পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ঘাসফুলে ঘেরা বহরমপুরে 'রবিনহুড' অধীরের খতিয়ান - Lok Sabha Elections

Lok Sabha Elections 2024: বহরমপুরের রবিনহুড ৷ অনেকেই এই নামেই চেনেন কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরীকে ৷ সেই মসীহা ইমেজকে পুঁজি করেই বহরমপুর লোকসভা আসনে পরপর পাঁচবার জিতেছেন তিনি ৷ এবারও কি পারবেন সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ? কী বলছেন এলাকার মানুষ ? কতটা কাজ তিনি করেছেন ? 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বহরমপুরের সাংসদের রিপোর্ট কার্ড খতিয়ে দেখল ইটিভি ভারত ৷

Lok Sabha Elections 2024
Lok Sabha Elections 2024

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 21, 2024, 1:03 PM IST

বহরমপুরের রবিনহুডের ভরসা 'মসীহা' ইমেজ

বহরমপুর, 21 মার্চ: রবিনহুড ৷ মুর্শিদাবাদের মাটিতে অধীররঞ্জন চৌধুরীর এটাই পরিচয় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে যেমন বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, তেমনই জেলার অনেক মানুষই তাঁকে ‘মসীহা’ মনে করেন ৷ আর এই পরিচয়ই হয়তো তাঁকে বারবার ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী করে দেয় ৷ যে আসনে একসময় কাউকে দাঁত ফোটাতে দিত না বামেরা, সেই বহরমপুর লোকসভা আসনে পর পর পাঁচবার জয়ের নজির গড়েছেন অধীর ৷ বাম গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রমরমা শুরু হওয়ার পরও তাঁকে হারানো সম্ভব হয়নি ৷

সামনে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবার লড়াই অন্যবারের তুলনায় কিছুটা হলেও কঠিন ৷ এবারই প্রথম বহরমপুর লোকসভা আসনের মধ্যে থাকা সাতটি বিধানসভার কোথাও কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক নেই ৷ ছ’টিতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা রয়েছেন ৷ বহরমপুরে জিতেছেন বিজেপির প্রার্থী ৷ তার উপর ভোটের ময়দানে বিজেপির চিকিৎসক প্রার্থী নির্মল সাহা ও তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা ক্রিকেটার প্রার্থীর ইউসুফ পাঠানে বিরুদ্ধে লড়তে হবে অধীর চৌধুরীকে ৷

জিততে পারলে বহরমপুর লোকসভা আসনে জয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক করবেন এই কংগ্রেস নেতা ৷ আর হারলে মুর্শিদাবাদ তথা বঙ্গে কংগ্রেসের রাজনীতির ‘ডাকাবুকো’ এই নেতার রাজনৈতিক কেরিয়ারে ধাক্কা অবশ্যই লাগবে ৷ ফলে এই ভোটে জিততে উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ডই একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে অধীররঞ্জন চৌধুরীর ৷

সেটা বিলক্ষণ জানেন অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ ৷ সেই কারণেই তিনি শুরুতেই জানিয়ে রেখেছেন, তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন বাধা দিয়েছে ৷ তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের কথায় জেলাশাসক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছেন । জেলাশাসক বাধা দেওয়ায় তিনি 12 কোটি টাকা খরচ করতে পারেননি । অধীর চৌধুরী আরও জানিয়েছেন যে নন রিফান্ডেবল ফান্ডের এই টাকা সাংসদ কোটাতেই জমা থাকবে । কোথায় কোথায় খরচ করতে চেয়েছিলেন, নির্বাচনী প্রচারে তার অ্যাপ্রুভাল লেটার পকেটে নিয়েই ঘুরবেন তিনি ৷

এর পরও তাঁর কিছু কিছু কাজের খতিয়ান পাওয়া গিয়েছে ৷ সেগুলি হল- 80টি পানীয় জলের কল বসানো হয়েছে ৷ যদিও সাংসদের লক্ষ্য ছিল 100টি পানীয় জলের কল বসানো ৷ কিন্তু প্রশাসনের বাধায়, তা সম্ভব হয়নি ৷ এছাড়া সাতটি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্প হয়েছে ৷ বহরমপুর স্টেডিয়াম মাঠে মহিলাদের শৌচাগার তৈরি হয়েছে ও পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে ৷ ভরতপুর ও বড়ঞাতে কমিউনিটি হল হয়েছে ৷

