কলকাতা, 27 অক্টোবর: অভিনেত্রী মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কালীপুজোর এবার 68-তে পা। কাজের দৌলতে যোধপুর পার্কের বাসিন্দা হলেও অভিনেত্রীর পৈতৃক ভিটে বেলুড়ে। সেখানেই বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কালীর পুজোর হয় নিয়মিত। একসময়ে ঠাকুরদার চালু করা পুজোর দায়িত্ব আসে মল্লিকাদের বাবার কাঁধে। তারপর এখন এই পুজোর সব দায়িত্ব মল্লিকার তিন বোনের কাঁধে। বাড়ির কালীপুজোকে ঘিরে নানা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী মল্লিকা। শুনল ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷
কবে থেকে পুজোর শুরু...
অভিনেত্রী মল্লিকা বলেন, "পুজোটা আমার ঠাকুরদা শুরু করেন। শান্তি কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদুরা দশ বন্ধু মিলে একটা মাঠে পুজো করতেন। তারপর একদিন দাদু স্বপ্নাদেশ পান। মা কালী স্বপ্নে দাদুকে বলেন, 'তুই নিজের বাড়িতে আমার পুজো কর।' তারপর থেকেই দাদু আমাদের বাড়িতে পুজো নিজের দায়িত্বে শুরু করেন।আর এবার 68-তে পা দিল এই পুজো। এই পুজো দাদুর পর বাবার হাতে আসে। আর এখন বাবার বয়স হয়েছে। এই পুজোর দায়িত্ব আমরা তিন বোন মিলে কাঁধে নিয়ে নিয়েছি।"
মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কালীপুজো (ইটিভি ভারত) কার কাঁধে কোন দায়িত্ব?
মল্লিকা বলেন, "এক একজন এক একটা দায়িত্ব পালন করি। আমাদের তিনজনের সমান ভূমিকা থাকে এই পুজোয় ৷ আমি যেমন ভোগ রান্না করি। পাশাপাশি ফলের বাজার, দশকর্মার বাজার করি। মেজ বোন কোষাধ্যক্ষের কাজ করে ৷ কাকে কত টাকা দেবে এই সব বিষয় মেজ বোন দেখে। আর ছোট বোনের দায়িত্ব ঠাকুরের কাঠামো পুজো হওয়ার পর সেটা কুমোরটুলিতে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে নিয়ে আসা। পুজোর দিন দুপুরে ঘটে জল ভরে মাথায় করে নিয়ে আসে ছোট বোন। আবার ছোট বোনই ঘট মাথায় করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেয়।"
পুজো ঘিরে নানা অলৌকিক ঘটনা
মল্লিকা জানান, বহুবার ৷ কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? একবার পুজো শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভোরে আমরা মন্দির যখন বন্ধ করতে যাচ্ছি তখন একজন বয়স্ক মহিলা এসে বললেন, আমাকে কিছু খেতে দে। বাবা ভোগ দিতে চাইলে তিনি বলেন, ভোগ না। যে নৈবেদ্যটা মায়ের সামনে রাখা আছে সেটা আমাকে দে। বাবা বলেন মায়ের তো এখনও প্রাণ প্রতিষ্ঠা আছে কী ভাবে তাঁর কাছ থেকে নৈবেদ্যর থালাটা নিয়ে আসব? তিনিও ওই নৈবেদ্যই খাবেন। বাবা তাঁকে একটু বসতে বলেন ঠাকুরদার থেকে এই ব্যাপারে অনুমতি নেওয়ার জন্য। ঠাকুরদা বাবাকে অনুমতি দিলে বাবা ফিরে এসে আর সেই বৃদ্ধাকে দেখতে পায়নি। মাত্র 2 মিনিটের ব্যবধানে তিনি ভ্যানিস। নেই মানে তিনি কোথাও নেই। বাবা তাঁকে খুঁজতে দৌড়োয়। কিন্ত আর পায়নি। এরপ্রে তাঁকে আর কখনই কোথাও দেখা যায়নি।..
কালীপুজোকে ঘিরে নানা রীতি (ইটিভি ভারত) অভিনেত্রী আরও একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন। মল্লিকা বলেন, "তখন আমরা তিন বোন খুব ছোট। মা আমাদের দুপুরবেলা কালীপুজোয় খাওয়াতে বসেছেন। মা তো উপোস। তিন বোনকে এক থালায় খাওয়াচ্ছিলেন। আমাদের অনেক পুরনো কড়ি বর্গার বাড়ি। অনেকগুলো বিম রয়েছে ছাদে। মা তিনজনকেই হঠাৎ বলেন বিমের নীচ থেকে সরে বস। আমরাও সেটা করি। আর তক্ষুণি একটা গোটা বিম ভেঙে পড়ে। আমরা ওখানেই বসা থাকলে বাঁচতাম না।মা যে কীভাবে সেদিন বুঝেছিলেন যে কিছু বিপদ আসছে আমি জানি না। হয়ত মা কালীই মাকে দিয়ে বলিয়েছিলেন।
আরও অনেক ঘটনা আছে। বয়স তখন আমার 13 কি 14। একবার কালীপুজোর পর আমি এক মাস মায়ের নূপুরের আওয়াজ পেয়েছি। সিঁড়ি দিয়ে কে যেন উঠত আর নামত।" অভিনেত্রীর বিশ্বাস এখনও তাঁরা তিন বোন যেভাবে পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের পরের প্রজন্মও চালাবে এইভাবেই। কেন না মল্লিকার কন্যা এখনই পুজোর দায়িত্ব নিতে চান এবং পুজোয় কোমর বেঁধে মা-মাসিদের সঙ্গে হাতে হাত লাগান। চলতি বছরে মল্লিকারা 31 অক্টোবর বাড়ির পুজো সারার পর অতিথি আপ্যায়ণ করবেন 1 নভেম্বর।