পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / politics

সাবিত্রী মিত্রের উপর হামলার চেষ্টা! বারবার কেন টার্গেট তৃণমূল নেতারা, উঠছে প্রশ্ন - TRINAMOOL

সাম্প্রতিক সময়ে দু’জন তৃণমূল নেতা খুন হয়েছেন ৷ তার পর বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রর উপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ সামনে আসতেই চিন্তায় শাসক দল ৷

TRINAMOOL
সাবিত্রী মিত্রের উপর হামলার চেষ্টা! বারবার কেন টার্গেট তৃণমূল নেতারা, উঠছে প্রশ্ন (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 3, 2025, 7:46 PM IST

মালদা, 3 ফেব্রুয়ারি: শুরুটা হয়েছিল দুলাল সরকারের খুন দিয়ে ৷ তারপর বৈষ্ণবনগরে দলীয় কর্মী খুন ৷ সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে কালিয়াচকে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে খুনের উদ্দেশ্যে হামলা ৷ শেষ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বেশি রাতে ৷

মানিকচক থেকে মালদা শহরে ফেরার সময় তাঁকে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র ৷ প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের উপর দুষ্কৃতীদের এই হামলা কেন ? নাকি এসবই দলীয় কোন্দলের ফসল ৷ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মোথাবাড়ির বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনও ৷

সাবিত্রী মিত্রের উদ্যোগে মানিকচকের এনায়েতপুরে একটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল ৷ রবিবার ছিল ফাইনাল খেলা ৷ তার বন্দোবস্ত খতিয়ে দেখতে শনিবার রাতে মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, “মাঠ থেকে বেরোতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল ৷ রাস্তায় চণ্ডীপুর ব্রিজের কাছে একটি চারচাকার গাড়ি উলটোদিক থেকে আমাদের গাড়িকে মুখোমুখি ধাক্কা মারার চেষ্টা করে ৷ আমার চালক কোনোভাবে গাড়িকে রাস্তার পাশে নিয়ে যায় ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা নেহাতই দুর্ঘটনা ৷ তাই আমরা ফের মালদার উদ্দেশে রওনা দিই ৷ কিন্তু ইংরেজবাজার থানার মিলকির কাছে ওই গাড়িটিকে ফের দেখি ৷ গাড়িটি আমাদের ওভারটেক করার পর আমার গাড়ির সামনে চলতে শুরু করে ৷ তখনই বুঝতে পারি, ওই গাড়িটি আমাদের গাড়িকে দুর্ঘটনার মধ্যে ফেলার চেষ্টা করছে ৷ আমি মানিকচক থানা আর মিলকি পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করে সমস্ত ঘটনা জানাই ৷’’

তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র (নিজস্ব ছবি)

এই নিয়ে সাবিত্রী মিত্রের আরও দাবি, ‘‘পুলিশ আমাদের এসকর্ট করে শহরে পৌঁছে দেয় ৷ 40 বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমি নিশ্চিত, সেদিন কেউ বা কারা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল ৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনও শত্রু নেই ৷ আমি ব্যবসাও করি না ৷ তবু আমাকে কেন টার্গেট করা হয়েছে, তা জানি না ৷ আমি পুলিশ সুপারকে ওই গাড়ির নম্বর দিয়েছি ৷ তাঁরা গাড়িটির খোঁজ চালাচ্ছেন ৷”

তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের উপর বারবার আক্রমণের ঘটনায় দুশ্চিন্তায় মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ৷ তিনি বলেন, “বারবার আমাদের নেতা-নেত্রীদের উপর হামলার ঘটনা কেন ঘটছে, সেটাই বুঝতে পারছি না ৷ বিষয়টি সত্যিই আমাদের ভাবাচ্ছে ৷ পুলিশকে বলব, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক ৷”

তৃণমূলের একটি মহল থেকে এসব ঘটনার পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করা হলেও তা মানতে নারাজ দলের জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু ৷ তাঁর বক্তব্য, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই ৷ আমরা সবাই একজোট হয়েই কাজ করি ৷ পুলিশ দোষীদের খুঁজে বের করে যথাযথ পদক্ষেপ করুক ৷ সেটাই দাবি করছি ৷”

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলাস্তরের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, “শনিবার রাতেই ঘটনাটি শুনতে পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু আমি সাবিত্রীদিকে আর ফোন করিনি ৷ এনিয়ে বেশি খোঁজখবর নিতে গেলে আমি নিজেই সন্দেহভাজনদের তালিকায় পড়ে যাব ৷ এই সময় পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না ৷ কখন কার উপর কোপ পড়ে বলা যায় না ৷”

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “বিধায়কের দেওয়া তথ্য ধরে সন্দেহভাজন গাড়িটির খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে ৷ এখনও গাড়িটির খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত জারি রয়েছে ৷”

এই ঘটনা নিয়ে সাবিত্রী বিরোধী শিবিরের বক্তব্যও ফেলে দেওয়ার মতো নয় বলে মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল ৷ তাদের বক্তব্য, সাবিত্রী মিত্র দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ ৷ তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন ৷ কিন্তু দিন দিন তাঁর জনপ্রিয়তা কমেছে ৷ দলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমেছে ৷ এর জন্যই এখন তাঁকে দলের তেমন কোনও সাংগঠনিক পদে রাখা হয়নি ৷

তাদের আরও বক্তব্য, মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্র এলাকাতেও আগের মতো তাঁর জনপ্রিয়তা নেই ৷ মুষ্টিমেয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে চলেন ৷ এতে সেখানেও তাঁর একাধিক বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে ৷ তার আগে নিজেকে লাইমলাইটে নিয়ে যেতে এই হামলার কাহিনি তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও হতে পারে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details