হায়দরাবাদ, 15 এপ্রিল: 2025 সালের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি থেকে ভালোভালে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মজুরিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই লক্ষ্য শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্দান্ত খবর । কেন্দ্রীয় সরকার আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, শিক্ষা এবং পোশাকের মধ্যে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির মান প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে কাজ করছে । সুতরাং জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ একটি শালীন জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবে, ব্যক্তিদের মঙ্গলকে উৎসাহিত করবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গড়ে তুলবে ।
ন্যূনতম মজুরি
1948 সালের আইনে ভারত ন্যূনতম মজুরি নীতির প্রবর্তন করে । ন্যূনতম মজুরি হল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পাদিত কাজের জন্য নিয়োগকর্তাদের তরফে কর্মচারীদের দেওয়া প্রয়োজনীয় সামান্য পারিশ্রমিক, যা আইন দ্বারা সুরক্ষিত । অন্যদিকে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করে যে শ্রমিকরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে ৷ জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আরও ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখে ।
ভারতে ন্যূনতম মজুরি প্রতিটি রাজ্যে আলাদা । অঞ্চল, শিল্প, দক্ষতার স্তর এবং কাজের প্রকৃতির মতো একাধিক মানদণ্ডের অধীনে এই মজুরিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে । 2023 সালে ভারতে জাতীয়স্তরে ন্যূনতম মজুরি ছিল প্রতিদিন 178 টাকা, যা গত কয়েক বছর ধরে একই রয়েছে । ন্যূনতম মজুরি আইনের অধীনে অদক্ষ শ্রমিকদের গড় বেতন প্রতি মাসে 2 হাজার 250 টাকা থেকে 70 হাজারের মধ্যে । তবে গড় মাসিক বেতন প্রতি মাসে মাত্র 29 হাজার 400 টাকা । মজুরির বিস্তৃত পরিসর ভারতে আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ ।
মজুরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয় প্রেক্ষাপটে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত । মজুরি গতিশীলতা উৎপাদন খরচ এবং ভোক্তা ক্রয় ক্ষমতার উপর প্রভাবের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে । অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণগুলির একটি জটিল ইন্টারপ্লে, সরকারি নীতি এবং রিজার্ভ ব্যাংকের পদক্ষেপগুলি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ।
জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি
বেঁচে থাকার মতো সম্পদ গড়তে ও ভালো জীবনযাত্রার জন্য আয় বৈষম্য মোকাবিলা করা প্রয়োজন । আয়ের বৈষম্য 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয় ৷ এঠি আয় বৈষম্যের একটি বহুল ব্যবহৃত পরিমাপ এবং স্কোরটি 0 এবং 1 এর মধ্যে থাকে । যেখানে সম্পূর্ণ সমতার ফলে 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' শূন্য হবে এবং সম্পূর্ণ অসমতার ফলাফল হবে 1 । তথ্যে দেখা গিয়েছে, 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' 2014-15 সালে 0.472 ছিল ৷ সেখানে থেকে 2022-23 বছরে 0.402-তে কমে গিয়েছে ৷ আয় বৈষম্যের হ্রাসকে উপার্জন পিরামিডের নীচে মাইগ্রেশনের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় । তবে প্রস্তাবিত জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আয় বৈষম্যকে আরও কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে ।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ ৷ মজুরি মূল্যবৃদ্ধি ধরে রাখতে অক্ষম । যদি মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং মজুরি স্থির থাকে, তাহলে এটি ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জীবনযাত্রার মান হ্রাস এবং সম্ভাব্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে । অন্যান্য উদীয়মান দেশের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির ভারতে অনেক কম ৷ 2013 সালে গড় মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 10.02 শতাংশ, যা একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল । তবে ভারতের রাজস্ব ও আর্থিক নীতিগুলি একটি ক্যালিব্রেটেড পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারি 2024 সালের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিকে 5.09 শতাংশে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে ।
মাথাপিছু আয়-ব্যয়
মাথাপিছু আয় এবং ভোগ্যপণ্যে ব্যয় ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক মঙ্গল ও আচরণকে প্রভাবিত করে । 2022-23 সালের জন্য ভারতের মাথাপিছু আয় (বর্তমান মূল্যে) দাঁড়িয়েছে 1 লক্ষ 72 হাজার টাকা, যা 2014-15 সালে 86 হাজার 647 টাকা থেকে প্রায় 100 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন মোদি সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসে । এদিকে 2022-23-এর জন্য মাসিক মাথাপিছু খরচ ছিল গ্রামীণ ভারতে 3 হাজার 773 টাকা এবং শহরে 6 হাজার 459 টাকা গড়ে, খাদ্য এবং অন্যান্য ব্যয়ের অংশ যথাক্রমে 40 এবং 60 শতাংশ । মাসিক মাথাপিছু খরচের উপর ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গ্রামে গড় মাসিক মাথাপিছু খরচ 2011-12 সালে 1 হাজার 430 টাকা ছিল এবং 2022-23 সালে তা বেড়ে 3 হাজার 773 টাকা হয়েছে, যা 2.60 গুণ বেশি । তাই গত দশ বছরে মাথাপিছু খরচের তুলনায় ভোগ্যপণ্যে ব্যয়ের বৃদ্ধি অনেক বেশি ।