কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: উস্তাদ জাকির হুসেনকে হারিয়ে আজ প্রায় দেউলিয়া ভারতীয় সঙ্গীত দুনিয়া। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের 'কালো দিন' বললেও কম বলা হবে 16 ডিসেম্বর দিনটিকে। কিংবদন্তি তবলা বাদকের স্মৃতিতে ভাসলেন খ্যাতনামা তবলা শিল্পী প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়।
শিল্পীর কথায়, "ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের তবলার যে এত জনপ্রিয়তা সেটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে জাকির ভাইয়ের জন্য। জাকির ভাই তাঁর বাজনা নিয়ে আমেরিকা থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে আফ্রিকা- সারা পৃথিবীতে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ
সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। মানুষটির ছন্দ, তালের অনুরাগী ছিলেন না এমন মানুষ বিরল। পৃথিবীর যেখানেই অনুষ্ঠান করতে গিয়েছেন সেখানেই এক থেকে দু'মাস আগে সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে যেত।"
তিনি আরও বলেন, "জাকির ভাই শুধু তবলার জাদুকরই ছিলেন না, উনি ছিলেন একজন ভার্সেটাইল মিউজিশিয়ান। একজন গ্লোবাল আইকন। একদিকে যেমন অসাধারণ তবলা বাজাতেন, আরেকদিকে অসাধারণ মিউজিক কম্পোজার এবং অভিনেতা ছিলেন। সবথেকে বড় কথা, উনি একজন খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।..."
স্মৃতি হাতড়ে প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমার বয়স যখন 24-25 বছর, তখন থেকে আমি লস অ্যাঞ্জেলসে থাকতাম। ওখানে অনুষ্ঠান করতাম এবং তবলার ক্লাস করাতাম। উনি থাকতেন সান ফ্রান্সিসকোতে। সেই সময় আমি ক্যালিফোর্নিয়া থাকাকালীন জাকির জি'র কাছে যেতাম। অনেক টিপসও পেয়েছি ওঁর কাছ থেকে। এমন একজন মানুষ ছিলেন যাঁর মধ্যে দম্ভের লেশমাত্র ছিল না। সব সময় খুব হাসি খুশি থাকতেন এবং প্রত্যেক শিল্পীকে খুব ভালবাসতেন। বিনয়ী ছিলেন।"
শিল্পী প্রদ্যুৎজি বলতে থাকেন, "আমেরিকাতে যখন ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ তখন ওঁকে আমি 'উস্তাদ জি' বলে ডাকি। উনি আমাকে বলেন আমি উস্তাদ জি নই ৷ আমি হলাম শুধুমাত্র জাকির হুসেন। তুমি আমাকে শুধু জাকির ভাই বলে ডাকো। মানে ওঁর 'উস্তাদ জি' ডাকে আপত্তি ছিল। কতটা বিনয়ী হলে এই কথাটা বলা যায়! উনি ছিলেন মনের রাজা। আর তার সঙ্গে ছিলেন উস্তাদের উস্তাদ। তার কারণ তবলা মানে আমাদের প্রত্যেকের মনে একটাই নাম আছে উস্তাদ জাকির হোসেন।"
প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই জানা যায়, উনি কলকাতার তবলার ছাউনি খুব পছন্দ করতেন। তাই উনি যখন কলকাতায় কোনও অনুষ্ঠানে আসতেন তখন উত্তর কলকাতার দু'জন প্রখ্যাত তবলা মেকার ওঁকে গ্রিনরুমে তবলা গিফট করে আসতেন। সেই তবলা নিয়ে উনি কলকাতায় অনুষ্ঠান করতেন। উনি বলতেন, "কলকাতার তবলার সাউন্ড খুব মিষ্টি এবং টোনাল কোয়ালিটি অসাধারণ।"
শিল্পী বলেন, "এই মুহূর্তে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অবশ্যই ছন্দপতন। সেটা কীভাবে পূরণ হবে জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি উনি আমাদের সঙ্গে আগেও যেমন ছিলেন এখনও তেমনি থাকবেন। ওঁর অনেক বাজনা বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আছে, ইউটিউবে আছে। সেগুলো আমরা শুনবো। শ্রোতারাও শুনবে এবং আগামী দিনের শিক্ষার্থীরা শুনে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে আমি বলব, জাকির জি তাঁর বাজনার মাধ্যম দিয়ে সারা জীবন আমাদের বুকে থাকবেন। আমি ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। উনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। "