কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে গত সপ্তাহেই ফিয়ার্স লেন অবরুদ্ধ করে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ দুপুর থেকে রাত, রাত থেকে সকাল, সকাল থেকে দুপুর অবস্থান-বিক্ষোভের পর সেই বিনীত গোয়েলের হাতেই পদত্যাগের দাবিপত্র তুলে দিয়ে এসেছিলেন তাঁরা ৷ তার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন ৷ এখনও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদে বহাল রয়েছেন বিনীত গোয়েল ৷
কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দাবি করলেন, ‘‘কলকাতার পুলিশ কমিশনার আমার কাছে নিজে এসেছে অনেকবার পদত্যাগ করার জন্য, গত সাতদিন আগে ৷ সামনে পুজো ৷ আপনারা এবার আমায় বলুন, ল অ্যান্ড অর্ডার তো জানতে হবে, যে থাকবে ৷ কোন পাড়ায় কী পুজো হচ্ছে, পুজো কমিটিগুলো কী থিম করছে, কোথায় কী পুলিশ পোস্টিং হচ্ছে৷ এটা তো জানতে হবে ৷’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র৷ প্রশ্ন উঠেছে, বিনীত গোয়েল কি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ইস্তফা দিতে পারেন ? পুজোর সময় নগরপাল পদে বদল হলে কি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে সমস্যা হবে ? এই বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে ইটিভি ভারত ৷
লালবাজার সূত্রে খবর, নগরপাল বা পুলিশের যেকোনও পদেই নিয়োগকর্তা রাজ্যপাল ৷ ফলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ করতে পারেন না বিনীত গোয়েল ৷ পদত্যাগ করতে হলে তাঁকে তা পাঠাতে হবে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছেই ৷ এক্ষেত্রে তিনি তেমন কিছু করেছেন বলে জানা যায়নি ৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বড়জোড় পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করতে পারেন বিনীত গোয়েল ৷ এক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই করেছেন ৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট যে তিনি পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ৷
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তরফে বিনীত গোয়েলের ইস্তফার প্রস্তাব ফেরানো নিয়ে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটাও কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নও উঠেছে ৷ এই নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা জানান, শহরে পুজোর সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানো সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সরাসরি নগরপাল নেন না ৷ এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা আছেন ৷ নগরপাল শুধু পুজোর সময় বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করেন ৷
ওই পুলিশকর্তা নিজের বক্তব্যের সমর্থনে অতীতের উদাহরণ টানেন ৷ তিনি জানান, 2007 সালের 21 সেপ্টেম্বর রিজুওয়ানুর রহমানের দেহ উদ্ধার হয় ৷ সেই ঘটনার পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা ৷ সেই সময় কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন প্রসূন মুখোপাধ্যায় ৷ পরিস্থিতির চাপে সেই সময় প্রসূনকে সরিয়ে কলকাতার নগরপাল পদে নিয়ে আসা হয় গৌতমমোহন চক্রবর্তীকে ৷ তাঁকে মহাষষ্ঠীর দিন ওই পদে বসানো হয় ৷ তার পরও সেবার পুজো নির্বিঘ্নে কেটেছিল ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশকর্তার যুক্তি, এক্ষেত্রে তো আরজি কর-কাণ্ড ঘটেছে পুজোর মাস দুয়েক আগে ৷ ফলে বিনীত গোয়েলকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল প্রশাসনের হাতে ৷ তার পরও সেটা হয়নি ৷ ফলে পরোক্ষে বিনীত গোয়েলকে সরানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ওই পুলিশকর্তা ৷
এদিকে এদিন আরজি কর-কাণ্ডের পর বিভিন্ন সময়ে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ক’দিন পুলিশ সামলেছে ৷ ...মার খেয়েছে ৷ নিজেদের রক্ত দিয়েছে৷ তবুও কারও রক্ত নেয়নি ৷ এটা আমি ওদের প্রশংসা করি ৷ একই সঙ্গে আপনাদেরও বোঝা উচিত, পুলিশও কিন্তু আপনাদের পাহারা দেয় ৷ তাঁরাও কিন্তু আপনাদের মতো মানুষ ৷ তাঁদেরও সংসার আছে ৷ তাঁদেরও পরিবার আছে৷ যাকে পারছেন, তাঁকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন কেউ কেউ ৷ একবারও ভাববেন না, আপনার পরিবারকে তুলে কেউ যদি এই কথা বলে, তাহলে আপনার কী হবে ? আপনার মানসিকতা কী হবে ?’’