কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্ট নির্বিষ ড্র'য়ের শেষে গাব্বায় চমক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর। টেস্টে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটশিকারির অবসর ঘোষণা ভারতীয় সাজঘরকে বেআব্রু করে দিয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চাও ৷ এপ্রসঙ্গে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অশ্বিনের প্রাক্তন কোচ সুনীল সুব্রহ্মণিয়ামের সঙ্গে। ছাত্রের সিদ্ধান্তে বিস্মিত তিনি। একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও। তিনি মনে করেন, টিম ম্যানেজমেন্টের খামখেয়ালিপনায় বীতশ্রদ্ধ হয়েই অশ্বিন ছেড়ে দিল। তিনি আঙুল তুলেছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং গৌতম গম্ভীরের দিকেও।
প্রঃ রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন, আপনার প্রতিক্রিয়া?
উঃ আমি বিস্মিত, চমকে গিয়েছি। 2025 থেকে 2027 সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে দেশের মাটিতে 14টি টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। সিদ্ধান্তটা তারপর নিতে পারত। একটা কথা জেনে রাখুন উপরওয়ালা ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি খুব দয়াবান। হরভজন সিংয়ের পর অশ্বিন চলে এসেছিল। ন'শো উইকেট রয়েছে দু'জনের ঝুলিতে। কিন্তু উপরওয়ালা এতটাও দয়াবাল হবেন না যে, খুব তাড়াতাড়ি অশ্বিনের মাপের বোলার চলে আসবে। ভারতকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে এই মাপের স্পিনার পাওয়ার জন্য।
প্রঃ ভারতীয় বোলিং আক্রমণ হঠাৎ করেই কি দুর্বল হয়ে পড়ল?
উঃ দুঃখের বিষয় হল ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দলের প্রধান স্পিনার চলে যাওয়ার পর রবীন্দ্র জাদেজাকে দিয়ে অভাব পূরণ করার চেষ্টা হবে। তবে আমি জানি না, জাড্ডু কতদিন খেলা চালিয়ে যাবে। কুলদীপ এবার অনেক সুযোগ পাবে। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর রাখি। অশ্বিন, ভাজ্জির অর্ধেক তো দূরে থাক, সিকিভাগ দক্ষতার স্পিনার নেই দলে। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। তেমনই বোলারদের ক্ষেত্রেও ৷ কপিলদেবের পরে ওর মত বোলার আসেনি। স্পিনারদের মধ্যে দেখুন, কুম্বলের পর ভাজ্জি এসেছে। তারপর অশ্বিন এসেছে। এবার এই মাপের স্পিনার পেতে সময় লাগবে।
প্রঃ সিরিজের মাঝে অবসর। কীভাবে দেখছেন?
উঃ কিছু তো একটা হয়েছে। কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সরকারিভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে যেসব বক্তব্য পেশ হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে সব ছবি আসছে তাতে আসল ঘটনাটা ঠিকমতো প্রকাশ হচ্ছে না বলে মনে হয়। তুমি যদি অবসর নেবে তাহলে সিরিজের আগে নিতে পারতে, কিংবা সিরিজের পরে এসে ঘোষণা করতে পারতে। ভারতীয় দলে এটা কী হচ্ছে ? কখনও অশ্বিন খেলছে, কখনও ওয়াশিংটন আবার কখনও জাদেজা খেলছে। মিউজিক্যাল চেয়ারের মত বিষয়টি হচ্ছে। আপনার দলে পেস বোলিং অনভিজ্ঞ। সেখানে দু'জন অভিজ্ঞ বোলার বুমরা এবং অশ্বিনকে রেখেই তো বোলিং আক্রমণ গড়ে উঠবে। আমিও দলের সঙ্গে ছিলাম। আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাটসম্যানের উপর জোর দিচ্ছে। কাজ চালানোর মত বোলার দিয়ে বোলিংটা করাতে চাইছে। কিন্তু কাজ চালানোর মত বোলার দিয়ে আক্রমণ সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাদের উপর নির্ভর করে আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন না। তৃতীয় পেসার হিসেবে হর্ষিত রানা, আকাশদীপ চলবে না। আমি হলে বুমরা, অশ্বিনকে রেখে বাকিদের মধ্যে থেকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজাতাম। এটা 2018-19 সালের মত নয় যে, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, বুমরা এবং উমেশ যাদব রয়েছে। সেই সময় ভয়ঙ্কর ছিল বোলিং আক্রমণ। ওই সময় তুমি অশ্বিনকে বসিয়ে রেখেছ। এখনও তুমি অশ্বিনকে বসিয়ে রাখছ। একজন বিশ্বমানের বোলারের পক্ষে কতদিন এই বিষয়টা মেনে নেওয়া সম্ভব। কোথাও একটা তো ভুল হয়েইছে।