পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

পামবান রেলসেতু: দেশের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্য বিস্ময় - PAMBAN RAILWAY BRIDGE

2.3 কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত পামবান রেলসেতুটি রামেশ্বরম দ্বীপ ও ভারতের বাকি অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে ।

ETV BHARAT
পামবান রেলসেতু (নিজস্ব চিত্র)

By Milind Kumar Sharma

Published : Oct 21, 2024, 7:01 PM IST

চেন্নাই, 21 অক্টোবর:বান্দ্রা-ওরলি সি লিংক (5.6 কিমি লম্বা, জলস্তরের 126 মিটার উপরে), হাজিরা ক্রিক ব্রিজ (1.4 কিমি লম্বা, জলস্তরের 25 মিটার উপরে), ভাইজাগ-সিথাম্পেটা রেলওয়ে ব্রিজ (2.3 কিমি লম্বা, জলস্তর থেকে 20 মিটার উপরে) এবং নির্মীয়মাণ মুম্বই ট্রান্স হারবার লিংক (21.8 কিমি দীর্ঘ, জলস্তর থেকে 25 মিটার উপরে), চন্দ্রভাগা নদীর রেলসেতু (1.3 কিমি দীর্ঘ, জলস্তর থেকে 359 মিটার উপরে) ইত্যাদির মতো ভারতীয় সেতুগুলি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্থাপত্য ক্ষমতার উজ্জ্বল নিদর্শন ।

অগণিত প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ এবং এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও এই নির্মাণগুলি প্রকৌশলগত উৎকর্ষতা এবং উদ্ভাবনী নকশার পরিচায়ক ৷ জাতীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য এই সমস্ত নির্মাণ বা প্রকল্পগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ এগুলির মধ্যে অন্যতম তামিলনাড়ুতে অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় পামবান রেলসেতু এই ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে, কারণ এটি ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রের একটি অসাধারণ কৃতিত্ব, যা রামেশ্বরম শহরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে ।

পামবান রেলসেতু (নিজস্ব চিত্র)

2.3 কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত এই সেতুটি রামেশ্বরম দ্বীপ এবং মূল ভূখণ্ডের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করেছে । 1914 সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ পণ্য ও পরিষেবা পরিবহণের সুবিধার্থে এই সেতুর নির্মাণ করেছিল ৷ জার্মান ইঞ্জিনিয়ারদের ডিজাইন করা এই সেতু সম্পূর্ণরূপে চালু হতে প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগে । এটি সেই সময়ের অন্যতম দীর্ঘতম সমুদ্রসেতু ছিল ৷

সেতুটিতে 15 মিটার অন্তর অন্তর 145টি কংক্রিটের থাম রয়েছে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 12 মিটার উপরে তৈরি হওয়ায় তার নীচ দিয়ে জাহাজ এবং নৌকা চলাচলেরও অনুমতি রয়েছে । সেতুর সুই জেনিয়াস লিফটিং স্প্যান জাহাজগুলিকে অতিক্রম করার অনুমতি দেয় ৷ যা এই সেতুকে প্রযুক্তিগত নকশা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি অসাধারণ কীর্তি হিসেবে তুলে ধরেছে । এটি শুধুমাত্র বাণিজ্য, ব্যবসা এবং অর্থনীতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বিখ্যাত রামেশ্বরম মন্দিরে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের চলাচলের পথও মসৃণ করে এই রেলসেতু ৷

তামিলনাড়ুতে পামবান রেলসেতু (নিজস্ব চিত্র)

সেতুটি পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং সামুদ্রিক খাবার, টেক্সটাইল ও অন্যান্য পণ্য পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে সম্প্রতি পামবান রেলসেতু ক্ষয়, কাঠামোগত ক্ষতি, ফাটল ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বহুবিধ সমস্যার কারণে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ।

এই উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় রেলওয়ে বেশকিছু সময়োপযোগী উদ্যোগ এবং সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে লিফটিং স্প্যান প্রতিস্থাপন করা ও সেতুর ভিত শক্তিশালী করার জন্য পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে ।

পামবান রেলসেতু (নিজস্ব চিত্র)

পামবান রেলসেতু যে একটি আইকনিক ল্যান্ডমার্ক এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ এর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রামেশ্বরমের সংযোগ নিশ্চিত করেছে, স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে এবং তীর্থযাত্রাকে সহজতর করেছে ।

ভারত তার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে ৷ পামবান রেলসেতুটি ইঞ্জিনিয়ারিং শ্রেষ্ঠত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে । এই সেতুটিকে ভারতীয় রেলওয়ে 'বিশ্বের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক রেলসেতুগুলির মধ্যে অন্যতম' হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং বিভিন্ন বিখ্যাত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকৌশল-স্থাপত্য প্রকাশনায় প্রদর্শিত হয়েছে ।

দেশের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্য বিস্ময় পামবান রেলসেতু (নিজস্ব চিত্র)

72 মিটারের উল্লম্ব বৃহত্তর বাণিজ্যিক জাহাজগুলি চলাচলের মতো জায়গা করার জন্য এই রেলসেতুর উচ্চতা বাড়াতে এর আধুনিকীকরণের পদক্ষেপগুলি আরও ভালো গতিশীলতা এবং বাণিজ্যিক সংযোগের পথ প্রশস্ত করবে । এছাড়াও, প্রস্তাবিত রামেশ্বরম-ধনুশকোডি রেললাইনের সঙ্গে এর সংযুক্তিকরণ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য একটি গেমচেঞ্জার হতে পারে । নিঃসন্দেহে, এই পদক্ষেপ 2047 সালের মধ্যে বিকশিত ভারত হওয়ার ভারতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details