পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

ক্রীতদাস ব্যবস্থা মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়! - Slavery

সোমবার বিশ্বজুড়ে দাসত্ব ওবং ক্রীতদাস কেনাবেচার জঘন্য কারবারের শিকার হওয়া অসংখ্য মানুষের স্মরণে পালিত আন্তর্জাতিক দিবস ৷ প্রতি বছর 25 মার্চ পালন করা হয় দিনটি। এই দিবসের লক্ষ্য বর্ণবাদ এবং কুসংস্কারের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। দিনটি ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসার কারণ, পরিণতি এবং পাঠ নিয়ে আলোচনা করার একটি উপলক্ষ। ক্রীতদাস

Etv Bharat
ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসা: এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়।

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 25, 2024, 11:02 PM IST

হায়দরাবাদ, 25 মার্চ: দাসত্বের শিকার এবং ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক স্মরণে প্রতি বছর 25 মার্চ সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচিতে একটি দিন বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। 400 বছরেরও বেশি সময় ধরে, দেড় কোটিরও বেশি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু জঘন্য ক্রীতদাস কেনাবেচার শিকার হয়েছে। এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়।

ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসার একটি ধ্বংসাত্মক উত্তরাধিকার ছিল বর্ণবৈষম্য। আটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসা বা ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসা প্রধানত আমেরিকায় ক্রীতদাস হিসাবে আফ্রিকার মানুষের কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। ঐতিহাসিকভাবে, এটি আফ্রিকার মানুষদের অন্যায়ভাবে দাসত্ব করানোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। বর্তমানে, এই ব্যবস্থা আফ্রিকার বংশোদ্ভূত লোকদের সমাজের দরিদ্রতম এবং সবচেয়ে প্রান্তিক স্তরে নামিয়ে দিয়েছে।

দাসত্বের শিকার হওয়া মানুষ এবং ট্রান্সআটলান্টিক স্লেভ ট্রেড-কে আন্তর্জাতিক ভাবে স্মরণের উদ্দেশ্য: দাসত্ব এবং ট্রান্সআটলান্টিক দাস ব্যবসার শিকার হয়েছেন যারা তাদের স্মরণের এই দিনটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্মরণ করে এই জঘন্য ব্যবস্থায় আক্রান্ত ও মৃতদের সম্মান ও স্মরণ করার সুযোগ দেয়।

এই দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হল, বর্ণবৈষম্য এবং কুসংস্কারের কুপ্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ক্রীতদাস ব্যবসায় নিহতদের সম্মান জানাতে নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে যার উন্মোচন করা হয় 25 মার্চ 2015 সালে।

সংখ্যা ভিত্তিক তথ্য:

প্রায় 1 কোটি 70 লক্ষ (17 মিলিয়ন) মানুষকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফ্রিকা থেকে উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় 16 শতক নাগাদ থেকে শুরু করে 19 শতক পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছিল। সে সময় আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার সময় আরও লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এই ক্রীতদাস ব্যবসা বা ব্যবস্থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ অধ্যায় হিসাবে দেখা হয়। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, এই ক্রীতদাস ব্যবসা বা ব্যবস্থার প্রভাব এখনও আফ্রিকার অর্থনীতিতে অনুভূত হচ্ছে।

পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা 400 বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দাসপ্রথার অধীনে নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়েছিল। অমানবিক বলপূর্বক দেশান্তরে নেওয়া প্রায় 96 শতাংশ বন্দিকে দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আনা হয়েছিল যা আমেরিকায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষের বিশাল জনসংখ্যা অন্যতম কারণ। 17 ডিসেম্বর, 2007-এ, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ 25 মার্চকে আমেরিকায় দাসত্বের শিকার হওয়া লক্ষ লক্ষ আফ্রিকার দরিদ্র মানুষকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্মরণ করার দিন হিসাবে মনোনীত করে। প্রথম 2008 সালে এই দিনটি পালন করা হয়েছিল।

দাসত্ব বিলুপ্তির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি:

এই দাসপ্রথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে 1 ফেব্রুয়ারি, 1865 সালে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে জাতিগত বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত ছিল এবং বর্ণবৈষম্য এখনও মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে রয়ে গিয়েছে। তাই, দাসত্বের শিকার এবং ট্রান্সআটলান্টিক স্লেভ ট্রেডের আন্তর্জাতিক স্মরণ দিবসটি হল ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যবসার কারণ, পরিণতি এবং ফলাফল নিয়ে আলোচনা করার একটি বিশেষ উপলক্ষ।

