পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বৃদ্ধ বয়সের আশ্রয় হায়দরাবাদের সিআর ফাউন্ডেশনের রজত জয়ন্তী, রইল তার ইতিহাস - CR Foundation Silver Jubilee

CR Foundation Silver Jubilee Celebrations: বৃদ্ধ বয়সে সসম্মানে বেঁচে থাকার জন্য একটি আশ্রম রয়েছে হায়দরাবাদে ৷ এখানে প্রৌঢ়রা তাঁদের পছন্দমতো জীবন যাপন করতে পারেন ৷ হায়দরাবাদের কোন্ডাপুরো সিআর ফাউন্ডেশনের এবার 25 বছর পূর্তি ৷ রইল তার ইতিহাস ৷

CR Foundation Silver Jublee Celebrations
বৃদ্ধ বয়সের ঠিকানা হায়দরাবাদের সিআর ফাউন্ডেশন (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 28, 2024, 3:11 PM IST

হায়দরাবাদ, 28 মে:চন্দ্র রাজেশ্বরা রাও একজন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা ৷ তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলিতে তিনি বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলেন ৷ তখন তাঁর অনুগামীরা একটি কমিটি গঠন করে তাঁর সেবার বন্দোবস্ত করে ৷ অসুস্থ অবস্থাতে প্রবীণ নেতা অনুভব করেন, তাঁর মতো আরও অনেকে যাঁরা দেশের জন্য লড়েছিলেন, তাঁরাও আজ বৃদ্ধ ৷ কিন্তু এখন তাঁদের লড়াইটা বেঁচে থাকার এবং তাঁরা এখন সসম্মানে বেঁচে থাকতে পারছেন না ৷ এই দুর্ভাবনা নিয়েই 1994 সালের এপ্রিল মাসে প্রয়াত হন কমিউনিস্ট নেতা ৷ তাঁর মৃত্যুর পর নেতার ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে ওই বছরেই সিআর ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন কমিউনিস্ট নেতারা ৷

সেই সময় অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য সরকার এই কাজের জন্য কোন্ডাপুরে 5 একর জমি অনুমোদন করে ৷ 1999 সালের 2 অক্টোবর আশ্রমের ভবনের উদ্বোধন করেন পাঁচজন বৃদ্ধ ৷ অধুনা স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি, সাংবাদিক এবং শিল্পীদের ওই আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করা হয় ৷ প্রথম দিকে, আশ্রমের সব খরচখরচা ফাউন্ডেশন নিজেই চালাত ৷ ধীরে ধীরে আশ্রমিকদের সংখ্যা বাড়তে লাগল ৷ তখন ম্যানেজমেন্ট একটা খরচ ধার্য করল ৷ বর্তমানে আশ্রমের যাঁরা থাকেন, তাঁদের প্রতি মাসে 9 হাজার টাকা দিতে হয় ৷ আগে প্রতি শনি-রবিবার ছেলেমেয়েরা তাঁদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি নিয়ে যেতেন ৷ এখন উলটো ৷ পরিবারের সদস্যরাই এই আশ্রমে আসেন এবং থাকেন ৷ তাঁদের জন্য একটি গেস্ট হাউজ তৈরি করা হয়েছে ৷ 2019 সালে এই আশ্রমটিকে 'ভিয়ো শ্রেষ্ঠা সম্মান'-এ ভূষিত করেছে তেলেঙ্গানা সরকার ৷ এখানে দেশের প্রবীণ নাগরিকরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সসম্মানে বেঁচে থাকতে পারেন ৷

সিআর ফাউন্ডেশনে নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা (ইটিভি ভারত)

চিকিৎসা পরিষেবা

আশ্রমে চিকিৎসার জন্য 24 ঘণ্টা একজন চিকিৎসক এবং দু'জন নার্স থাকেন ৷ ডাঃ মান্ডভা গোপীনাথ এখানে চিকিৎসা পরিষেবা দেখাশোনার দায়িত্ব আছেন ৷ তিনি গুন্টুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ৷ পরে কিছুদিন ইরানে কাজ করেছেন ৷ এখানে এলভি প্রসাদ হাসপাতালের আরেকটি ক্লিনিক রয়েছে ৷ সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় ৷

