পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

রাজ্যসভার ভোটে প্রমাণ মিলল লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের জয়ের সম্ভাবনা কতটা রয়েছে - রাজ্যসভার ভোট

Lok Sabha Elections 2024: সাম্প্রতিক রাজ্যসভা নির্বাচনে অন্দরের দ্বন্দ্বের জেরে হিমাচল প্রদেশে জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের ৷ অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির বিধায়কদের বিদ্রোহ বিজেপিকে একটি অতিরিক্ত আসন জিততে সাহায্য করেছে ৷ এর থেকেই আভাস মিলেছে যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের কী অবস্থা হতে পারে ? লিখেছেন বীরেন্দ্র কাপুর ৷

Congress
Congress

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 5, 2024, 5:49 PM IST

হায়দরাবাদ, 5 মার্চ: কংগ্রেস ক্রমশ সংকট থেকে সংকটতর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে ৷ এই ধ্বংসের পথ তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছে ৷ মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও তাদের আচরণে ধ্বংসাত্মক রূপ প্রকাশ পাচ্ছে ৷ ফলে তাদের সমর্থন করা দিনদিন মানুষের কাছে কঠিন হয়ে পড়ছে ৷ দেখে মনে হচ্ছে যে কংগ্রেস বোধহয় নিজের মৃত্যুকামনা করে অপেক্ষায় রয়েছে ৷

উদাহরণ হিসেবে হিমাচল প্রদেশের কথাই ধরা যাক ৷ সেখানে সাম্প্রতিক রাজ্যসভার নির্বাচনে দলের হুইপ অমান্য করে ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক বিজেপিকে ভোট দেন ৷ ফলে হেরে যান কংগ্রেসের প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভি ৷ উত্তরপ্রদেশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৷ সেখানে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সমাজবাদী পার্টির (যাদের ভরসায় ওই রাজ্যে দু-একটি আসন জয়ের স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস) হাফ ডজনের বেশি বিধায়ক বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বিজেপিকে রাজ্যসভায় একটি অতিরিক্ত আসনে জয় পেতে সাহায্য করেছেন ৷

তবে হিমাচল প্রদেশে হার কংগ্রেসের কাছে অনেক বেশি অস্বস্তির ৷ কারণ, সেখানে তারা চাইলে এই হার ঠেকাতে পারত ৷ কিন্তু পারেনি ৷ হারের আশঙ্কার কথা একজন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জানালেও কংগ্রেসের হাইকমান্ড কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি৷ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা আনন্দ শর্মার রাজ্যসভার সাংসদ পদের মেয়াদ সবেমাত্র শেষ হয়েছে ৷ তিনি আরও একবার প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন ৷ তিনি অভিষেক মনু সিংভি হিমাচল থেকে প্রার্থী করার প্রতিবাদ করেন ৷ তিনি জানান, হিমাচলে এর আগে বাইরে থেকে কাউকে কংগ্রেসের তরফে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি ৷ সেই কারণেই ছ’জন বিধায়ক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিয়েছেন ৷

হিমাচলের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুকে যে কংগ্রেসের বিধায়করাই পছন্দ করছেন না, এটা এখন সকলেরই জানা ৷ 14 মাসে আগে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়েছিল কংগ্রেস ৷ কিন্তু সেই সময়ই তাঁর নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশ ৷ প্রয়াত বীরভদ্র সিংয়ের স্ত্রী প্রতিভা সিং (কংগ্রেস সাংসদ ও হিমাচলের প্রদেশ সভানেত্রী) অথবা তাঁর ছেলে বিক্রমাদিত্য সিংকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছিলেন অনেকে ৷ কিন্তু সেই বিষয়টি আমল না দিয়েই কংগ্রেস সুখবিন্দর সিং সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী করে ৷

ফলে শুরু থেকেই বারবার বিধায়কদের একাংশের বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে সুখুকে ৷ যা প্রকাশ্যে এসেছে রাজ্যসভার ভোটে৷ ছ’জন বিধায়ক বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় বিজেপি প্রার্থী হর্ষ মহাজন (সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন) ও কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভি, দু’জনেই 34 ভোট পান ৷ শেষে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, দুই প্রার্থীর নাম রেখে ড্র করা হয় ৷ সেখানে বিজেপি প্রার্থীর নাম বেরিয়ে আসে ৷ ফলে সিংভির হার হয়৷ হিমাচল বিধানসভায় সদস্য় সংখ্যা 68 ৷ কংগ্রেসের 40 জন বিধায়ক ছিল ৷ বিজেপির 25 জন ৷ আর তিন জন নির্দল বিধায়ক ৷ ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক ও তিনজন নির্দলের সমর্থনেই বিজেপি 34 ভোট পেয়েছিল ৷ অন্যদিকে ছ’জন বিধায়ক ভোট না দেওয়ায় কংগ্রেসও 34 ভোট পায় ৷

এই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়ে যায় সুখু সরকার ৷ পরিস্থিতি সামলাতে ভোটের পরদিন অধিবেশন বসতেই 15 জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয় ৷ ধ্বনি ভোটে বাজেট পাশ করানো হয় ৷ তড়িঘড়ি অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয় ৷ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা সিমলায় পৌঁছান ৷ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ এরই মধ্য়ে ছ’জন বিদ্রোহী বিধায়কের পদ খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন ৷ তাঁদের অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কারের পদ্ধতিকে এড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ তাঁরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশও পেয়ে যেতে পারেন ৷ অন্যদিকে সুখু সরকারের পূর্তমন্ত্রী বিক্রমাদিত্য সিং প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেন ৷ তিনি মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দেন ৷ তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৷ তাঁর অভিযোগ, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না ৷

কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব হিমাচলে রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করেছেন বিজেপিকে ৷ যদিও তাদের সেই অভিযোগের কোনও যৌক্তিকতা নেই ৷ কারণ, সুখুকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি বেছে দেয়নি ৷ প্রতিভা সিং বা বিক্রমাদিত্য সিং-কে নিয়ে যে দাবি কংগ্রেসের অন্দরে উঠেছিল, তা কংগ্রেসই অগ্রাহ্য করেছিল ৷ যদিও তাঁরা বারবার বুঝিয়েছেন হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় হয়েছে প্রয়াত রাজা বীরভদ্র সিংয়ের জনপ্রিয়তার জন্য ৷ তাছাড়া আনন্দ শর্মার সাবধানবাণী অগ্রাহ্য করে হিমাচলের বাইরের কাউকে রাজ্য়সভার ভোটে প্রার্থী করে কংগ্রেস ৷

আপাতত হয়তো সংকট থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়েছে কংগ্রেস ৷ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্রমাদিত্য সিংকে মন্ত্রিত্ব না ছাড়ার বিষয়ে হয়তো রাজি করাতে পেরেছেন ৷ তার পরও সংকট কিন্তু কেটে যায়নি ৷ সামনেই লোকসভা নির্বাচন৷ হিমাচল প্রদেশে চারটি আসন রয়েছে ৷ তার মধ্যে একটিতেও যদি কংগ্রেস জিততে পারে, সেটা মিরাকলই হবে ৷

অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে রাজ্যসভার নির্বাচনে কংগ্রেস ছিল ৷ কিন্তু তাদের জোটসঙ্গী সমাজবাদী পার্টি ছিল ৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের দলের সঙ্গেই আসন সমঝোতা করেছে কংগ্রেস ৷ তারা 17টি আসনে লড়বে ৷ আর 63টি আসনে লড়বে সমাজবাদী পার্টি ৷ সেখানে রাজ্যসভার ভোটে সপার হাল হিমাচল কংগ্রেসের মতোই হয়েছে ৷ সপার সাতজন বিধায়ক বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন ৷ ফলে সেখানে লোকসভা নির্বাচনে সপার পাশাপাশি কংগ্রেসের অবস্থায় খারাপ হল ৷ বিশেষ করে আমেঠি ও রায়বরেলি নিয়ে কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ৷ কারণ, সপার বিদ্রোহী বিধায়করা সকলেই আমেঠি ও রায়বরেলি অঞ্চলের ৷

বিদ্রোহীরা অখিলেশের বিরুদ্ধে রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন ৷ সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়েই অখিলেশ এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ওই বিদ্রোহীদের ৷ যদিও যাদবরাও ভোট দেয় অখিলেশকে ৷ তারাও অখিলেশের আচরণে ক্ষুব্ধ ৷ ফলে এই টানাপোড়েন ইন্ডি জোটের জন্য শুভ নয় ৷ ফলে সমাজবাদী পার্টি আরও দুর্বল হলে আমেঠি ও রায়বরেলিতে গান্ধি পরিবারের কেউ ভোটে লড়তে চায়, তাহলে তাদের সমস্যা হবে ৷

এদিকে কেরালার যে কেন্দ্রে সাংসদ রাহুল গান্ধি, সেখানে বামেরা ইতিমধ্যে প্রার্থী দিয়েছেন ৷ সোনিয়া গান্ধি লোকসভা ছেড়ে রাজ্যসভার পথ দিয়ে সংসদে নিজের জায়গা সুনিশ্চিত করেছেন ৷ রাহুল গান্ধিও আমেঠি বা রায়বরেলি থেকে ভোটে লড়ার ঝুঁকি নেবেন না বলেই মনে হয় ৷ বরং তেলেঙ্গানার কোনও নিরাপদ আসন থেকে ভোটে জিতে তিনি আবার সাংসদ হতে চাইবেন ৷ গান্ধি পরিবারই যদি সুরক্ষিত আসনের সন্ধানের দেশের বিভিন্ন অংশে ঘুরতে থাকেন, তাহলে সেটা বিরোধী জোটের পক্ষে মোটেই সুখকর হবে না ৷

ফলে হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস ও উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি যে ধাক্কা খেল, তার আসল চিত্রটা লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর আরও স্পষ্ট হবে ৷ অন্যদিকে রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাও সেভাবে সাফল্য পায়নি ৷

আরও পড়ুন:

  1. কংগ্রেসের বিক্রমাদিত্য সিং কি বিজেপির পথে, সুখু সরকারের ‘বিদ্রোহী’ মন্ত্রীর দিল্লি সফর ঘিরে জল্পনা
  2. কংগ্রেস নয় সরকার চালান সুখুর বন্ধুরা! বিস্ফোরক হিমাচলের বিক্ষুব্ধ বিধায়ক
  3. রাজ্যসভা ভোটে সিংভির হারের দায় সুখবিন্দর সুখুর, জানালেন ডিকে শিবকুমার

ABOUT THE AUTHOR

...view details