পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

গৃহশিক্ষকতার আড়ালে জাল পাসপোর্টের কারবার! পুলিশের জালে সমীরের আরও এক শাগরেদ - FAKE PASSPORT CASE

জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে সমীর নামে একজন আগেই ধরা পড়েছেন ৷ তাঁকে এই চক্রে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল দিবাকর বিশ্বাস নামে এক গৃহশিক্ষককে ৷

FAKE PASSPORT CASE
গৃহশিক্ষকতার আড়ালে জাল পাসপোর্টের কারবার! পুলিশের জালে সমীরের আরও এক শাগরেদ (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 10, 2025, 8:26 PM IST

বারাসত, 10 জানুয়ারি: বাড়িতে বসে যিনি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেন বলে এতদিন লোকে জানত, সেই তিনিই কি না ধরা পড়লেন জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৷ অভিযোগ, গৃহশিক্ষকতার আড়ালেই এই ‘কারবার’ করতেন দিবাকর বিশ্বাস নামে ওই ব্যক্তি ৷

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর 24 পরগনার রহড়া থানা এলাকা থেকে দিবাকরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ । রাতভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে । তাঁর কথায় বেশকিছু অসঙ্গতি মেলায় শেষমেশ শুক্রবার সকালে দিবাকরকে গ্রেফতার করা হয়, এমনটাই জানা গিয়েছে বারাসত থানার পুলিশ সূত্রে ।

গৃহশিক্ষকতার আড়ালে জাল পাসপোর্টের কারবার! পুলিশের জালে সমীরের আরও এক শাগরেদ (ইটিভি ভারত)

পুলিশ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ৷ তবে সূত্রের খবর, বাংলাদেশিদের নকল পরিচয়পত্র বানাতে জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে পুলিশের জালে ধৃত সমীরকে সাহায্য করতেন এই দিবাকর । ধৃতের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড মিলেছে ৷

জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে বৃহস্পতিবারই বারাসত থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ধৃত সমীরের আরও দুই সহযোগী। এর মধ্যে কৌশিক মণ্ডলের একটি সাইবার কাফে রয়েছে বারাসতের চাঁদুর মোড় এলাকায় । সেই সাইবার কাফের আড়ালেই ধৃত যুবক বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়ে নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ ।

অন‍্যদিকে, চন্দন চক্রবর্তী নামে ধৃত মধ‍্যমগ্রামের আরও এক যুবক লোন ডিপার্টমেন্টে কাজের আড়ালে ভুয়ো পাসপোর্টের কারবার ফেঁদে বসেছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা । তাঁদের দু'জনকে জেরা করেই পুলিশ হদিস পায় দিবাকরের ।

জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত দিবাকর বিশ্বাস (নিজস্ব চিত্র)

উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরের বাসিন্দা দিবাকর আদতে গৃহশিক্ষক । বারাসত নবপল্লির বাসিন্দা সমীর দাস জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে গ্রেফতার হতেই গা ঢাকা দেন দিবাকর । এরপর সূত্র মারফত পুলিশের কাছে খবর আসে রহড়া থানা এলাকার একটি গোপন ডেরাতে লুকিয়ে রয়েছেন তিনি । দেরি না করে পুলিশের একটি টিম রাতেই হানা দেয় সেখানে । অন‍্যত্র পালিয়ে যাওয়ার আগেই ধরা পড়ে যান সমীরের এই শাগরেদ ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত সমীরের নেটওয়ার্ক বহুদূর বিস্তৃত । কাজের সুবিধার্থে এলাকায় এলাকায় গিয়ে তিনি আলাদা একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন । সেই নেটওয়ার্কে টাকার বিনিময়ে নিজের পছন্দসই ছেলেদের টেনে দিনের পর দিন এই কৃতকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন সমীর, কৌশিক অথবা চন্দন কিংবা দিবাকর । সকলেই ছিলেন জাল পাসপোর্টের পাণ্ডা সমীরের নেটওয়ার্কের সদস্য ।

পুলিশ সূত্রে খবর, মুহুরির পরিচয় ভাঁড়িয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের জাল নথি তৈরি করে দিতেন সমীর । শংসাপত্রর ঝুঁকি এড়াতে তিনি বারাসত কোর্টে হলফনামা পেশ করে ভুয়ো পরিচয়পত্রও বানিয়ে দিতেন তাঁদের । যাতে পাসপোর্ট তৈরি কিংবা বাংলাদেশিদের স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি না হয় । সমীরের নেটওয়ার্ক ও নিখুঁত কাজকর্মে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরাও ।

জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে ধৃত দিবাকর বিশ্বাস (নিজস্ব চিত্র)

পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, এক বছর আগেও সমীর-সহ তাঁর সহযোগীদের যেখানে কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হতো । সেখানে বছর খানেকের মধ্যেই আমূল বদল ঘটেছিল তাঁদের জীবনযাত্রায় । এর নেপথ্যে রয়েছে জাল পাসপোর্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করা । সেই কারণে ধৃত সমীরের নেটওয়ার্ক ভাঙতে এখন বদ্ধপরিকর তদন্তকারীরা । পুলিশ মনে করছে, এই নেটওয়ার্ক ভাঙতে পারলেই ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডে তদন্তের জাল অনেকটাই গোটানো সম্ভব হবে ।

এদিকে, সমীরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ধৃত দিবাকর । তাঁর দাবি, "সমীর দাসের সঙ্গে আমার বড়জোর এক থেকে দেড় মাসের সম্পর্ক । উনি আমাকে 10 থেকে 12 জনের ভোটার কার্ড তৈরি করার কথা বলেছিলেন । কিন্তু, আমি করিনি । আধার কার্ড উনি করেন কি না, সেটা আমার জানা নেই ।"

অন‍্যদিকে, ধৃত দিবাকর-কে শুক্রবার দুপুরে বারাসত আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details