কানাডার একটি সংবাদসংস্থা গ্লোবাল নিউজ গত সপ্তাহে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম - 'ভিসা ভারতীয় বিদেশী হস্তক্ষেপের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ।' এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় হাইকমিশন এবং কনস্যুলেটগুলি খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ কানাডার গুরুদ্বারগুলিতে যাঁরা খালিস্তানের পক্ষে প্রচার করেছেন, তাঁদের ভিসা প্রত্যাখান করা হয়েছে ।
সেখানে আরও বলা হয়েছে যে খালিস্তানিদের নিন্দা ও ভারতের প্রতি 'গভীর শ্রদ্ধা' আছে বলে যাঁরা চিঠি জমা দিয়েছেন, শুধু তাঁদের ভিসা দেওয়া হয়েছে ৷ ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়েছে, খালিস্তানের এমন একজন সমর্থক উল্লেখ করেছেন, 'আপনারা কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না, তাঁরা মূলত সেই বিষয়টিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে ৷'
ওই নিবন্ধে আরও লেখা হয়েছে যে সময়ে সময়ে ভিসা-প্রত্যাশীদের খালিস্তান কর্মী এবং কার্যকলাপের উপর হাই কমিশনের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । আরসিএমপি এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো উভয়ই খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কানাডিয়ান শিখদের ভিসা না-দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন । কানাডার সরকার এটিকে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং আন্তঃদেশীয় দমনপীড়ন' বলে অভিহিত করেছে ।
জাস্টিন ট্রুডো গত বছরের সেপ্টেম্বরে খালিস্তান সন্ত্রাসী বলে পরিচিত হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার পিছনে ভারতকে দায়ী করার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ আরও বেড়েছে । এখনও পর্যন্ত ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।
সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কানাডা ও ভারত উভয় পক্ষের সিনিয়র কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে । এর আগে ভারত কানাডাকে তাদের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে কানাডার 41 জন অতিরিক্ত কূটনীতিককে এই দেশ থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল ।
কূটনৈতিক যুদ্ধ অবসানের কোনও লক্ষণ ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে । সম্প্রতি, ভারতীয় মিশনে বার্ষিক জীবন-শংসাপত্র প্রদানে ইন্দো-কানাডিয়ানদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইভেন্টগুলি বাতিল করা হয়েছিল ৷ কারণ, স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তাবিত স্থানগুলিতে প্রধানত মন্দির ও কমিউনিটি হলগুলিতে হিংসার আশঙ্কা করেছিল ৷
গ্লোবাল নিউজ শুধুমাত্র কানাডার দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করেছে ৷ কারণ, কানাডা একটি দেশ হিসাবে, বিশেষ করে ট্রুডোর অধীনে, ভারত-বিরোধী খালিস্তান আন্দোলনকে বৃদ্ধির জায়গা করে দিয়েছে । গ্লোবাল নিউজ কানাডার বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করে এমন সরকারি লাইনকে সামনে রেখেছে ৷ তারা কানাডার জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটল ভারতের নীতির কারণে হয়েছে ।
যাঁদের পরিবারের সদস্যরা স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে কানাডায় রয়েছেন, তাঁদের ভিসা দেওয়ার সময় কানাডার হাইকমিশন এবং ভারতে কনস্যুলেটগুলি দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে ওই নিবন্ধে ৷ সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ) এবং পঞ্জাব পুলিশের কর্মীদের কানাডার ভিসা চাওয়ার সময় অতিরিক্ত বিবরণ পূরণ করতে হবে । এটাও উপেক্ষা করা হয়েছে সেখানে ৷
কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ, সশস্ত্র বাহিনী এবং সিএপিএফ-এর সদস্যদের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে পরিষেবার বিশদ চাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোথায় কাজ করেছেন সেই সময়কাল এবং স্থানগুলিও জানতে চান । এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের তথ্য প্রাপ্তি বোঝায়, যাকে একটি প্রতিপক্ষ শক্তির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে ।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘অনুমান করে’ জম্মু ও কাশ্মীরে কাজ করার জন্য অনেককে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল । সিএপিএফ-এর একজন কনস্টেবলকে একটি 'কুখ্যাত হিংস্র' বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁর ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় । জম্মু ও কাশ্মীরে 'সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের' মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একজন সিনিয়র সেনা প্রবীণ ব্যক্তির ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল ।