পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

বীতশ্রদ্ধ হয়েই অবসর অশ্বিনের, বিস্ফোরক কোচ সুব্রহ্মণিয়াম - SUNIL SUBRAMANIAM EXCLUSIVE

অশ্বিনের অবসর ঘোষণায় হতাশ তাঁর পুরনো কোচ সুনীল সুব্রহ্মণিয়াম ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সঞ্জয় অধিকারীর সঙ্গে ফোনালাপে বিস্ফোরক মন্তব্য তাঁর ৷

RAVICHANDRAN ASHWINS RETIREMENT
কোচের সঙ্গে অশ্বিন (ETV Bharat)

By ETV Bharat Sports Team

Published : 5 hours ago

কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্ট নির্বিষ ড্র'য়ের শেষে গাব্বায় চমক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর। টেস্টে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটশিকারির অবসর ঘোষণা ভারতীয় সাজঘরকে বেআব্রু করে দিয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চাও ৷ এপ্রসঙ্গে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অশ্বিনের প্রাক্তন কোচ সুনীল সুব্রহ্মণিয়ামের সঙ্গে। ছাত্রের সিদ্ধান্তে বিস্মিত তিনি। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও। তিনি মনে করেন, টিম ম্যানেজমেন্টের খামখেয়ালিপনায় বীতশ্রদ্ধ হয়েই অশ্বিন ছেড়ে দিল। তিনি আঙুল তুলেছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং গৌতম গম্ভীরের দিকেও।

অশ্বিনের কোচের বক্তব্য (ETV Bharat)

প্রঃ রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন, আপনার প্রতিক্রিয়া?

উঃ আমি বিস্মিত, চমকে গিয়েছি। 2025 থেকে 2027 সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে দেশের মাটিতে 14টি টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। সিদ্ধান্তটা তারপর নিতে পারত। একটা কথা জেনে রাখুন উপরওয়ালা ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি খুব দয়াবান। হরভজন সিংয়ের পর অশ্বিন চলে এসেছিল। ন'শো উইকেট রয়েছে দু'জনের ঝুলিতে। কিন্তু উপরওয়ালা এতটাও দয়াবাল হবেন না যে, খুব তাড়াতাড়ি অশ্বিনের মাপের বোলার চলে আসবে। ভারতকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে এই মাপের স্পিনার পাওয়ার জন্য।

প্রঃ ভারতীয় বোলিং আক্রমণ হঠাৎ করেই কি দুর্বল হয়ে পড়ল?

উঃ দুঃখের বিষয় হল ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দলের প্রধান স্পিনার চলে যাওয়ার পর রবীন্দ্র জাদেজাকে দিয়ে অভাব পূরণ করার চেষ্টা হবে। তবে আমি জানি না, জাড্ডু কতদিন খেলা চালিয়ে যাবে। কুলদীপ এবার অনেক সুযোগ পাবে। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর রাখি। অশ্বিন, ভাজ্জির অর্ধেক তো দূরে থাক, সিকিভাগ দক্ষতার স্পিনার নেই দলে। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। তেমনই বোলারদের ক্ষেত্রেও ৷ কপিলদেবের পরে ওর মত বোলার আসেনি। স্পিনারদের মধ্যে দেখুন, কুম্বলের পর ভাজ্জি এসেছে। তারপর অশ্বিন এসেছে। এবার এই মাপের স্পিনার পেতে সময় লাগবে।

প্রঃ সিরিজের মাঝে অবসর। কীভাবে দেখছেন?

উঃ কিছু তো একটা হয়েছে। কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সরকারিভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে যেসব বক্তব্য পেশ হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে সব ছবি আসছে তাতে আসল ঘটনাটা ঠিকমতো প্রকাশ হচ্ছে না বলে মনে হয়। তুমি যদি অবসর নেবে তাহলে সিরিজের আগে নিতে পারতে, কিংবা সিরিজের পরে এসে ঘোষণা করতে পারতে। ভারতীয় দলে এটা কী হচ্ছে ? কখনও অশ্বিন খেলছে, কখনও ওয়াশিংটন আবার কখনও জাদেজা খেলছে। মিউজিক্যাল চেয়ারের মত বিষয়টি হচ্ছে। আপনার দলে পেস বোলিং অনভিজ্ঞ। সেখানে দু'জন অভিজ্ঞ বোলার বুমরা এবং অশ্বিনকে রেখেই তো বোলিং আক্রমণ গড়ে উঠবে। আমিও দলের সঙ্গে ছিলাম। আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাটসম্যানের উপর জোর দিচ্ছে। কাজ চালানোর মত বোলার দিয়ে বোলিংটা করাতে চাইছে। কিন্তু কাজ চালানোর মত বোলার দিয়ে আক্রমণ সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাদের উপর নির্ভর করে আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন না। তৃতীয় পেসার হিসেবে হর্ষিত রানা, আকাশদীপ চলবে না। আমি হলে বুমরা, অশ্বিনকে রেখে বাকিদের মধ্যে থেকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজাতাম। এটা 2018-19 সালের মত নয় যে, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, বুমরা এবং উমেশ যাদব রয়েছে। সেই সময় ভয়ঙ্কর ছিল বোলিং আক্রমণ। ওই সময় তুমি অশ্বিনকে বসিয়ে রেখেছ। এখনও তুমি অশ্বিনকে বসিয়ে রাখছ। একজন বিশ্বমানের বোলারের পক্ষে কতদিন এই বিষয়টা মেনে নেওয়া সম্ভব। কোথাও একটা তো ভুল হয়েইছে।

