নয়াদিল্লি, 12 মার্চ:লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজতে শুরু করেছে ৷ দিন ঘোষণা বাকি থাকলেও আর এক-দু'মাসের মধ্যেই ভোট হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল ৷ এদিকে 4 বছর ধরে ফেলে রাখা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লোকসভা ভোটের আগে সোমবার কার্যকর করল বিজেপি সরকার ৷ 2019 সালে এই আইন সংসদে পাশ হয়েছিল ৷ এই আইনে কারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য ? যাঁরা নাগরিকত্ব পেতে পারেন, তাঁরা কীভাবে আবেদন করবেন ? আইনেই বা কী বলা হয়েছে ?
এই আইনে কী বলা হয়েছে ? তিনটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র- পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে সময়ে সময়ে বহু অ-মুসলিম শরণার্থী হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানরা ভারতে এসেছে ৷ 2014 সালের 31 ডিসেম্বর তারিখের আগে যাঁরা এই তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে ভারতে এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করাই 2019 সালের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের উদ্দেশ্য, জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷
কারা এই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন ? এবং কীভাবে ?
নাগরিকত্ব পেতে আবেদনকারীকে অনলাইনে এমপাওয়ার্ড কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে ৷ জেলাস্তরে এই বিষয়ে নিযুক্ত আধিকারিক বা ডিওর নেতৃত্বে গঠিত জেলাস্তরীয় কমিটি বা ডিএলসি-র মাধ্যমে আবেদন করা যাবে ৷ আবেদনকারী এই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট https://indiancitizenshiponline.nic.in দেখতে পারেন ৷ অথবা CAA-2019 নামের মোবাইল অ্যাপটি ডাউনলোড করলে বিশদে জানতে পারবেন ৷ অনলাইনে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে আবেদনকারীর যোগ্যতা অনুসারে অনলাইন পদ্ধতিতে বার্তা পাবেন ওই আবেদনকারী ৷ আবেদনকারী নথিভুক্তিকরণ বা ভারতে থাকার সময় অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্ব পেতে পারেন ৷ তবে তার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলির শর্ত পূরণ করতে হবে ৷
নথিভুক্তিকরণের মাধ্য়মে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে হলে আবেদনকারীকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হতে হবে ৷
2. আবেদনকারী কোনও ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করলে নথিভুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য ৷
3. ভারতীয় নাগরিকের নাবালক সন্তান নথিভুক্তিকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারে ৷
4. আবেদনকারীর বাবা-মা যদি নথিভুক্তিকরণের পদ্ধতিতে ভারতের নাগরিক হন ৷
5. আবেদনকারী নিজে অথবা তাঁর বাবা/মা- কেউ একজন যদি স্বাধীন ভারতের নাগরিক হন
6. ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া বা ওসিআই কার্ড রয়েছে এমন ব্যক্তি নথিভুক্তিকরণ পদ্ধতিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন ৷
7. দীর্ঘ সময় ভারতে বসবাস করলেও কোনও ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন ৷ একে 'সিটিজেনশিপ বাই ন্যাচারালাইজেশন' বলা হয় ৷ এইভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতাগুলি সংবিধানের তৃতীয় সূচিতে বলা রয়েছে ৷ সেই অনুযায়ী আবেদনকারীকে ফর্ম VIIIA দেখতে হবে ৷
- আবেদনকারী যে আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের নাগরিক, তা সমর্থনে নথি
1. আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকারের ইস্যু করা পাসপোর্টের কপি
2. ভারতের ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরআরও) বা ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এফআরও) কর্তৃক ইস্যু করা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা রেসিডেনশিয়াল পারমিট ৷
3. আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকারের দেওয়া জন্মের শংসাপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট ৷
4. আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান- এই তিন দেশের স্কুল, কলেজ বা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট ৷
5. আফগানিস্তান সরকার বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকার অথবা এই দেশগুলির অন্য কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সরকারি এজেন্সিগুলির ইস্যু করা কোনও পরিচয়পত্রের নথি ৷
6. এই তিন দেশ থেকে পাওয়া কোনও লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট ৷
7. আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে বসবাসের সময়কালে জমিজমার নথি বা ভাড়ার কোনও নথি ৷
8. আবেদনকারীর বাবা-মা অথবা দাদু-দিদিমা অথবা প্রপিতামহ-প্রপিতামহী আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন ৷ অথবা এঁদের কেউ বর্তমানে এই তিনটি দেশের কোনও একটির নাগরিক ৷ এই তথ্যের সপক্ষে প্রামাণ্য নথি পেশ করতে হবে আবেদনকারীকে ৷
9. উপরে উল্লিখিত নথিগুলি ছাড়া তিনটি দেশের সরকার বা সরকারি কর্তৃপক্ষ, এজেন্সি আবেদনকারীকে এমন কোনও নথি দিয়ে থাকলে, যাতে প্রমাণ করা যায় তিনি এই তিনটির কোনও একটি দেশের নাগরিক ৷
আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ঘোষণাপত্র এবং হলফনামা জমা দিতে হবে
নতুন নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদনের সঙ্গে বেশ কিছু বিশেষ নথিও জমা দিতে হবে ৷ কী সেই নথি ?