আশা করা যায় যে এই দিনটি পালনের মাধ্যমে বর্ণবৈষম্য এবং কুসংস্কারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে। জাহাজের মালিকরা ক্রীতদাসদের সঙ্গে পণ্যের মতো আচরণ করত। ক্রীতদাসদের অত্যন্ত দ্রুত এবং সস্তায় কেনাবেচা করা হয়েছিল। ক্রীতদাসদের তখন কৃষিকাজ, খনি এবং গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য বিক্রি করা হতো। 1807 সালে, ব্রিটেন দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ করার জন্য প্রথম আইন পাস করে এবং 1815 সালের মধ্যে, ব্রিটিশরা নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন এবং পর্তুগালকে এই আইন কর্যকর করার জন্য চাপ দেয়।

সাল ভিত্তিক পরিসংখ্যান:

1525 - প্রথম ক্রীতদাস বহনকারী জাহাজ আফ্রিকা থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷ আফ্রিকান ক্রীতদাসদের স্প্যানিশ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়৷

1562 –1563 - স্যার জন হকিন্স প্রথম ইংরেজ দাসদের সিয়েরা লিওন থেকে হিস্পানিওলা পর্যন্ত স্থানান্তরের নেতৃত্ব দেন৷

1619 - আফ্রিকান দাসদের 20 জনের একটি দল জেমসটাউন, ভার্জিনিয়ায় অবতরণ করে৷ ব্রিটেনের উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলিতে প্রথম আফ্রিকান দাসদের একটি দল পৌঁছায়৷

1672 - একচেটিয়া আধিপত্বকারী রয়্যাল আফ্রিকান কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইংরেজ উপনিবেশগুলিতে ক্রীতদাস সরবরাহ করত৷

1700- এর দশকে - একচেটিয়া আধিপত্বকারী কোম্পানিগুলির অবসান ঘটার পর, বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান দাসকে আমেরিকায় স্থানান্তরিত করা হয়৷ এর মধ্যে 955,000 জ্যামাইকায়; ব্রাজিল থেকে 5,613,420 জন আফ্রিকান দাস ছিলেন৷

1789 - ফরাসি দাস উপনিবেশগুলিতে অভ্যুত্থান ঘটায় ফরাসি বিপ্লব। সেন্ট-ডোমিঙ্গুতে দাস বিদ্রোহ (1791) এবং যুদ্ধের ফলে একটি স্বাধীন হাইতি (1804) প্রতিষ্ঠিত হয়৷

1787-1808 - ব্রিটিশ বিলুপ্তি দ্রুত ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে৷ কিন্তু হাইতিয়ান বিপ্লবের কারণে এর অগ্রগতি থমকে যায়। 1802 সালে ডেনিশের বিলুপ্তি এবং ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হওয়ার পর, ব্রিটেন 1807 সালে প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্ত্বেও এই দাস ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 1808 সালে এই পথই অনুসরণ করে।

1800- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (তুলা শিল্পে) এবং ব্রাজিলে (কফি শিল্পে) ক্রীতদাস শ্রম ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়৷ উভয়ই অভ্যন্তরীণ ক্রীতদাস ব্যবসার দ্বারা টিকে ছিল।

1815 সালের পর থেকে- রয়্যাল নেভি এবং মার্কিন নৌ সেনারা আটলান্টিকের দাস বাণিজ্য রোধ করার চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু এই সময় প্রায় 30 (3 মিলিয়ন) লক্ষ দাসকে সমুদ্র পেয়িয়ে প্রধানত ব্রাজিল এবং কিউবায় নিয়ে যাওয়া হয়।

1838 - একটি 'শিক্ষানবিশ' তৈরির ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয় - যেখানে মুক্তিপ্রাপ্ত দাসরা 6 বছর পর্যন্ত একটি ট্রানজিশন পিরিয়ডে বিনামূল্যে কাজ করেছিল - ব্রিটিশরা ওই দাসদের মুক্ত করেছিল।

1866 - শেষ ক্রীতদাস বহনকারী জাহাজটি আটলান্টিক অতিক্রম করে কিউবার দিকে যাত্রা করে৷

1886-1888- কিউবা (1886) এবং অবশেষে ব্রাজিলে (1888) দাসপ্রথার অবসান ঘটে৷

আরও পড়ুন:

  1. ডব্লুটিও বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তায় ভারতের আরও দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত - WTO Ministerial Conferences
  2. অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদোক্তাদের সাহায্য জরুরি, পড়ুন বিস্তারিত - MSME

ABOUT THE AUTHOR

...view details