প্রঃ অশ্বিনের মধ্যে কি আরও ক্রিকেট বাকি ছিল?

উঃ 2014 সালের পর বিরাট কোহলি কোথায় স্যুইং বোলিং খেলেছে। 2018 সালে ইংল্যান্ডে কোহলি খেলেছিল। ওকে আমি পেস বোলিং খেলতে দেখেছি। এখন নির্বোধের মত পেস বোলিং খেলছে। অথচ তাঁকে খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষ পাঁচ বছর দেখুন। কোথায় পারফরম্যান্স ? যা খুশি করছে। ওর জায়গা হারানোর কোনও ভয় নেই। যখন ইচ্ছে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে নিল। যখন ইচ্ছে হল এসে খেলল। ভারতীয় দল যেন ওর জমিদারি। আর একজন বোলার যে, 2012 সালে ইংল্যান্ড সিরিজ এবং এই বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো খেলতে পারেনি। বাকি সব সিরিজে অশ্বিন পারফরম্যান্স করেছে। তা সত্ত্বেও কাউকে যদি বসাতে হয় তাহলে অশ্বিনকেই বসানো হত। কেন বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মাকে বসানো হয় না ? কী করেছে এরা দুজন ? সবকিছু ঠিক চলেনি বলেই তো অশ্বিন অবসর ঘোষণা করেছে। না-হলে অবসর নিতে হলে মেলবোর্ন এবং সিডনি টেস্টের পরে নিত। নিশ্চয়ই অশ্বিনকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী দুটো টেস্টেও ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় তুমি নেই। শেষ ছয়বছর অনেক কিছু সহ্য করেছে। ওর ফর্ম এতটা খারাপ নয় যে, তড়িঘড়ি অবসর নিতে হবে। আরও এক থেকে দেড়বছর পরে অবসর নিতে পারত। ওই পরিমাণ ক্রিকেট এখনও অশ্বিনের মধ্যে রয়েছে।

প্রঃ নিশ্চয়ই কোচ-অধিনায়ককে সিদ্ধান্তটা জানিয়েছিল?

উঃ গৌতম গম্ভীর কে ? কী এমন করেছে ? রাজনৈতিক সমর্থন না-থাকলে ভারতীয় দলের কোচের চেয়ারে থাকত না। অশ্বিন পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিল। বুদ্ধিমান ছেলে, ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরে দাঁড়ানোর।

প্রঃ সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে আপনার সঙ্গে কথা হয়নি?

উঃ না, আমি জানতাম না। আমি তো জেনে বিস্মিত হয়েছি। সকলের কাছেই পুরো বিষয়টা বিস্ময় লেগেছে। সবকিছু ঠিক চলছে না। না-হলে সিরিজের আগে দেশেই অবসর নিত। সিরিজের মাঝখানে নয়। সবকিছু সহ্য করার একটা সীমা থাকে।কোনও চাপে পড়ে নয়, বীতশ্রদ্ধ হয়ে ছেড়ে দিল।

প্রঃ আপনার মতে কি ভারতীয় দলের সাজঘরে একটা ভুল হয়েই চলেছে?

উঃ বড় বড় ব্যাটসম্যান যাঁদের বলা হচ্ছে, তাঁদের কেউ টেস্ট খেলার মত ব্যাটারই নয়। ভারতীয় ক্রিকেটের ফ্যাব ফাইভের পরে কিছুটা কোহলি। বাকিরা কেউ টেস্ট খেলার মত নেই। চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানের কেরিয়ার এরাই শেষ করেছে। কোনওকিছুই ঠিক চলছে না। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরাও নির্বোধ। এই চক্র ভেঙে ফেলা উচিত। খুব বেশি হলে ম্যাচ হারবে। কোথায় বা জিতছে ? জুনিয়রদের খেলিয়ে তৈরি করা উচিত এখন ৷

আরও পড়ুন:

ABOUT THE AUTHOR

...view details