডিআইজি বৈভব কৃষ্ণ জানালেন, মেলায় মৃত্যু হয়েছে 30 জনের। আহত হয়েছেন 90 জন। শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের এই শীর্ষকর্তা জানান, 30 জনের মধ্যে 5 জনের দেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এরপর রাতের দিকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। প্রথমত, তিনি জাানন, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তার জন্য 3 সদস্যের একটি জুডিশিয়াল কমিশন তৈরি হয়েছে। পাশপাশি নিহতদের পরিবার পিছু 25 লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি ৷
বুধবার ভোর থেকেই পুণ্যস্নানে ভিড় জমিয়েছেন কোটি কোটি পুণ্যার্থী ৷ মৌনী অমাবস্যায় তিল ধারণের জায়গা নেই সঙ্গম চত্বরে ৷ স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, প্রবল জনজোয়ারের চাপে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ 50 জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগীকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ খোঁজ নেন পরিস্থিতির ৷ চলছে উদ্ধারকাজ ৷
আহতদের স্বরূপরাণী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । বুধবার রাত 1.30 মিনিট নাগাদ সঙ্গম উপকূলে এই ঘটনা ঘটে । ঠেলাঠেলিতে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন । এরপর লোকজন তাদের পিষে দিয়ে এগিয়ে যায় । এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় । এই ঘটনায় নিহতদের সঠিক পরিসংখ্যান এখনও জানা যায়নি । আহতদের সঙ্গম ব্যাংক থেকে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ।
কর্ণাটক থেকে আগত সরোজিনী নামে এক মহিলা পুণ্যার্থী হাসপাতালের বাইরে কাঁদতে কাঁদতে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন,"আমরা দুটি বাসে 60 জনের একটি দল এসেছি ৷ আমরা দলে নয়জন ছিলাম । হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা লেগেছিল এবং আমরা আটকে পড়েছিলাম । আমরা অনেকেই পড়ে গিয়েছিলাম এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল ৷ পালানোর কোনও সুযোগ ছিল না, চারদিক থেকে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছিল ৷"
পদদলিত হওয়ার পর অনেকে ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা । ভিড়ের মধ্যে মানুষ নিজেদের প্রিয়জনকে খুঁজছিলেন । যাদের প্রিয়জন মারা গিয়েছে তারা চিৎকার করতে থাকে ।
এই বিষয়ে মহাকুম্ভ মেলা স্পেশাল ডিউটি অফিসার আকাঙ্খা রানা বলেন, "সঙ্গমে ব্যারিকেড ভেঙে কিছু লোক আহত হয়েছে ৷ তবে আহতদের সঠিক হিসাব এখনও আমাদের কাছে নেই ৷ মেলা চত্বরে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তাদের । কয়েকজন প্রশাসনিক কর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আহতদের পরিবারের লোকজনও সেখানে পৌঁছেছেন ।"
মৌনী অমাবস্যায় অমৃতস্নান হল মহাকুম্ভের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আচার ৷ সেই উপলক্ষে বুধবার সঙ্গমে 10 কোটি পুণ্যার্থীর ভিড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ 144 বছর পর 'ত্রিবেণী যোগ' নামে একটি বিরল যোগ এই দিনটির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে ৷ তাতেই জনবিস্ফোরণ ৷
বুধবার ভোররাত নাগাদ মহাকুম্ভে পুণ্যস্নানের জন্য নদীর তীরে সমস্ত ঘাট বরাবর প্রায় 12 কিলোমিটার দীর্ঘ জনসমুদ্র তৈরি হয় ৷ সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাতেই এই বিপত্তি ৷
মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে স্নানে এই প্রবল ভিড়ের কারণ :
ত্রিবেণী সঙ্গম অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনা ও সরস্বতী এই তিন নদী যেখানে মিশেছে সেই জায়গা ৷ হিন্দু শাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয় যে, মহাকুম্ভের সময়ে বিশেষ করে মৌনী অমাবস্যার মতো দিনে সেই সঙ্গমে ডুব দিলে মানুষের পাপ ধুয়ে যায় ৷ স্নানকারীরা মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করেন ৷ তাতেই পুণ্য অর্জিত হয় ৷
এই বিশ্বাসের উপর ভর করে সকলেই 'পাপস্খলন' করতে বা পুণ্য অর্জনের জন্য মৌনী অমাবস্যার দিনেই ভিড় জমিয়েছিলেন সঙ্গমে ৷ প্রশাসনের তরফে গোটা মেলা চত্বরে বেশ কয়েকটি ঘাটের ব্যবস্থা করা হলেও স্বাভাবিকভাবেই ত্রিবেণী সঙ্গমে ভিড়ের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি ৷ সেই অনিয়ন্ত্রিত ভিড়ের জেরেই ভেঙে যায় পুলিশি ব্যারিকেড ৷ হুড়মুড়িয়ে পড়ে যান পুণ্যার্থীরা ৷ তাদের পিষে দিয়ে চলে যায় সেই জনপ্লাবন ৷ তাতেই মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের ৷ আহত হন অনেকে ৷