হায়দরাবাদ, 5 মার্চ: কংগ্রেস ক্রমশ সংকট থেকে সংকটতর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে ৷ এই ধ্বংসের পথ তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছে ৷ মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও তাদের আচরণে ধ্বংসাত্মক রূপ প্রকাশ পাচ্ছে ৷ ফলে তাদের সমর্থন করা দিনদিন মানুষের কাছে কঠিন হয়ে পড়ছে ৷ দেখে মনে হচ্ছে যে কংগ্রেস বোধহয় নিজের মৃত্যুকামনা করে অপেক্ষায় রয়েছে ৷
উদাহরণ হিসেবে হিমাচল প্রদেশের কথাই ধরা যাক ৷ সেখানে সাম্প্রতিক রাজ্যসভার নির্বাচনে দলের হুইপ অমান্য করে ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক বিজেপিকে ভোট দেন ৷ ফলে হেরে যান কংগ্রেসের প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভি ৷ উত্তরপ্রদেশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৷ সেখানে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সমাজবাদী পার্টির (যাদের ভরসায় ওই রাজ্যে দু-একটি আসন জয়ের স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস) হাফ ডজনের বেশি বিধায়ক বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বিজেপিকে রাজ্যসভায় একটি অতিরিক্ত আসনে জয় পেতে সাহায্য করেছেন ৷
তবে হিমাচল প্রদেশে হার কংগ্রেসের কাছে অনেক বেশি অস্বস্তির ৷ কারণ, সেখানে তারা চাইলে এই হার ঠেকাতে পারত ৷ কিন্তু পারেনি ৷ হারের আশঙ্কার কথা একজন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জানালেও কংগ্রেসের হাইকমান্ড কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি৷ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা আনন্দ শর্মার রাজ্যসভার সাংসদ পদের মেয়াদ সবেমাত্র শেষ হয়েছে ৷ তিনি আরও একবার প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন ৷ তিনি অভিষেক মনু সিংভি হিমাচল থেকে প্রার্থী করার প্রতিবাদ করেন ৷ তিনি জানান, হিমাচলে এর আগে বাইরে থেকে কাউকে কংগ্রেসের তরফে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি ৷ সেই কারণেই ছ’জন বিধায়ক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিয়েছেন ৷
হিমাচলের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুকে যে কংগ্রেসের বিধায়করাই পছন্দ করছেন না, এটা এখন সকলেরই জানা ৷ 14 মাসে আগে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়েছিল কংগ্রেস ৷ কিন্তু সেই সময়ই তাঁর নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশ ৷ প্রয়াত বীরভদ্র সিংয়ের স্ত্রী প্রতিভা সিং (কংগ্রেস সাংসদ ও হিমাচলের প্রদেশ সভানেত্রী) অথবা তাঁর ছেলে বিক্রমাদিত্য সিংকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছিলেন অনেকে ৷ কিন্তু সেই বিষয়টি আমল না দিয়েই কংগ্রেস সুখবিন্দর সিং সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী করে ৷
ফলে শুরু থেকেই বারবার বিধায়কদের একাংশের বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে সুখুকে ৷ যা প্রকাশ্যে এসেছে রাজ্যসভার ভোটে৷ ছ’জন বিধায়ক বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় বিজেপি প্রার্থী হর্ষ মহাজন (সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন) ও কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভি, দু’জনেই 34 ভোট পান ৷ শেষে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, দুই প্রার্থীর নাম রেখে ড্র করা হয় ৷ সেখানে বিজেপি প্রার্থীর নাম বেরিয়ে আসে ৷ ফলে সিংভির হার হয়৷ হিমাচল বিধানসভায় সদস্য় সংখ্যা 68 ৷ কংগ্রেসের 40 জন বিধায়ক ছিল ৷ বিজেপির 25 জন ৷ আর তিন জন নির্দল বিধায়ক ৷ ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক ও তিনজন নির্দলের সমর্থনেই বিজেপি 34 ভোট পেয়েছিল ৷ অন্যদিকে ছ’জন বিধায়ক ভোট না দেওয়ায় কংগ্রেসও 34 ভোট পায় ৷
এই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়ে যায় সুখু সরকার ৷ পরিস্থিতি সামলাতে ভোটের পরদিন অধিবেশন বসতেই 15 জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয় ৷ ধ্বনি ভোটে বাজেট পাশ করানো হয় ৷ তড়িঘড়ি অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয় ৷ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা সিমলায় পৌঁছান ৷ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ এরই মধ্য়ে ছ’জন বিদ্রোহী বিধায়কের পদ খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন ৷ তাঁদের অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কারের পদ্ধতিকে এড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশও পেয়ে যেতে পারেন ৷ অন্যদিকে সুখু সরকারের পূর্তমন্ত্রী বিক্রমাদিত্য সিং প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেন ৷ তিনি মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দেন ৷ তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৷ তাঁর অভিযোগ, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না ৷