দার্জিলিং, 12 ডিসেম্বর: ফের বদলাতে চলেছে শৈলরানির রাজনৈতিক সমীকরণ ! আবার নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান হতে চলেছে পাহাড়ে । ভাঙতে চলেছে অজয় এডওয়ার্ডয়ের হামরো পার্টি ।
কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও পাহাড়ের শাসকদল অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকে আটকাতে বিরোধীরা এবার এককাট্টা হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলেছে পাহাড়ে । আগামী 22 ডিসেম্বর ওই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করা হবে ৷ এমনটাই জানিয়েছেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড ।
নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে চলেছেন অজয় এডওয়ার্ড (নিজস্ব ছবি) যদিও দলের কী নাম হবে তা নিয়ে স্পিকটি নট তিনি । তবে পুর নির্বাচনের দামামা বাজতেই অজয় ব্যস্ত নিজের নতুন দল নিয়ে । ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পাহাড়ের বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন তিনি । তাঁর বক্তব্য, "গোর্খাদের স্বার্থেই আমার দল কাজ করবে । তাই তাদের আবেগকে মাথায় রেখে দলের নাম হবে ।"
প্রায় সাত বছর পর পাহাড়ের কার্শিয়াং, কালিম্পং ও মিরিক এই তিন পুরসভায় নির্বাচন হবে । আগামী এপ্রিল মাসে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনিত থাপা নিজেও । এই নির্বাচনে অনিত থাপার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি হচ্ছেন অজয় এডওয়ার্ড । যিনি এর আগেও চমক দিয়েছেন । এর আগে, তিনি নতুন দল হামরো পার্টি গড়েই দার্জিলিং পুরসভা দখল করে নেন । তাতে পাহাড়ের অনেক পোড়খাওয়া নেতাই অবাক হয়েছিলেন ।
পাহাড়ে পুর নির্বাচনের আগে ভাঙছে হামরো পার্টি (নিজস্ব ছবি) যদিও পরবর্তীতে তাঁর দলের কাউন্সিলরা অনিতের প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগ দেওয়ায় দার্জিলিং পুরসভা হাতছাড়া হয় অজয়ের । জিটিএ নির্বাচনেও আটটি আসন দখল করে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হামরো পার্টি । তবে ফের পুরনির্বাচনের আগেই অজয়ের নতুন দল ঘোষণা নিয়ে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণে নয়া মোড় আসতে চলেছে । ইতিমধ্যে তিনটে নাম জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে । তারা যেটাতে সবুজ সংকেত দেবে সেই নামেই দল চালু করবে অজয় ।
বর্তমানে পাহাড়ে অস্তিত্ব সংকটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার । একদা দলের সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের পাহাড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল । কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এখন শক্তিক্ষয় হওয়ায় তারা যে অনিতকে লড়াই দিতে পারবে না তা পাহাড়বাসীও জানে । কিন্তু অজয় এডওয়ার্ড অনিতকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ । তাই সাত তাড়াতাড়ি নতুন দল ঘোষণা করতে চলেছেন তিনি । এই দলে অনেক পুরনো মুখ দেখা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অজয় এডওয়ার্ড ।
আবার পাহাড়ের সাংস্কৃতিক জগতের মানুষেরাও এই দলে থাকবে বলে আশাবাদী তিনি । অজয় এডওয়ার্ড ইতিমধ্যে নতুন দল নিয়ে এঁদের সকলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন । তাঁর বৈঠকে ডাক পড়েছিল পাহাড়ের পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হরকা বাহাদুর ছেত্রীর ও জিটিএ সভাসদ তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বিনয় তামাংয়ের ।
যদিও কেউই ওই বৈঠকে সামিল হননি । আবার নরবাহাদুর খাওয়াস ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে ইস্তফা দিয়েছেন । তাই তাঁকেও নতুন দলে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন অজয় । তবে এসব নিয়ে কথা বলতে নারাজ অজয় এডওয়ার্ড । তিনি বলেন, "পাহাড়ে গোর্খাদের জন্যই আমার নতুন দল কাজ করবে । তাঁদের উন্নয়নের জন্য সব কাজ করা হবে ।"
এছাড়াও প্রাক্তন মোর্চা নেতা প্রকাশ গুরুং, সঞ্জয় থুলুং-সহ গোর্খা সংস্কৃতি মঞ্চ, গোর্খা গৌরব সংস্থানের মতো অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোরও অজয় এডওয়ার্ডের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে । এই বিষয়ে অবশ্য বিনয় তামাং বলেন, "বিজেপি, তৃণমূল ও পাহাড়ের শাসকদল অনিত থাপার বিজিপিএম কোনও কাজ করছে না । তাই এদের আটকাতে সবাই একত্রিত হচ্ছে । তবে আমি এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি ।" একই বক্তব্য জন আন্দোলন পার্টির সভাপতি হরকা বাহাদুর ছেত্রীরও ।
তবে এই নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়টিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদলের কেউই । জিটিএ'র চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা বলেন, "নতুন দল এলে কিছু হবে না । একবার যারা পরীক্ষায় ফেল করেছে, তারা আবার পরীক্ষায় বসতে চাইছে । এভাবে হয় না ।"
একই সুর আবার জিএনএলএফ নেতা তথা দার্জিলিংয়ের বিজেপি বিধায়ক নিরজ জিম্বার গলায় । তিনি বলেন, "এটা পুরনো ওয়াইনকে নতুন বোতলে ঢোকানোর মতো । যারা আগে হেরে গিয়েছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যারা টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ, যারা দলে থেকে কোনও কাজ করেনি তারা এই নতুন দলে যাচ্ছে । এই দল ছয় মাসের বেশি টিকবে না । এদের গোর্খাদের বা ভূমির স্বার্থে কাজ করার ইচ্ছা নেই । এদের লক্ষ্য জিটিএ দখল করা ।"