নয়াদিল্লি, 16 ডিসেম্বর: বিজয় দিবসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নিয়ে সরব হলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ৷ সোমবার লোকসভার জিরো আওয়ারে তিনি লোকসভায় বাংলাদেশে নির্যাতিতদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের কথা তোলেন ৷ এরই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এদিন সেনার সদর কার্যালয় থেকে বিজয় দিবসে ভারত ও পাকিস্তান সেনার মধ্য স্বাক্ষরের ঐতিহাসিক ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
লোকসভায় ওয়েনাড়ের সাংসদ বলেন, "হিন্দু ও খ্রিস্টান-সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার চলছে সেই বিষয়ে সরকারের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত ৷ বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নির্যাতিত, অত্যাচারিতদের সহযোগিতার করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের ৷" এরই সঙ্গে সংসদের নিম্নকক্ষে প্রিয়াঙ্কা দাবি করেন, "আজ বিজয় দিবস ৷ এদিকে আজই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে একটি ছবি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সেনা ভারতীয় সেনার কাছে যখন আত্মসমর্পণ করে ঠিক সেই সময় ওই সময়ে ছবিটি তোলা হয়েছিল ৷"
লোকসভা থেকে বেরিয়ে সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, "প্রথমে অধ্যক্ষ বলেন যে বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলা যাবে ৷ পরে আমাকে জানানো হয় যে, এই বিজয় দিবস নিয়ে আমি কোনও কথা বলতে পারব না ৷ শুধুমাত্র (বিজেপি) সরকার বলবে ৷ হয়তো সরকারের মনেও ছিল না ৷ নিশিকান্ত দুবেকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তিনি বলেন ৷ এরপর আমি বলেছি ৷"
বিজয় দিবসে তিনি কী বিষয়ে বলেছেন, তাও স্পষ্ট করে জানান প্রিয়াঙ্কা ৷ কংগ্রেস সাংসদ বলেন, "আমি মাত্র দু'মিনিট বলতে পেরেছি এবং দু'টি ইস্যু উত্থাপন করেছি ৷ প্রথমত, বিজয় দিবসে শহিদ যাঁরা এই লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের সবাইকে প্রমাণ জানিয়েছি ৷ সাধারণ মানুষ যাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে সেনার পাশে ছিলেন, তাঁদেরও প্রমাণ জানাই ৷ আর ইন্দিরাজিকেও প্রণাম জানাই ৷ তাঁর দৃঢ়তা, ক্ষমতায় আমরা এই লড়াই করেছিলাম এবং জয়ী হই ৷"
এর সঙ্গে দু'টি বিষয় জড়িত বলে জানান কংগ্রেস নেত্রী ৷ প্রিয়াঙ্কার কথায়, "আজ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে ৷ কিন্তু সেদিন আমরা যে লড়াই করেছিলাম, তা মতাদর্শের জন্যই ৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা থেকে শুরু করে অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল আমাদের লড়াইয়ের আদর্শ ৷ এই আদর্শই ভারতকে মহান করেছে ৷ সেই সময় ইন্দিরাজি এই বিষয়ে সারা বিশ্বে ঘুরেছিলেন ৷ সবাইকে বলেছিলেন যে বাংলাদেশের এই অত্যাচারের মোকাবিলা করুন, এটা বন্ধ হোক ৷ কেউ আসেনি ৷ শুধু আমাদের দেশ, ইন্দিরাজি, সেনা আর দেশের জনতা পাশে ছিল ৷ আজও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে ৷ আমি এটাই বলতে চাই যে, আমাদের সরকার সরব হোক ৷ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলুক ৷ সংখ্য়ালঘুদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করুক ৷"
এছাড়া সেনার হেড কোয়ার্টার থেকে ঐতিহাসিক ছবি সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন রাজীব-তনয়া প্রিয়াঙ্কা ৷ তাঁর দাবি, "আজ বিজয় দিবসে সেনার হেডকোয়ার্টার থেকে এতদিন ধরে টাঙানো ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের সেনা ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করছে ৷ ওই ছবিতে ফিল্ড মার্শাল মানিক শ, জেনারেল অরোরা, ব্রিগেডিয়ার কেএস চন্দ্রপুরজি রয়েছেন ৷ আজকের এই বিশেষ দিনেই কেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে ? মুক্তিযুদ্ধের সেই জয় দেশের কাছে গর্বের বিষয় ৷ এনিয়ে রাজনীতি কেন করছেন ৷"
প্রিয়াঙ্কার কাঁধে প্যালেস্তাইন লেখা ব্যাগ
এদিকে প্যালেস্তাইন নিয়ে তাঁর ভাবনাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ৷ এদিন তাঁকে সংসদে একটি ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়, তাতে ইংরেজিতে 'প্যালেস্তাইন' লেখা রয়েছে ৷ ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধে তিনি বরবারই প্যালেস্তাইনের সমর্থনে সরব হয়েছেন ৷ ব্যাগে প্যালেস্তাইনের প্রতীক তরমুজের ছবিও আঁকা রয়েছে ৷ গত সপ্তাহেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন প্যালেস্তাইন দূতাবাসের চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স আবেদ এলরাজেগ আবু জাজের ৷ তিনি প্রিয়াঙ্কাকে ওয়েনাড়ের উপনির্বাচন জয়ের শুভেচ্ছা জানান ৷