জরুরি পরিস্থিতির জন্য 5 শয্যার আইসিইউ আছে ৷ এরপরে অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে অসুস্থ প্রৌঢ়ের বাড়িতে খবর দেওয়া হয় ৷ পরিবার তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ আর যাঁদের বাড়িতে কেউ নেই, তাঁদের এনআইএমএস-এ ভর্তি করা হয় ৷ আশ্রম কর্তৃপক্ষই তাঁর সব দেখাশোনা ভার নেয় ৷

আশ্রমে একটি জিম আছে সবার জন্য ৷ সেখানে হাঁটার ট্র্যাকও রয়েছে ৷ তিনটি তলে তিনটি আলাদা আলাদা ডাইনিং হল আছে ৷ 3টি ডরমিটরি এবং 110টি ঘর আছে আশ্রমিকদের থাকার জন্য ৷ আশ্রমের সব খুঁটিনাটি দেখাশোনার জন্য রয়েছে সুরাভরম সুধাকর রেড্ডি, ডি রাজা, ডাঃ কে নারায়ণ, আজিজ পাশা, জাল্লি উইলসন, পাল্লা ভেঙ্কট রেড্ডি, চেন্নামানেনি ভেঙ্কটেশ্বরা রাও, পিজে চন্দ্রশেখর রাও, মানাম আনজায়েউলু ভি, চেন্নাকেশবরাও, সন্ধ্যাকুমারী ৷

হেলথ সেন্টারের ডিরেক্টর বলেন, "আমি জার্মানিতে ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করেছি ৷ সেটা এই সিআরের উৎসাহেই ৷ আশ্রমের সবাই কোনও না কোনও ভাবে সমাজের উপকার করেছেন ৷ তাই আমরাও 2003 সাল থেকে মানুষের সেবা করে চলেছি ৷"

আশ্রমের সবাই বৃদ্ধ, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা খাবারদাবারের স্বাদ, সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের উপর জোর দিয়ে থাকেন ৷ ভোর 6টায় চা, কফি, দুধ দেওয়া হয় ৷ সকাল 8.30 মিনিটে ডিম ও কলা ৷ দুপুরের খাবার খাওয়া হলে বেলা 3টে নাগাদ চা, তার সঙ্গে হালকা কোনও খাবার থাকে ৷ আর সন্ধ্যা 7টায় রাতের খাবার দেওয়া হয় ৷

এখানে যাঁরা থাকেন, তাঁদের সবাই প্রায় কোনও না কোনও সাংস্কৃতি বা অন্য কোনও আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ৷ তাই বইপত্র নিয়ে নিয়মিত আলোচনার বন্দোবস্ত হয় এখানে ৷ আশ্রম চত্বরে একটি থিয়েটার আছে ৷ সেখানে প্রতি সপ্তাহে 1-2টি পুরনো সিনেমা দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয় ৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় ৷ উৎসবের সময় সবাই একসঙ্গে আনন্দ করেন ৷ কোভিড অতিমারির সময়েও আশ্রম খোলা রাখা হয়েছিল ৷

90 বছর বয়সে বই লেখা

একজনের বয়স 95 ৷ আরেকজনের বয়স 88 ৷ দু'জনে বই লেখা নিয়ে ব্যস্ত ৷ তাঁরা বছরের পর বছর ধরে সংস্কৃতে উপনিষদ পড়েছেন ৷ এবার উপনিষদকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজ করছেন ড. রঙ্গনায়কী ও অধ্যাপক বেণুগোপাল ৷ এর আগে এসভি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন প্রবীণ বেণুগোপাল ৷ অন্যদিকে ড. রঙ্গনায়কী শিক্ষা দফতরে হিন্দি পণ্ডিত হিসেবে কাজ করেছেন ৷ তিনি 12 বছর ধরে উপনিষদ পড়েছেন ৷ অবসর গ্রহণের পর তিনি কিছু বছর তাঁর মেয়ের সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন ৷ 2000 সালে তিনি একটা বই লেখার কাজে হায়দরাবাদে আসেন ৷ তখন থেকে হায়দরাবাদই তাঁর বাড়ি হয়ে গিয়েছে ৷ এরপর 12টি বই লিখেছেন ড. রঙ্গনায়কী ৷

