কলকাতা, 30 জুন:দীর্ঘ আইনি টালবাহানার পরে বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনে প্রশাসনিক জটিলতা কাটল। মনোনীত হল 33 জনের নতুন কমিটি। সেখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বপন ওরফে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেন। যুগ্ম সচিব পদে শর্মী সেনগুপ্ত থাকলেও প্রাক্তন খেলোয়াড় মান্তু ঘোষ সরে দাঁড়ানোয় উত্তরবঙ্গের আইনজীবী রজত দাসকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষকর্তা সুব্রত রায় (ইটিভি ভারত) কোষাধ্যক্ষ পদে সুব্রত রায় না-দাঁড়ানোয় অর্পিতা দে সরকারকে মনোনীত করা হয়েছে। সহকারী কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন শান্তুনু সাহা। 33 জনের কার্যকরী কমিটিতে চ্যাপ্টার ওয়ান দক্ষিণবঙ্গ এবং চ্যাপ্টার 2-এর সদস্য সংখ্যা 70-30 অনুপাতে বিভক্ত। সেইমতো দক্ষিণবঙ্গের 22 জন এবং উত্তরবঙ্গের এগারো জন কমিটিতে এসেছেন। তবে সভাপতি পদে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় যুগ্ম সচিব পদে শর্মি সেনগুপ্ত রয়ে যাওয়ায় বলাই যায় বাংলার টেবিল টেনিসের রাশ 'বন্দ্যোপাধ্যায়-সেনগুপ্ত' গোষ্ঠীর হাতেই রইল।
শনিবার রোটারি সদনে বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকের আবহাওয়া ছিল উত্তপ্ত। বিশেষত গ্রেটার শিলিগুড়ি অ্যাসোশিয়েশন 30 জনের কার্যকরী কমিটিতে 11 জন সদস্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা নিয়ে সরব হয়। সেক্ষেত্রে তাদের দাবির ভিত্তি ছিল, টেবিল টেনিস ফেডারেশনের করে দেওয়া নিয়মের কারিকুরি। সেই দাবি মেনে, 11 সদস্য চ্যাপ্টার 2 অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের তরফে থাকায় খুশি প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ এবং উত্তরবঙ্গ টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষকর্তা সুব্রত রায়। বলছেন, "আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনে সব কিছু করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা খুশি।" আইনজীবী রজত দাস স্থলাভিষিক্ত হলেন মান্তু ঘোষের ছেড়ে যাওয়া যুগ্ম সচিব পদে।"
প্রশাসনিক জটিলতায় টেবিল টেনিস বোর্ডের বদলে আদালত চত্বরে অতিবাহিত হওয়া নিয়ে বিরক্তি বাড়ছিল টেবিল টেনিস জগতের। যুগ্ম সচিব পদ পুনরায় মনোনীত শর্মি সেনগুপ্ত বলছেন, "নির্বাচন করার ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিলেও উত্তরবঙ্গ নানাভাবে বাধা দিয়েছে। বিষয়টিকে আদালত চত্বরে নিয়ে গিয়েছে। ফলে জটিলতার মধ্যে দিয়ে বাংলার টেবিল টেনিস চলছিল। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করা গিয়েছে এটা স্বস্তির। অনেক কাজ আটকে রয়েছে। এখন তা দ্রুত শুরু করতে হবে। টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট গুলো শুরু করতে হবে।"
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কমিটি সদস্য বলছেন, "নিয়মের কিছু পরিবর্তন করতে সংবিধান সংশোধন জরুরি। তা করতে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন জরুরি। কিন্তু তা না-পাওয়া যাওয়ায় সমস্যা রয়ে যাচ্ছে । যেভাবে শর্মি সেনগুপ্ত সময় দিয়ে রাজ্য সংস্থা চালিয়ে গিয়েছে তা অভাবনীয় । উত্তরবঙ্গের দিক থেকে সমর্থন কার্যত মেলেনি। তাছাড়া সংস্থার অন্দরে "ঘর শত্রু বিভীষণরা" রয়েছেন । সোশাল মিডিয়ায় আস্তিন গুটিয়ে সমালোচনা করে চলেছে। চেনা প্রতিপক্ষের চেয়ে অচেনা প্রতিপক্ষ সবসময় ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকারক। যা বাংলা টেবিল টেনিসের পক্ষে অভিশাপ ।"
প্রায় একবছরের কাছাকাছি সময় ধরে আইনি জটে বারবার থমকে গিয়ে রাজ্য টেবিল টেনিস সংস্থার কাজ। আইনি লড়াই উত্তরবঙ্গ শুরু করেছিল। এবার ফের একই কাজ যদি উত্তরবঙ্গ টেবিল টেনিস সংস্থা করে তাহলে দক্ষিণবঙ্গ বা চ্যাপ্টার ওয়ান শুধুমাত্র রিসিভিংয়ে বসে থাকবে না, তার ইঙ্গিত কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। পদের যুদ্ধে থমকে বাংলার টেবিল টেনিস। ক্ষতিগ্রস্ত খেলোয়াড়রা। অভিযোগটা পুরোপুরি মানতে রাজি নন শর্মী সেনগুপ্ত।
বলছেন, "ক্ষতি কিছুটা হয়েছে। তবে তা প্রশাসনিক অস্থিরতার কারণে শুধু নয়। এবছর গরমটা নজিরবিহীন ছিল। ছোট ছোট খেলোয়াড়দের কথা ভেবে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। লোকসভা নির্বাচন ছিল। চার জুন লোকসভার ফল প্রকাশ হতেই আমরা শিলিগুড়িতে টুর্নামেন্ট শুরু করার সবুজ সংকেত দিয়েছিলাম। জুলাই মাস থেকে পুরোদমে টুর্নামেন্ট শুরু হবে ৷ হয়তো দু-একটা টুর্নামেন্ট কম আয়োজিত হবে।"
সাধারণত 14 থেকে 15টি টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় এক বছরে ৷ পুনর্মনোনীত যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় টুর্নামেন্ট সংখ্যা অনেক বেশি ৷ তাছাড়া বাংলার টেবিল টেনিস খেলোয়াড়রা এখন নিয়মিত বিদেশে খেলতে যাচ্ছে, সাফল্য পাচ্ছে ৷ তাই ক্ষতি বিশেষ কিছু হবে না ৷
টেবিল টেনিস কোচ এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ সরকার বলছেন, "প্রশাসনিক জটিলতায় টুর্নামেন্ট শুরু না হওয়ায় ক্ষতি কিছুটা হল জুনিয়র প্যাডলারদের। কারণ এই প্রতিযোগিতায় সাফল্যের ভিত্তিতে ক্রমপর্যায়ে ওঠা নামা নির্ভর করে। তা ছাড়া সারাক্ষণ প্র্যাকটিস করলেই হয় না প্রতিযোগিতা ম্যাচ খেলা জরুরি। তবে শেষ অবধি জটিলতা সুষ্ঠুভাবে মিটে টেবিল টেনিস বোর্ডে ফিরছে আদালতে ঘোরাঘুরির বদলে সেটাই ভালো দিক।"