রাজনাথ-গড়করির মতো ভদ্রলোক প্রধানমন্ত্রী হলে আপত্তি ছিল না: মমতা দুর্গাপুর, 24 এপ্রিল: রাজনাথ সিং বা নীতিন গড়করির মতো ভদ্রলোক দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে কোনও আপত্তি ছিল না ৷ বুধবার এই ভাষাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সঙ্গে একসময়ে 'ভালো সম্পর্ক' থাকা রাজনাথ সিং রাজ্যে প্রচারে এসে সিএএ চালু করা প্রসঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রীকে ৷ বুধবার তারই জবাব দিয়ে রাজনাথকে 'ভদ্রলোক' বলে মোদিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
উল্লেখ্য, চর্চিত আছে যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর ৷ এর আগে, রাজ্যে এলেও রাজনাথের গলায় মমতার বিরোধিতা বা মুখ্যমন্ত্রীর গলায় রাজনাথের নিন্দাসূচক মন্তব্য খুব-একটা শোনেনি রাজনৈতিক মহল ৷ তবে গত রবিবার রাজ্যে প্রচারে এসে সিএএ-র বিরোধিতা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷ তিনি বলেন, "সিএএ আইন বন্ধ করার অধিকার কোনও রাজ্যের নেই ৷"
রাজনাথের এই কথার জবাব দিলেও তাঁর উদ্দেশে তোপ দাগতে দেখা গেল না মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ বরং রাজনাথকে ভদ্রলোকের তকমা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছেন মমতা ৷
বুধবার দুপুরে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ও বর্ধমান পুর্ব কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী ডা. শর্মিলা সরকারের সমর্থনে জনসভায় গিয়ে মমতা বলেন, "পেপারে দেখলাম, 'কোই মাইকা লাল হ্যায় যো ক্যা রোকেগা' - এ কথা বলেছেন রাজনাথ বাবু ৷ আমি তাঁকে প্রণাম জানিয়ে বলব, আমরা রুখব । ক্যা, এনআরসি হতে দেব না আমরা । সকাল-বিকেল মোদিকে প্রণাম করে নিজেদের চেয়ার বাঁচান । আপনিও তো আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, কেউ মানা করেনি । নীতিন গড়করিও হতে পারতেন, কোনও আপত্তি ছিল না । যে ভদ্রলোক ভদ্রতা করবে ।"
এ কথা বলেই মোদিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, "যাঁরা দাঙ্গা করে মানুষ মেরেছেন, তাঁদের হাতগুলো খুনে লাল হয়ে গিয়েছে । লাল থেকে তৈরি হয়েছে গেরুয়া । সাধু সন্তরাও গেরুয়া পরেন না । যাঁরা পরছেন তাঁরা নিজেরা কষ্ট পাচ্ছেন । কারণ সমস্ত কিছুই এখন গেরুয়া করে দিয়েছে ওঁরা । পারলে আকাশটাকে আর ধানগুলোকেও গেরুয়া করে দিত ।"
বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার আরও অভিযোগ, "রেলওয়ে কর্মী, বিএসএফ, সিআরপিএফকে বিজেপি বানিয়ে দিয়েছে । আর বিজেপিকে ভোট না-দিলে গুলি করার কথা বলা হচ্ছে বিএসএফকে । উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট আর মেখলিগঞ্জের মানুষ সেই অভিযোগ করেছেন আমার কাছে ৷"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা করেন গলসি বিধানসভার বুদবুদের তিলডাঙ্গা ময়দানে । এই জনসভায় যোগ দেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ, বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী শর্মিলা সরকার-সহ রাজ্যের তিন মন্ত্রী ও জেলা সভাপতি । তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেছেন, "কীর্তি আজাদ আমার ঘরে আসত । আমার সঙ্গে ভাই-বোনের সম্পর্ক । গলসীর মানুষ বেশ কয়েকজন তৃণমূলের নেতার উপর বিরক্ত ৷ কিন্তু তৃণমূলের উপর বা তাঁর উপর বিরক্ত নন, তৃণমূলের প্রার্থীদের উপরও বিরক্ত নন । জিতবেই নির্বাচনে । আর এখানে যে দাঁড়িয়েছে বিজেপির, তাঁর দল তাঁকে মেদিনীপুরে টিকিট দেয়নি । প্রতিদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলছে, তৃণমূলকে ডান্ডা মারো, তৃণমূলকে লাঠি মারো । এটা কোনও মুখের ভাষা হতে পারে ! একটা রাজনৈতিক দল যখন এ সব কথা বলে তখন বুঝবেন সেই দল দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে ।"
আরও পড়ুন:
- সিএএ নিয়ে মমতাকে আক্রমণ, মোদি জমানায় উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন রাজনাথ
- সংস্কৃতির বাংলা মমতা-জমানায় 'সাম্প্রদায়িক', জলঙ্গির সভায় অভিযোগ রাজনাথের
- ঊনিশের তুলনায় উত্তরপ্রদেশে এবার কম আসন পাবে বিজেপি, দাবি মমতার