তাঁরা বললেন, "আমরা পেনশনে যে অর্থ পাই, তাতে যথেষ্ট ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারি ৷ বিদেশে থাকা ভারতীয়রা দেশের সংস্কৃতি নিয়ে জানতে চায় ৷ তাই আমরা এই বই লেখাটাকে একটা কর্তব্য হিসেবে দেখি ৷"

আমরা আমাদের পরিবারের অভাববোধ করি না

"বিবিনগরের কাছে ব্রহ্মনাপল্লিতে থাকতাম ৷ 1951 থেকে 1955 সাল পর্যন্ত তেলেঙ্গানায় সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছি ৷ মাল্লু স্বরাজ্যমের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি অস্ত্র হাতে নিই ৷ এসভিকে প্রসাদের সঙ্গে আমার বিয়ে হয় ৷ তাঁর সঙ্গে সংগ্রাম করার সময়েই আলাপ হয়েছিল ৷ পরে তিনি ওয়ারাঙ্গল জেলার চেন্নুরু বিধানসভার বিধায়ক হন ৷ আমার ভাই কোম্মিডি নরসিমহারেড্ডি ভুবনগিরি থেকে দু'বার বিধায়ক হয়েছেন ৷ এই আশ্রমে আমি এসেছি 16 বছর আগে ৷ আমি আমার সন্তানদের অভাব বোধ করি না ৷ কমিউনিস্ট নেতারা প্রায়ই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন" বলছিলেন এসভিকে সুগুনা ৷ তিনি 87 বছর বয়সি সশস্ত্র সংগ্রামী ৷

কমিউনিটি গড়ে একসঙ্গে থাকাই আমাদের উদ্দেশ্য

আশ্রমের হোম ডিরেক্টর চেন্নাকেশব রাও বলেন, "আমরা এই আশ্রম চালিয়ে যাচ্ছি ৷ আমাদের উদ্দেশ্য গর্বের সঙ্গে বেঁচে থাকা এবং কমিউনিটি লিভিং ৷ এই ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রামোজি গ্রুপের চেয়ারম্যান রামোজি রাওয়ের অবদান অবস্মরণীয় ৷ আমরা প্রথমে ছোটখাটো আশ্রম করবে বলেই ভেবেছিলাম ৷ কিন্তু রামোজি রাও আমাদের আর্থিক সাহায্য করেছিলেন ৷ তিনি কমিউনিস্ট নেতার নামে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য় করেছিলেন ৷"

আমরা 80 হাজার বই ডিজিটাইজ করতে চলেছি

"একটি হাসপাতাল, একটি লাইব্রেরি এবং একটি মহিলাদের ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে কোন্ডাপুরের আশ্রমে ৷ রোটারি ক্লাব 1 কোটি টাকা মূল্যের জিনিসপত্র দান করেছে ৷ আমরা এই আশ্রম লাইব্রেরিতে থাকা 80 হাজার বই ডিজিটাইজ করতে চলেছি ৷ বর্তমানে এখানে 140 জন রয়েছেন ৷ আরও 300 আবেদনপত্র অপেক্ষায় রয়েছে ৷ আমরা তাঁদের কোনও সুযোগ দিতে পারিনি ৷ তাই অন্ধ্রপ্রদেশে আরেএকটি আশ্রম গড়ার পরিকল্পনা করছি ৷ তার জন্য সরকার জমি অনুমোদন করেছে", বললেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি তথা প্রবীণ সিপিআই নেতা ডাঃ কে নায়ার ৷

এখানে এসে শরীর ভালো হয়েছে

এক আশ্রমিক বলেন, "আমার দু'টি মেয়ে আছে ৷ তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন ৷ বাড়িতে একা থাকার চেয়ে আশ্রমে থাকাই ভালো লাগছে ৷ চারদিকে সবাই প্রায় এক বয়সি ৷ তাই দিনগুলি তাড়াতাড়ি কেটে যায় ৷ এখানে এসে অনেকের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details