শিলিগুড়ি, 18 নভেম্বর: পাড়ায় খুবই শান্ত স্বভাবের বলে পরিচিত । কোনও ঝামেলায় কোনোদিনও দেখেনি এলাকাবাসী । এলাকায় সুবোধ বালক হিসেবে পরিচিত সেই বিশাল ঢালিকেই রবিবার রাতে ট্যাব-কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় শিলিগুড়ি থেকে ৷
সোমবার সকালে খবর চাউর হতেই বিশালের গ্রেফতারিতে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে এলাকাবাসীদের মাথায় । এই যুবক যে তলে তলে এই কাণ্ড ঘটিয়ে চলছিলেন, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ বুঝতে পারেননি । স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আচমকা বড়লোক হয়ে যান বিশালরা । দামি দামি গাড়ি, আসবাব আসছিল তাঁদের বাড়িতে । কিন্তু এসবের নেপথ্যে যে ট্যাব-কাণ্ড, তা টেরই পায়নি এলাকাবাসী ।
ট্যাব-কাণ্ডে শিলিগুড়িতে ধৃত বিশাল ঢালির বাড়ি (নিজস্ব ছবি) ট্যাব-কাণ্ডে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে শিলিগুড়িতে গ্রেফতার হয় গোপাল রায়, বিশাল ঢালি ও দিবাকর দাস । রবিবার রাতে শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি শপিং মলের সামনে থেকে তিনজনকে একসঙ্গে গ্রেফতার করে পুলিশ । দিবাকর, গোপাল, বিশাল তিনজনের মধ্যেই রয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক ।
এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, "কলকাতা পুলিশের একটি দল এসেছিল । অভিযান চালানো হয় আমাদের কমিশনারেটের সহযোগিতায় । সেভক রোডের কাছ তিনজন গ্রেফতার করা হয়েছে । তদন্তের স্বার্থে তিনজনকে নিয়ে গিয়েছে ।"
বিশাল ঢালির বাইক (নিজস্ব ছবি) পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড দিবাকর দাস ওরফে বিট্টু উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার দাসপাড়ার বাসিন্দা । তিনি পেশায় চোপড়ার এক সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক । দিবাকরের মাসির ছেলে বিশাল ঢালি । তিনি শিলিগুড়ির চম্পাসারির বটতলার বাসিন্দা । আবার বিশালের দিদিকে চলতি বছরেরই মার্চ মাসে বিয়ে করেন গোপাল রায় । তিনি চম্পাসারি পবিত্রনগরের বাসিন্দা । বেশ কয়েক মাস ধরেই দিবাকর , গোপাল ও বিশাল তিনজন মিলেই ট্যাব কেলেঙ্কারি চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ ।
বিশাল ঢালির বাড়ি (নিজস্ব ছবি) আরও জানা গিয়েছে, রবিবার সস্ত্রীক গোপাল রায় বিশালের বাড়ি যান । সেখানেই হাজির হন দিবাকরও ৷ রবিবার দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে তাঁদের পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে । বিশাল ঢালির পরিবারের কেউই নেই । গোপালের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা ।
বিশাল ঢালির বাড়ির ভাড়াটিয়া বিশাখা সরকার বলেন, "রবিবার রাতে বিশালের বাবা-মা একটি ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান । তাঁরা জানান, কোনও আত্মীয়র বাড়িতে যাচ্ছেন । তবে সম্প্রতি তাঁদের চালচলনে বেশ পরিবর্তন এসেছিল । বাড়িতে আসছিল একের পর এক দামি গাড়ি । বিশাল এলাকায় খুব ভালো হিসেবে পরিচিত । কোনও ঝামেলায় থাকত না । ও যে এইসব ঘটনা ঘটাবে জানতামই না ।"
বিশাল ঢালির প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের (নিজস্ব ছবি) গোপালের মা যমুনা রায় বলেন, "আমরা এসব ঘটনার কিছুই জানি না । রবিবার বউমাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল ছেলে । সেখানেই নাকি তাঁদের খাওয়া-দাওয়া নিমন্ত্রণ ছিল । রাতের বেলা আমার বউমা আমাকে ফোন করে জানায়, তাঁরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছে । জিজ্ঞেস করলে জানতে পারি, লালবাজারে যাবে তাঁরা । আজ সকালে থানায় যাওয়ার পর সব ঘটনা জানতে পারি । তবে ট্যাব-কাণ্ডের আমরা কিছুই জানি না ।"
ট্যাব কেলেঙ্কারিতে হুলস্থুল কাণ্ডে গোটা রাজ্যে । অভিযোগ, পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা ঢুকে যায় অন্য অ্যাকাউন্টে । তদন্তে দ্রুত সিট গঠন করে প্রশাসন । তদন্তে দেখা যায়, অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলছে সাইবার অপরাধীরা । শিলিগুড়ি ও পাহাড়েও একইভাবে ট্যাবের টাকা উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে । শিলিগুড়িতে প্রায় 28 জন পড়ুয়া ও পাহাড়ের দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় 25 জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে ।
7 নভেম্বর কলকাতার সরশুনা থানায় ট্যাবের টাকা উধাওয়ের একটি অভিযোগ দায়ের হয় । অভিযোগের তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের লালবাজার থানার একটি দল প্রথমে কিষানগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায় । এরপর সেখান থেকে গোপনসূত্রের তথ্য মিললে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের সহযোগিতায় শিলিগুড়িতে অভিযান চালায় । এরপর রবিবার রাতে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ।