নয়াদিল্লি, 16 মার্চ: অষ্টাদশ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন ৷ মোট 7 দফায় হবে নির্বাচন ৷ ভোট গণনা 4 জুন। প্রথম দফার ভোট 19 এপ্রিল। দ্বিতীয় দফার ভোট 26 এপ্রিল। তৃতীয় দফার ভোট 7 মে। চতুর্থ দফার ভোট 13 মে। পঞ্চম দফার ভোট 20 মে। ষষ্ঠ দফার ভোট 25 মে। সপ্তম দফার ভোট 1 জুন। নিয়ম অনুযায়ী ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে লাঘু হয়ে গেল আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি।
প্রথম দফার ভোটে 102টি কেন্দ্রে ভোট হবে। দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে 89টি কেন্দ্রে । 94টি কেন্দ্রে ভোট হবে তৃতীয় দফায়। চতুর্থ দফায় 96টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। পঞ্চম দফায় 49টি কেন্দ্রে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম দফায় 59টি করে আসনে ভোট হবে। 16 জুন শেষ হচ্ছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তৈরি হওয়া সরকারের মেয়াদ ৷ তার আগেই নতুন সরকারকে শপথ নিতে হবে।
লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হল। অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে নির্বাচন হবে 19 এপ্রিল। অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হবে 13 মে। এর পাশাপাশি ওড়িশায় বিধানসভা নির্বাচন হবে চার দফায়। 13, 20, 25 মে এবং জুন মাসের 1 তারিখ হবে ভোট গ্রহণ। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বরানগর ও ভগবানগোলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের 26টি বিধািনসভা আসনে উপনির্বাচন হবে । সমস্ত ভোটগণনা হবে 4 জুন।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, 96 কোটি 88 লাখ ভোটার আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৷ যার মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা প্রায় 47 কোটি 10 লাখ । পুরুষ ভোটারের সংখ্যা 49 কোটি 70 লাখ। 10 লাখের বেশি ভোট কেন্দ্র। ভোট কর্মীর সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। 55 লাখ ইভিএম। নতুন ভোটারের সংখ্যা 1 কোটি 80 লাখ। 20 থেকে 29 বছরের মধ্যে বয়স এমন ভোটারে সংখ্যা 19 কোটি 74 লাখ।
82 লাখ ভোটারের বয়স 85-র বেশি। তাঁদের বাড়ি গিয়ে ভোট নেওয়া হবে। তার জন্য ফর্ম দেওয়া হবে। কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনে এই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এবার গোটা দেশে এই ব্যবস্থা চালু হবে। কমিশনের কর্মীরা দেশের সর্বত্র যাবেন। দরকার পড়লে একজনের ভোট নিতেও যাবেন এই কর্মীরা। জঙ্গল থেকে শুরু নদী বা পাহাড়-সব জায়গাতেই পৌঁছে যাবেন কর্মীরা। ভোট দেওয়া কতটা জরুরি সেটা বোঝাতেই কমিশনের এই উদ্যোগ।
আরও জানা গিয়েছে শতায়ু ভোটারের সংখ্যা 2 লাখ 18 হাজার। তিন সেনা মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা 19.1 লাখ। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা 48 হাজার। দেশের 12টি রাজ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশি। গতবার মানে 2019 সালে দেশে সাত দফায় চলেছিল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ৷ নির্বাচন হয়েছিল 11 এপ্রিল থেকে 9 মে পর্যন্ত ৷ 2014 সালে নির্বাচন হয়েছিল 9 দফায় ৷ 7 এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে 12 মে পর্যন্ত চলেছিল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ৷
ভোট ঘোষণার শুরুতেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার দেশের প্রতিটি নাগরিককে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, দেশে নির্বাচন মানে উৎসব। আর নির্বাচন ঘিরে এই উৎসবের পরিবেশ যাতে বহাল থাকে তা নিশ্চিত করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। কমিশন দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে ভোট করাতে চায়। তিনি জানান, এর আগে 17টি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। 400টি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। 16টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। 16টি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। অন্য একটি প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রত্যেকটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার হবে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, "ভোটের প্রচারে টাকার ব্যবহার হলে আমাদের শুধু ছবি তুলে জানান। আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে আপনার অবস্থান জানতে পারব। আর 100 মিনিটের মধ্যে সেখানে গিয়ে আমাদের কর্মীরা সমস্তরকম দরকারি ব্যবস্থা করবেন।" এছাড়া তাঁর দাবি, প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। সেখানে পাঁচটি জায়গা থেকে ফিড আসবে। সেই কন্ট্রোল রুমে একজন করে পর্যবেক্ষক থাকবেন। তিনি গোটা বিষয়টির উপর নজরদারি করবেন। নির্বাচনে হিংসা রুখতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের টাকার অপব্যবহার রুখতেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। নির্বাচনের প্রচারে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে এই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে করাতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে সমস্ত জওয়ানরা যাবেন তাঁদের যাতে নির্দিষ্ট কাজে লাগানো হয় তা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রাজীবের আবেদন, সকলেরই ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে দূরে থাকা উচিত।
আরও পড়ুন:
- লোকসভা ভোটের প্রাকক্কালে জাতির উদ্দেশে খোলা চিঠি প্রধানমন্ত্রী মোদির
- বিজেপির দ্বিতীয় তালিকায় আরও 72 প্রার্থী, আছেন গড়করি-খাট্টার-অনুরাগ-গোয়েলের মতো হেভিওয়েটরা
- কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকায় চমক, লোকসভায় লড়বেন কমলনাথ-গেহলতের ছেলে