নয়াদিল্লি, 29 এপ্রিল: কোনও এক্স-মুসলিমের জন্য উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ক্ষেত্রে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ আইন মানা হবে, নাকি 1937 সালের শরিয়ত আইন, মুসলিম পার্সোনাল ল মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এই বিষয়ে মামলা শুনতে সোমবার রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
এই নিয়ে সাফিয়া পিএম নামে কেরালার এক মহিলা সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন ৷ তার ভিত্তিতে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ এই নিয়ে নোটিশ ইস্যু করেছে ৷ সাফিয়ার হয়ে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী প্রশান্ত পদ্মনাভন ৷ সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় একজন ল অফিসার নিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলকে ৷ ওই ল অফিসার এই মামলায় আদালতের কাজে সাহায্য করবেন ৷
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, “আপনি একটি রায় চান যে আপনি মুসলিম পার্সোনাল ল দ্বারা শাসিত হবেন না । যদিও শরিয়ত আইনের ধারা 3 অনুযায়ী আপনি না উল্লেখ করা পর্যন্ত উইল, দত্তক নেওয়া ও উত্তরাধিকারের বিষয়ে পার্সোনাল ল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন না ৷ ফলে এটার জন্য আপনার কোনও রায়ের প্রয়োজন পড়বে না ৷ যদি আপনি বা আপনার বাবা ঘোষণা না করে থাকেন, তাহলে আপনারা পার্সোনাল ল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন না ৷”
একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানান যে এই বিষয়টি ঘোষণা না করলে একটি শূন্যতা থেকে যায় ৷ তা হল এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ আইন প্রযোজ্য হয় না ৷ অন্যদিকে মামলাকারীর আইনজাবী জানতে চান যে কখন তাঁর মক্কেল নিজের স্বাধীন পছন্দ বা বিশ্বাস না করার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে ৷
শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের ওই বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করে ৷ তারা জানায়, যিনি উইল তৈরি করেছেন, তিনি যতক্ষণ না পার্সোনাল ল-এর 3 ধারার অধীনে ঘোষণা করছেন, ততক্ষণ তার উপর পার্সোনাল ল প্রয়োগ করা যাবে না ৷ কিন্তু এই বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করে আইনজীবী পদ্মনাভন শুনানির জন্য জোর দেন ৷ কিন্তু পরে প্রধান বিচারপতি জানান যে তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন যে এটা কী ধরনের পিটিশন ৷ পরে বোঝা যায় যে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ সেই কারণে নোটিশ জারির কথাও মামলাকারীর আইনজীবীকে জানানো হয় বেঞ্চের তরফে ৷
সাফিয়া পিএম এর তরফে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনে কী বলা হয়েছে ? সেখানে বলা হয়েছে, মুসলিম পার্সোনাল ল এর অধীনে না থেকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ আইন মেনে চলার অধিকার সকলের যাতে থাকে, সেই নিয়ে রায় দেওয়া হোক ৷ কিন্তু কেন তিনি এই আবেদন করলেন ? কারণ, সাফিয়া একজন মুসলিম মহিলা ৷ অথচ তাঁর বাবা ইসলাম না ছেড়েও ধর্মাচরণ না করা একজন মানুষ ছিলেন ৷ এর জেরে সাফিয়াকে নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে ৷ উল্লেখ্য, সাফিয়া কেরালায় এক্স-মুসলিম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ৷
সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে সাফিয়া আরও জানিয়েছেন যে শরিয়া আইন অনুসারে, যে ব্যক্তি ইসলামে তাঁর বিশ্বাস ত্যাগ করবে, তাঁকে তাঁর সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং তারপরে তিনি তাঁর পিতামাতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের অধিকারী হবেন না । তাই তিনি যিনি ইসলাম ত্যাগ করেন, তাহলে এই নিয়ম বর্তাবে তাঁর মেয়ের উপর ৷ সেক্ষেত্রে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে তাঁর মেয়ে ৷ তাই তিনি চান যে সুপ্রিম কোর্ট যেন রায় দেয় যে তিনি মুসলিম পার্সোনাল ল দ্বারা শাসিত হবেন না ৷
আরও পড়ুন:
- অবৈধভাবে বঞ্চিত পড়ুয়ার জন্য মেডিক্যালের অতিরিক্ত আসন বৃদ্ধির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
- বিনা বিচারে অভিযুক্তকে দীর্ঘ সময় জেলে রাখতে পারে না ইডি, স্পষ্ট বার্তা সুপ্রিম কোর্ট
- নিপীড়ন নয়, ক্ষমতা ব্যবহার হোক মুক্তির জন্য, বার্তা দেশের প্রধান বিচারপতির