বারাসত, 23 মার্চ: পরপর তিনবারের সাংসদ তিনি । 2009 থেকে 2024, একটানা 15 বছর সাংসদ থাকায় তাঁর উপর আস্থাও বেড়েছে দলের । স্বভাবতই প্রার্থী পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে । চতুর্থবারের জন্য ফের তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে বারাসত লোকসভা আসন থেকে । তিনি শাসক দলের মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।
বামেদের অপেক্ষা না করেই আইএসএফ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে এই আসনে । তবে, বামেদের আরেক শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক অবশ্য প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি এখনও অবধি । চূড়ান্ত হয়নি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীর নামও । ফলে, ভোট রাজনীতির লড়াইয়ে বারাসত আসনে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী, দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।
এবারের ভোট-যুদ্ধ নিয়ে কী ভাবছেন তিনি ? লড়াই কতটা কঠিন হবে ? নাকি বিরোধীদের সঠিক ‘প্লেয়ারের’ অভাবে এবারও তিনি ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবেন ? তারই যাবতীয় প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর তিনি দিয়েছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে । একান্ত সাক্ষাৎকারে ঠিক কী বলেছেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রইল তারই প্রশ্নোত্তর পর্ব ।
প্রশ্ন: দিদি আপনি তিনবারের সাংসদ ! পরপর তিনবার সাংসদ হওয়ায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কিন্তু বাড়ছে দিনদিন । এই নির্বাচনী লড়াইকে কিভাবে দেখছেন ? লড়াই কি কোথায়ও কঠিন হতে পারে ?
উত্তর: নির্বাচনী যুদ্ধকে সবসময় লড়াই হিসেবেই দেখতে হয় । এর কোনও হেরফের হয় না । 2009 সালে এই কেন্দ্রে আমি যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, তখন আমাকে লড়াই করতে হয়েছে বামশক্তির বিরুদ্ধে । সেই লড়াইয়ে মানুষের সমর্থন পেয়ে জয়ী হই আমি । সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই সংসদীয় এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিতে হয়েছে । কারণ, বাম আমলে না ছিল এখানে পাকা রাস্তা, পরিশ্রুত পানীয় জল । আর না ছিল নিকাশিনালা, পর্যাপ্ত আলো ।
কোনও উন্নয়নই হয়নি সেই সময় । সেগুলো সবই এখন পূরণ হয়েছে । বারাসত সংসদীয় এলাকার কোনও রাস্তাঘাট কাঁচা নেই । উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম হয়েছে । এমনকি ঘরে ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় এখন আর কোনও মানুষকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে হয় না । এখানে থেকেই তাঁরা যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন ।
ফলে, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ ঘটেছে । 50 বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি । আমার বাবাও এই এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছেন । তাই, আমাদের উপর ভরসা রয়েছে মানুষের । যখনই বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে আমি লড়াই করতে নেমেছি, তখনই মানুষের আশীর্বাদ-দোয়া পেয়ে এসেছি ।
প্রশ্ন: 2009 এবং 2014-এর লোকসভা নির্বাচনে আপনার সঙ্গে মূলত লড়াই হত বামেদের । কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে পট পরিবর্তন হতে দেখা গেল । বামেরা তৃতীয় স্থানে চলে গেল ! মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এল বিজেপি । যদিও বিজেপি কিংবা বামেরা এখনও অবধি আপনার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি । এটাকে আপনি কিভাবে ব্যাখা করবেন ?
উত্তর: আগে থেকে কিভাবে বলছেন আপনি ওরা (বামেরা) তৃতীয় স্থানে চলে গেল । পুরো পশ্চিমবঙ্গে এখন তাঁদের সাত থেকে আট শতাংশ ভোট । তাই, তৃতীয় অথবা চতুর্থ এভাবে ব্যাখা করবেন না । ওদের বাংলার মানুষ পরিত্যাগ করেছে । ছন্নছাড়া দল । তাই, তাঁরা এখনও প্রার্থী দিতে পারেনি । তাঁদের বুথে সংগঠন নেই । আমি কি করতে পারি তার জন্য !
প্রশ্ন: বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করতে না পারা অথবা তাঁদের এই ছন্নছাড়া অবস্থা । কোথাও কি আপনাকে লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে রাখছে ?
উত্তর: আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের জন্য করেছেন এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে বাংলার মানুষ নিশ্চিতভাবেই তৃণমূলের পাশে রয়েছেন । আমি যেভাবে আমার সংসদীয় এলাকায় পড়ে থেকে মানুষের স্বার্থে কাজ করে এসেছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি এবারও বিপুল সমর্থন পাব মানুষের ।
প্রশ্ন: তাহলে কি এবারও আপনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি নাকি অন্য কোনও শক্তি উঠে আসবে ?