কলকাতা, 8 এপ্রিল: বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে একটি কথা বহু প্রচলিত, তা হল 'বডিশেমিং'। অর্থাৎ শরীরের আকৃতি নিয়ে চর্চা করা । যা নিয়ে কথা বলতে অনেকেই অসন্তুষ্ট এবং অপমানিত বোধ করেন । কারও মতে, "আমার শরীর আমার অধিকার, সে মোটা হোক কিংবা রোগা"। চিকিৎসকদের কথায়, সমাজের এই 'স্টিগমা' ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ । কারণ মোটা হয়ে যাওয়া মানে তিনি ওবিসিটিতে আক্রান্ত । কিন্তু বহু মানুষই এই রোগ নিয়ে সচেতন নন । তবে এই ওবিসিটি বা অতিস্থূলতা কী ? কখন বোঝা যাবে যে আপনি ওবিসিটিতে আক্রান্ত ? সেই বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত ।
ওবিসিটি কী ?
ওবিসিটি বা অতিস্থূলতা একটি রোগ । এই রোগটার মধ্যে লুকিয়ে থাকে আরও অনেক রোগ । যার উদাহরণ হিসাবে চিকিৎসক অমিত কর জানান, যখন আমরা কোনও চিকিৎসকের কাছে যাই প্রেশার বা সুগারের কারণে, তখন আমরা প্রথমে যা দেখতে পাই তা হল ওই ব্যক্তি হার্ট, সুগার, ফ্যাটি লিভার বা থাইপো থাইরয়েড, কোলেস্টেরলের মতো রোগের সূত্রপাত হয়েছে রোগীর, তার কারণ তিনি ওবিসিটিতে আক্রান্ত ।
কখন বোঝা যাবে ওবিসিটিতে আক্রান্ত ?
চিকিৎসক অমিত কুমার দে জানান, আমরা যদি আমাদের বিএমআই মাপি মানুষটির উচ্চতা এবং ওজনের নিরিখে, তাহলে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি যদি বিএমআই 23-এর উপরে হয় তাহলেই সে ওবিসিটিতে আক্রান্ত । এ বার যদি সেটা 28-এর উপর উঠে যায় তাহলে কিন্তু সেটা ওবিসিটির মধ্যে কত নম্বরের আছে সেটা আমরা দেখি । আর এর পাশাপাশি কোমরের মাপের উপর ভিত্তি করেও ওবিসিটি দেখা হয় । যদি মেয়েদের কোমরের মাপ 85 এবং ছেলেদের 95 পেরিয়ে যায়, তাহলেই বুঝতে হবে সে ওবিসিটিতে আক্রান্ত । এর সঙ্গে, চিকিৎসক জানান, ভারতীয়দের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় পেটের কাছে মেদের পরিমাণ । তখন কিন্তু আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন কারণ সেটি থেকে মেটাবলিক যে আরও রোগ হয় সেগুলির বৃদ্ধি হয় ।
মোটা হওয়ার সঙ্গে থাইরয়েডের সম্পর্ক আছে ?
অধ্যাপক চিকিৎসক কৌশিক সাহা বলেন, "থাইরয়েড এর জন্য মানুষের ওজন বাড়ে দুই থেকে তিন কেজি মাত্র । মোটা হয়ে যাওয়া মানে ওই ব্যক্তি ওবিসিটিতে আক্রান্ত । এটা তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ । এই ওবিসিটির কারণে মেটাবলিক এই রোগগুলির বৃদ্ধি হয় ।"
কাদের উপর এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় ?
চিকিৎসক অমিত কুমার দে জানান, ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের মধ্যেই কিন্তু ওবিসিটির দেখা যায় । তবে বর্তমানে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যাটা বেশি । মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনোপোজের পর ওবিসিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার উপায় ?
অধ্যাপক চিকিৎসক কৌশিক সাহা জানান, ওবিসিটি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত । তার সঙ্গে খাওয়ার দাওয়া এবং ব্যায়াম একমাত্র উপায় । তবে ওষুধও রয়েছে । কিন্তু প্রাথমিকভাবে ব্যায়ামের উপর জোর দেওয়া উচিত ।
বর্তমান যুগে সকলেই কাজে ব্যস্ত ফলে ব্যায়াম এবং খাওয়া দাওয়া মেনে চলা কি আদেও সম্ভব ?
অধ্যাপক চিকিৎসক বলেন, যুগ বদলে গিয়েছে, সবাই ব্যস্ত । কিন্তু তার মধ্যেও নিজেকে ভাবতে হবে আমি যেখানে থাকি সেখানে কী কী খাবার পাওয়া যায় এবং তা কতটা খেতে পারা যাবে । সেই কারণে যখন এমন রোগী আমাদের কাছে আসেন, তখন আমরা তাঁর পরিস্থিতিটা শুনে তাঁর হাতের নাগালে থাকা প্রত্যেকটা খাবারের জিনিস তাঁর খাদ্য তালিকায় তুলে দি । এ বার সেই খাদ্য তালিকা কিন্তু অন্য আরেকজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । একজনের খাদ্য তালিকা দেখে অন্যজন খেলে হবে না । ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও সে রকম ব্যাপার আছে ৷ ভোরবেলায় অথবা যদি সন্ধ্যেবেলায় কেউ সময়টাকে 15 মিনিট করে ভাগ করে নিয়েও ব্যায়াম করেন, তাহলেও হবে ৷ তবে এর পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে 15 মিনিট হলেও হাঁটা অত্যন্ত জরুরি । ডায়াবেটিস এবং কিডনি সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও কিন্তু মোটামুটি পুরো বিষয়টা একই রকম হয় ।
সম্প্রতি এই ওবিসিটি নিয়ে শহর কলকাতায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল । যেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন নামী ডায়াবেটিলজিস্ট এবং মেটাবলিক ফিজিশিয়ান চিকিৎসকেরা । সেখানে এই ওবিসিটির বিষয়ে নানা কথা উঠে আসে । যার মধ্যে প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, ওবিসিটিও একটি রোগ ৷ যার চিকিৎসা করা দরকার । এটা সারা দেশের মানুষকে বোঝানো, সচেতনতার জন্য প্রচার করা । তার সঙ্গে প্রাইমারি চিকিৎসা করার জন্য যে সমস্ত চিকিৎসকরা রয়েছেন, তাঁদেরকেও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে ৷ কারণ মানুষ অসুস্থতা বোধ করলে সর্বপ্রথম তাঁদের কাছেই যান । তাই তাঁরাও যাতে এই বিষয়ে সচেতন হয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলেন সেটাই প্রধান লক্ষ্য ছিল এই কর্মশালার ।
আরও পড়ুন:
- নিত্যদিনের ব্যবহৃত কাচের বাসন চকচকে রাখুন এভাবে, রইল কিছু টিপস
- গরমে রোজকার ব্যবহারের সুতির পোশাক কীভাবে যত্ন রাখবেন, মেনে চলতে পারেন এই টিপস
- এই গরমে নিজেকে হাইড্রেট রাখুন স্বাস্থ্যকর পানীয় দিয়ে, জানুন পুষ্টিবিদের মতামত