জলপাইগুড়ি, 13 জানুয়ারি: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি বানাতে গিয়ে সমস্যায় উপভোক্তারা । জলপাইগুড়ি জেলার ঘটনা ৷ বিজিবি বাধা দিতে পারে, এই আশঙ্কায় বাড়ি বানাতে এখনই অনুমতি দিচ্ছে না বিএসএফ ।
সমস্যা সমাধানে আসরে নেমেছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন । সীমান্তে বাড়ির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার ৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন তিনি ৷ বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি করতে যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয়, সেই কারণে বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি ।
এলাকা পরিদর্শনে জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার (নিজস্ব ছবি) বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা ভালো নয় । সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চাপা উত্তেজনা ও ঠান্ডা একটা লড়াই চলছেই । কোথাও কোথাও সীমান্তে বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বচসা লেগেই চলেছে ।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সীমান্তে আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরি নিয়ে জট তৈরি হয়েছে । কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা ভারতীয় গ্রামে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের ঘর তৈরি করতে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ । জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আবাস প্রকল্পে অন্তত 57টি বাড়ির নির্মাণকাজ বিএসএফের বাধায় আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।
বিএসএফের দাবি, বাড়ি করতে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি । তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দেড়শো গজের মধ্যে কিছু বাড়ি পড়েছে, সেখানে বাড়ি তৈরি হলে সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে পারে । তাছাড়া সীমান্তে এখনও কাঁটাতার লাগানো হয়নি । ফলে হঠাৎ করে সীমান্তে একসঙ্গে একাধিক বাড়ি নির্মাণ শুরু হলে, বিজিবি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে । তাই বিডিও-র কাছ থেকে লিস্ট চাওয়া হয়েছে এবং অনুমতি চাওয়া হচ্ছে ৷ কোন কোন এলাকা দিয়ে কাঁটাতার যাবে, সেটা নির্ধারিত হয়ে গেলেই বাড়ি করতে কোনও বাধা থাকবে না । তাতে সবারই সুবিধা হবে ।
সীমান্তে বিএসএফ-এর প্রহরা (নিজস্ব ছবি) আবাসের সার্ভের সময় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের গ্রামে আবাসের সমীক্ষা হয়েছিল । তখন কোনও সমস্যা হয়নি, বিএসএফ বাধাও দেয়নি । এখন টাকা আসার পরে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা । সিপাইপাড়া, অন্তুপাড়া, খুদিপাড়া, বাঙালপাড়া, খেকিরডাঙা ও হিন্দুপাড়া কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ৷ এই ছয়টি ভারতীয় গ্রামে বিডিও যান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ।
নগর বেরুবাড়ির তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সামুয়েল হক বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়ার ওপারে আবাস প্রকল্পের ঘর তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে । আমরা ইতিমধ্যেই বিএসএফ ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি । যেখানে উপভোক্তা বাড়ি বানিয়ে আছেন, সেখানের পুরোনো বাড়ি ভেঙেও নতুন করতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে গেলেও তারা টাকা খরচ করতে পারছেন না । নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ব্লক তথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে । 15 দিনের মধ্যে সমস্যা না মিটলে আমরা জেলাশাসকের দফতরে উপভোক্তাদের নিয়ে যাব ।’’
নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির উপ-প্রধান দীপককুমার দাস বলেন, “সীমান্ত এলাকায় যাঁরা ঘর পেয়েছেন, তাঁদের তালিকা বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । বিএসএফের সঙ্গে কথা হয়েছে । সমস্যা হচ্ছে বিজিবিকে নিয়ে ।কারণ, সীমান্তে কোনোরকম নির্মাণ হলেই বিজিবি বাধা দেয় । ফলে সীমান্তে একসঙ্গে এতগুলো বাড়ি হলে বিজিবি ঝামেলা করতে পারে বলেই বিএফএস খুব সাবধানে পা ফেলতে চাইছে ।’’
এদিকে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, ‘‘সদর ব্লকের নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাতারের ওপারে থাকা ছ’টি গ্রামে বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি বানাতে সমস্যা হচ্ছে । আমরা বিএসএফকে জানিয়েছি, বাড়িগুলো যাতে তৈরি করতে কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয় । আমরা বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি । কিছু জমি আছে, যার দেড়শো মিটারের মধ্যে সীমান্ত পড়ে যাচ্ছে । সেখানে বাড়ি বানাতে সমস্যা আছে । সেক্ষেত্রে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হবে । তবে কয়েকটা বাড়ি নিয়েই সমস্যা হচ্ছে ।’’