1. আবেদনকারী আবেদনের সঙ্গে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে দেওয়া বিবৃতি সত্যি ৷ তা যাচাই করা হয়েছে এমন একটি হলফনামা জমা দিতে হবে ৷
2. সংবিধানের অষ্টম সূচিতে উল্লিখিত ভাষাগুলির কোনও একটিতে পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে আবেদনকারীর ৷ এর সপক্ষে একটি ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে আবেদনকারীকে ৷
3. আবেদনকারীকে এও ঘোষণা করতে হবে যে, তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন মঞ্জুর হলে তিনি যে দেশের নাগরিক ছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করবেন ৷
- সিএএ-র নিয়মে যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে
নথিভুক্তিকরণ বা স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য 6বি ধারার আওতায় আবেদনকারী আবেদন করতে পারেন ৷ তাঁকে জেলাস্তরীয় কমিটি বা ডিএলসির মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ফর্ম অর্থাৎ অনলাইনে এই আবেদন জানাতে হবে এমপাওয়ার্ড কমিটির কাছে ৷ আবেদনকারীর জমা দেওয়া আবেদনপত্রটি জেলাস্তরীয় কমিটির প্রধান আধিকারিক যাচাই করে দেখবেন ৷
1955 সালের (1955 সালের 57) নাগরিকত্ব আইনে আনুগত্যের শপথ বা ওয়াথ অফ এলিজেয়েন্সের বিষয়টি নির্দিষ্ট করা বলা রয়েছে ৷ সেই অনুযায়ী আবেদনকারীর আবেদনপত্রটি খতিয়ে দেখবেন শীর্ষ আধিকারিক ৷ এরপর সেই আনুগত্যের শপথ বা ওয়াথ অফ এলিজেয়েন্সে স্বাক্ষর করে সেটি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে এমপাওয়ার্ড কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেবেন ৷ তবে এর সঙ্গে শীর্ষ আধিকারিককে সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আবেদনকারীর দেয় তথ্যগুলি সত্য ৷
আবেদনকারী যদি কোনও ভাবে সশরীরে হাজিরা দিতে না পারেন subscribe the application ৷ তাঁকে যুক্তিযুক্ত বেশকিছু সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি ওয়াথ অফ এলিজিয়েন্স নিতে ব্যর্থ হয়েছেন ৷ এই অবস্থায় জেলাস্তরীয় কমিটি এমন আবেদনপত্র ফের খতিয়ে দেখার জন্য বা তা খারিজ করার জন্য এমপাওয়ার্ড কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিতে পারে ৷
নথিভুক্তিকরণ বা স্বাভাবিকভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদনকারী আবেদনপত্র জমা দেবেন ৷ 11A রুলে বলা হয়েছে, এমপাওয়ার্ড কমিটি আবেদনকারীর জমা দেওয়া আবেদন 6B ধারা অনুযায়ী যাচাই করে দেখবে ৷ কমিটি নিশ্চিত করবে যে, আবেদনপত্র সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ৷ আবেদনকারী 6B ধারার সব শর্ত পূর্ণ করেছেন ৷
কমিটি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যদি মনে করে যে আবেদনকারী নথিভুক্তিকরণ বা স্বাভাবিকভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য, তাহলে কমিটি তাঁকে ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারে ৷
- আবেদনকারীকে কীভাবে নাগরিকত্বের শংসাপত্র ইস্যু করা হবে ?
নথিভুক্তিকরণ বা স্বাভাবিকভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করলে তাঁকে ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেওয়া হবে ৷ হাতে স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেটও আবেদনকারী পেতে পারে ৷ তবে তার জন্য আবেদনকারীকে আবেদন করার সময়ই জানাতে হবে ৷ এই সার্টিফিকিটে এমপাওয়ার কমিটির কাছ থেক সংগ্রহ করতে পারবেন আবেদনকারী ৷ রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানীতে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট জনগণনা বিভাগের ডিরেক্টরের কাছ থেকে তা পাওয়া যাবে ৷
আরও পড়ুন:
- এদেশের কেউ নাগরিকত্ব হারাবে না, সিএএ লাগু নিয়ে প্রতিক্রিয়া অধীরের
- 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস', সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই উচ্ছ্বসিত মতুয়ারা
- সিএএ-বিজ্ঞপ্তি মানুষের অধিকার খর্ব করলে, আন্দোলন আজ থেকেই; হুঙ্কার মমতার