ভারতীয়দের পূর্বপুরুষের উৎস সন্ধানে একটি সমীক্ষা হয়েছে ৷ সমীক্ষাটি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিস কেরডনকাফের নেতৃত্বাধীন একদল গবেষক ৷ বায়োরিক্সিভ এর প্রিপ্রিন্ট হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষণাপত্র ৷ বিভিন্ন উপজাতি ও বর্ণভিত্তিক গোষ্ঠীর জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় এই গবেষণায় ৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৷ 2700 নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ দেখা যায় যে ভারতীয়রা বেশিরভাগই তিনটি মৌলিক পূর্বপুরুষের গোষ্ঠী থেকে এসেছে ৷ সেগুলি হল - প্রাচীন ইরানি কৃষক, ইউরেশিয়ান স্টেপ যাজক ও দক্ষিণ এশীয় শিকারি ৷
আরও বেশি সময়কে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করলে দেখা যায় যে ভারতীয়রা জিনগতভাবে নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের সঙ্গেও সম্পর্ক যুক্ত ৷ এই ধরনের মানব উপপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে 40 হাজার বছর আগে ৷ এই তথ্য স্বাভাবিকভাবেই বিস্ময় জাগিয়েছে ৷ গবেষকরা আরও দেখেছেন যে ভারতীয়দের জিনগত বৈচিত্রের সঙ্গে নিয়ান্ডারথাল উপপ্রজাতির মিল পাওয়া গিয়েছে ৷
আর ভারতীয়দের বেশিরভাগ জিনগত বৈচিত্র্য প্রায় 50 হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের ফলে তৈরি হয় ৷ আশ্চর্যজনকভাবে ভারতে এখনও পর্যন্ত সেই প্রাচীন বসবাসকারীদের কোনও জীবাশ্ম প্রমাণ পাওয়া যায়নি । তাই গবেষকরা এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেন না যে ভারতে প্রচলিত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-বিবাহের ঐতিহ্যগুলি অন্যান্য মহাদেশ থেকে পাওয়া মানব জিনোম ক্রমগুলির তুলনায় ভারতীয় জিনে নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ-কে মিশে যেতে সাহায্য করেছে ।
বৈদিক আর্যরা সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলের আদিবাসী ছিল এবং তারা 20 হাজার বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয় ছিল, সেই দাবিকে নস্য়াৎ করে দিচ্ছে এই গবেষণা ৷ এর থেকে সামনে আসছে যে ভারতীয়দের পূর্বপুরুষরা পশ্চিম দিক থেকে এসেছিল ৷ বৈজ্ঞানিক ও সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার আলোকে 'ভারতের বাইরে' তত্ত্বটি সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে খারিজ হয়ে যায় ৷ আদিবাসী আর্যবাদ এবং ভারতের বাইরের তত্ত্ব হল সেই বিশ্বাস, যা মাইগ্রেশন মডেলের বিকল্প হিসাবে প্রচার করা হয় ৷ এটা মধ্য এশিয়ার পন্টিক-কাস্পিয়ান স্টেপকে আর্য এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উৎপত্তি বলে মনে করে ।
এই গবেষণার ফলাফলগুলি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার আদি বসতি স্থাপনকারীদের উপর 2019 সালে সেল অ্যান্ড ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ হিউম্যান জেনেটিক্স-এ প্রকাশিত দু’টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে ৷ ওই গবেষণাপত্র দু’টিতে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রাথমিক বসতি স্থাপনকারীদের আর্কিওজেনেটিক্স বর্ণনা করেছিল ।
ওই গবেষণায় পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপস থেকে শিকারী, ইরানি কৃষক এবং যাজকদের জিনগত উৎস খুঁজে বের করা হয় ৷ দেখা হয় কিভাবে তারা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার নির্মাতা হয়ে উঠতে পারে । জিনোমিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিন্ধু উপত্যকায় বসতি স্থাপনকারী লোকদের বংশের সন্ধান করেছিলেন বসন্ত শিন্দে ও আরও কয়েকজন ৷ 2019 সালের 17 অক্টোবর তাঁদের গবেষণাপত্র সামনে আসে ৷ যার নাম ছিল, আ হরপ্পান জিনোম ল্যাকস অ্যানসেন্ট্রি ফ্রম স্টেপ প্যাস্টোরালিস্টস অর ইরানি ফার্মাস ৷
বিশেষজ্ঞরা সাধারণত একমত যে হরপ্পা যুগের শেষের দিকে ঋগ্বেদীয়রা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেছিল । এই যাজক অভিবাসীরা পর্যায়ক্রমে পশ্চিম থেকে সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে এসেছিল । মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-র গবেষণায় আবার অন্য তথ্য় মিলেছে ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে যে কোনও বাহ্যিক স্থানান্তর ঘটেনি । পরিবর্তে তারা ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের বিভিন্ন অংশে থাকা কিছু সামাজিক গোষ্ঠী ও পূর্ব ইউরোপীয়দের মধ্যে জিনগত (হ্যাপ্লোগ্রুপ আর1এ1এ) মিল রয়েছে ৷ নতুন আর্কিওজেনেটিক নথি বলে যে হ্যাপ্লোগ্রুপ আর1এ1এ প্রায় 14 হাজার বছর আগের ইউরেশিয়ান স্টেপে হ্যাপ্লোগ্রুপ আর1এ থেকে পরিবর্তিত হয়েছিল । সুতরাং, এই গবেষণাগুলি 'পূর্ব ইউরোপীয় স্টেপসের বাইরে'-র তত্ত্বকে সমর্থন করে । এর থেকে বোঝা যায় যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার আদি রূপটি প্রথমে পূর্ব ইউরোপ ছিল ৷ যা তার 'আসল' স্বদেশ ৷