শুধু সাংসদ কোটার টাকা খরচই নয়, বহরমপুরের জন্য অধীর চৌধুরী আরও অনেক কিছু করেছেন বলে দাবি এলাকার বাসিন্দাদের ৷ সমিত মণ্ডল, স্থানীয় বাসিন্দা তথা অধ্যাপক, তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের উন্নয়নে অধীর চৌধুরী অনেক কিছু করেছেন ৷ নবগ্রামে মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে এসেছে ৷ রেলওয়ের অনেক ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন ৷ ইন্দিরা গান্ধি ওপেন ইউনিভার্সিটির রিজিওনাল সেন্টার এখানে এনেছেন ৷ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার নিয়ে এসেছেন ৷’’

ফলে শুধু গত পাঁচবছরই নয়, মানুষের কাছে সামগ্রিকভাবে গত 25 বছর সাংসদ থাকাকালীন তাঁর কাজের কথাই উঠে এসেছে ৷ ইউপিএ-2 জমানায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রী পরিষদে তিনি রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ৷ সেই সময়ও তাঁর কাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বারবার ৷ সেই সব পুঁজি করে কি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা এবার ভোট বৈতরণী পার করতে পারবেন ? এই প্রশ্নই বহরমপুরবাসীর মুখে মুখে ঘুরছে এখন ৷

স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা অবশ্য আশাবাদী ৷ তাঁরা অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক ট্র্যাক রেকর্ডকে সামনে তুলে ধরছেন ৷ তাঁরা বলছেন, একসময় বহরমপুরের মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও কন্টাক্টর সিন্ডিকেটের একছত্র অধিপতি ছিলেন অধীর । মুর্শিদাবাদের বুকে ঠিকাদারি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের শেষ কথা ছিলেন তিনি ৷ বাম সংগঠনের তাবড় তাবড় নেতারাও তখন অধীর চৌধুরীকে সমীহ করতে শুরু করেন । ঠিকাদারি আর ট্রাক সিন্ডিকেটের আয় দু’হাতে গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে তাঁদের মসীহা হয়ে ওঠেন তিনি ।

ফলে বাম আমলে তাঁর বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, হুমকি, দাদাগিরির মতো অভিযোগ বারবার উঠলেও তাঁর রবিনউড ইমেজ কখনও চিড় খায়নি ৷ কোভিড অতিমারীতে লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যেভাবে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেটাও তাঁর এই ইমেজকে আরও মজবুত করেছে বলেই জেলার কংগ্রেস কর্মীরা বলেছেন ৷

তাঁদের বক্তব্য, এর সঙ্গেই যুক্ত হয় অধীর চৌধুরীর লড়াকু রাজনৈতিক নেতার ইমেজ ৷ 1996 সালে তিনি নবগ্রামের বিধায়ক হয়েছিলেন ৷ ওই আসনে তিনি একমাত্র কংগ্রেস প্রার্থী যিনি জিতেছেন ৷ তাঁর আগে বা পরে ওই আসন বরাবর বামেদের দখলে থেকেছে ৷ বহরমপুর লোকসভা আসনও তাই ৷ তাঁর আগে শুধু কংগ্রেসের অতীশচন্দ্র সিংহ বহরমপুর লোকসভা আসনে জিততে পেরেছিলেন ৷ দু’বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জিততে পারেননি বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সিদ্ধার্থশংকর রায় ৷

অধীর চৌধুরী শুধু সেই নজিরই ভাঙেননি ৷ টানা পাঁচবার জিতে দেখিয়েছেন ৷ ঘাসফুলের দাপটে অবশ্য মুর্শিদাবাদে অধীরের ভিত নড়বড়ে হয়েছে ৷ তবে এখনও তিনি তেজ হারাননি বলেই মনে করেন এলাকার মানুষ ৷ সেই তেজের দাপট এবারও কি অব্যাহত থাকবে ? উত্তরের অপেক্ষায় বহরমপুর ৷

আরও পড়ুন:

  1. হাইপ্রোফাইল দক্ষিণে উন্নয়ন বনাম বাস্তব, পাঁচ বছরে মালার 'রায়'
  2. বিষ্ণুপুরে মুখোমুখি সৌমিত্র-সুজাতা, পাঁচ বছরের কাজের নিরিখে জয়ের হ্যাটট্রিক কি হবে বিজেপি প্রার্থীর?
  3. অসিত মালকে ব্যর্থ সাংসদ তকমা বোলপুরবাসীর, কী বলছে রিপোর্ট কার্ড?

ABOUT THE AUTHOR

...view details