হায়দরাবাদ, 4 জানুয়ারি: ইদানীং আমি একটা 'সুপ্রভাত' মেসেজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি ৷ খুব সকালে এই মেসেজটা এলে, বুঝতে পারি তিনি ভালো আছেন ৷ আর একটু দেরিতে এলে, তার অর্থটা দিনের শুরুটা ভালো হয়নি ৷ যদি কোনও মেসেজই না আসে, তাহলে আগের রাতটা প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে ৷ আমার দাদা ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন ৷ তাঁর পেটে এই মারণরোগ বাসা বেঁধেছে ৷ দাদার বয়স 60 বছরেরও বেশি ৷ তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যও এই যুদ্ধে সামিল হয়েছে ৷ দাদা কাশ্মীরি, তাই প্রতিদিন সবজি গোস্ত খেতে ভালোবাসতেন ৷ এখন তাঁকে গলা খাবার দেওয়া হয় ৷ কখনও কখনও দিনটা ভালো থাকলে, তিনি এই গলা খাবারটা হজম করতে পারেন ৷
আমি এরকম বহু ক্যানসার রোগীর লড়াই দেখেছি ৷ অনেকে এই রোগকে হারিয়ে জীবনে ফিরেছেন ৷ এমনকী সেই চিকিৎসদেরও দেখেছি, যাঁরা দিন-রাত শুধু এই নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন ৷ ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারের লোকজন যখন জানতে পারেন, মারণরোগ প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি এসেছে ৷ তখন তাঁদের মুখগুলো হঠাৎ কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাও দেখেছি ৷
এই সব দেখতে দেখতে একদিন আমার এক পুরনো বন্ধু প্রথিতযশা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সমীর কৌলকে জিজ্ঞেস করলাম, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত কিছু উন্নতি হয়েছে ৷ তাও ক্যানসারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কেন ? তিনি জানালেন, চিকিৎসা পদ্ধতি আগের থেকে উন্নত হয়েছে ৷ কিন্তু মানুষ যদি সেসব জানতে পারে, তবেই তা ফলপ্রসূ হবে ৷ আর বিশেষত ভারতের মতো দেশে এই আধুনিক চিকিৎসার খরচ অনেক, যা অনেকেই বহন করতে পারবে না ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই চিকিৎসার খরচ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা একটা চ্যালেঞ্জ ৷ এমনকী আমেরিকার মতো দেশেও মানুষ ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যেত পারে না ৷"
তাই ক্যানসারের মতো রোগ নিয়ে মানুষ যখন মজা করে, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না ৷ শনিবার এমনই একটা দিন ছিল ৷ একজন মডেল এতদিন নানারকম ভুলভাল কারণে খবরের শিরোনামে ছিলেন ৷ হঠাৎ জানা গেল, ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই খবরে আমি হতবাক ৷
খবরটা শুনে আমি ওই মডেলের ভিডিয়োগুলি দেখছিলাম ৷ আমার কেমন যেন সন্দেহ হল ৷ মনে হল, সার্ভিক্যাল ক্যানসারে মাত্র চারদিনের মাথায় কারও মৃত্যু হতে পারে না ৷ আমার এই সন্দেহ বন্ধুদেরও বললাম ৷ তবে এমন ঘটনায় আমার গুরু, যিনি আমার প্রথম বসও, তাঁর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে গেল ৷ বেশ কয়েক বছর আগে লিউকোমিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 54 ৷ প্রথম দিকেই ক্যানসার ধরা পড়েছিল ৷ কিন্তু এর কিছু পরেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷
আমার প্রথম বসের হৃদপিণ্ডের অবস্থা ভালো ছিল না ৷ তাই ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল ৷ এইমসের কার্ডিওলজিস্ট জানিয়েছিলেন, আমার বসের হৃদপিণ্ড খুবই দুর্বল ৷ তবে তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রবল ৷ তখন আমি কাশ্মীরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, তিনি ঠিক পারবেন ৷ এর কিছুদিন পর বসের প্রথম কেমোথেরাপি হল ৷ তার পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ তিনি নিজেই নিজের রক্ত জোগাড় করতে টুইটারে পোস্ট করছিলেন ৷ এরপর একদিন হঠাৎ মানুষটাই আর রইলেন না ৷ সব ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হল ৷ তাঁর হৃদপিণ্ড হার মানল ৷ চিকিৎসা ঠিক করে শুরু হওয়ার আগেই চলে গেলেন ৷
তাই পুনম পাণ্ডে যখন সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতার নামে এই মজাটা করলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তো তাঁর ভাগ্যও আমার বসের মতোই ৷ আজও মনে মনে অনুশোচনা হয়, হয়তো আমার বসকে প্রথমেই কেমো দেওয়ার সিদ্ধান্তটা না নিলেই হত ৷ ভেবেছিলাম, আমার গুরুর মতো মিস পাণ্ডেও কেমোথেরাপি নিতে পারেননি ৷ এটাও জানতামও না যে তিনি বেঁচে থাকার জন্য কী করেন, তবে আমার দিনটা এসব ভাবতে ভাবতেই নষ্ট হল ৷ পরের দিন সকালে তিনি যখন জানালেন, সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতামূলক প্রচারের নামে তিনি এই কাজ করেছেন আর লিখেছেন 'আমি বেঁচে আছি', তখন আরও বড় ধাক্কা লাগল ৷