বর্ধমান, 26 নভেম্বর: বাড়িতে মা অসুস্থ । তাই প্যারোলে ছুটির আবেদন করেছিলেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানাগারে বন্দি অর্ণব দাম । এপিডিআর-এর দাবি, আবেদনের কোনও উত্তর না পেয়ে সোমবার রাত থেকে সংশোধনাগারেই অনশনে বসেন তিনি । যদিও সংশোধানাগার কর্তৃপক্ষের পালটা দাবি, অর্ণব দামের অনশনে বসার কোনও খবর নেই । তিনি ঠিক আছেন ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মাওবাদী নেতা কিষেনজির 'ঘনিষ্ঠ' ছিলেন অর্ণব । শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক মাওবাদী হামলায় তাঁর নাম জড়ায় । 2012 সালে তাঁকে আসানসোল থেকে গ্রেফতার করা হয় । এরপর সংশোধানাগার থেকেই পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন অর্ণব দাম । এছাড়া তিনি জেল থেকে স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট) এ উত্তীর্ণ হন ।
চলতি বছরের জুলাই মাসে ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন অর্ণব দাম । সেই পরীক্ষায় প্রায় আড়াইশো পড়ুয়ার মধ্যে প্রথম হন তিনি । কিন্তু প্রথম দিকে সংশোধানাগার কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ছাড়পত্র না দেওয়ায় শুরু হয় জটিলতা । প্রতিবাদ জানিয়ে সংশোধনাগারে অর্ণব অনশন শুরু করেন । পরে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শুরু করেন তিনি । অর্ণব দামের পাশে দাঁড়ান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন-সহ অন্যান্য অধ্যাপকেরা ।
এদিকে, দক্ষিণ 24 পরগনার সুভাষগ্রামের বাড়িতে অর্ণব দামের মা একা থাকেন । অসুস্থ হওয়ায় সেভাবে তিনি বাইরে বের হতে পারেন না । তিনি তাঁর ছেলেকে দেখতে চেয়েছেন । এপিডিআর-এর পক্ষ থেকেও তাঁর মাকে গাড়িতে চাপিয়ে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানাগারে অর্ণবের সঙ্গে দেখা করানোর চেষ্টা করা হয় । কিন্তু তাঁর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ থাকায় গাড়িতে চেপেও আসতে পারেননি তিনি । অগত্যা পুজোর সময় অর্ণব দাম বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য সাত দিনের প্যারোলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন । কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ কোনও উত্তর দেয়নি বলে অভিযোগ । ফলে তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে অনশনে বসেন বলে দাবি এপিডিআরয়ের ।
বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানাগার (নিজস্ব ছবি) এপিডিআরয়ের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, "দক্ষিণ 24 পরগনার সুভাষগ্রামে অর্ণব দামের বাড়ি । তাঁর মা সেখানে একা থাকেন । তিনি অসুস্থ । তিনি তাঁর ছেলেকে একবার দেখতে চেয়েছেন । তাই অর্ণব জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্যারোলে সাত দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন । কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ সেই চিঠির জবাব দেয়নি । এইভাবে পুজোর পর থেকে প্রায় মাস দুই কেটে গিয়েছে । কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি । ফলে প্রতিবাদ জানিয়ে অর্ণব অনশনে বসেছেন । জেল কর্তৃপক্ষ যদি তাঁকে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয়, তাহলে অর্ণব প্যারোলে ছুটির জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন । কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের কোনও উত্তর না দেওয়ায় তিনি অনশনে বসেছেন ।"