হায়দরাবাদ, 30 অক্টোবর: কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনা মনে আছে নিশ্চয়ই ? টিসিএস-এর প্রাক্তন কর্মী পার্থ দে'র নাম উঠে এসেছিল খবরের শিরোনামে ৷ আঞ্চলিক ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যম তোলপাড় হয়েছিল 2015 সালের ওই ঘটনায় ৷ তেমনই একটি ঘটনা এবার সামনে এলো নিজামের শহর হায়দরাবাদে। এখানে অবশ্য দৃষ্টিহীন দম্পতি তাঁদের বছর বত্রিশের ছেলের দেহ নিয়ে 3 দিন কাটালেন কিছুটা অপারগ হয়েই ৷ কারণ, তাঁরা জানতেই পারেননি যে তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে ৷
2015 সালের ওই ঘটনায় রবিনসন স্ট্রিটের এই বাড়িটি 'কঙ্কাল বাড়ি' নামে কুখ্যাত হয়ে যায়। এই বাড়িটির গা ছমছমে পরিবেশ দীর্ঘদিন ওই এলাকায় মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে ৷ কারণ, পার্থ দে'কে যখন তাঁর বাড়ি থেকে 'উদ্ধার' করা হয়েছিল, তখন সেই সঙ্গেই একটি মানুষের ও একটি কুকুরের কঙ্কাল উদ্ধার হয় ৷ এই দু'টি কঙ্কাল সযত্নে আগলে রেখেছিলেন পার্থ দে ৷ কঙ্কাল দু'টির একটি ছিল তাঁর দিদির আর একটি তাঁদের আদরের পোষ্য কুকুরের ৷
হায়দরাবাদের এই ঘটনা দীর্ঘ নয় বছর পরে হলেও অনেকের মনে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের 'কঙ্কাল বাড়ি'র স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে ৷ হায়দরাবাদের নাগোলের আন্ধু কলোনিতে একটি ভাড়া বাড়িতে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে তিন দিন কাটালেন দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ দম্পতি ৷ দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে তাঁরা জানতেই পারেননি যে তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে ৷ পরে 28 অক্টোবর ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা সেখানে এসে বিষয়টি দেখে চমকে যান ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ দম্পতির দু'জনেরই বয়স 60 বছরের বেশি। তাঁরা দুজনেই ছেলেকে খাবার, পানীয় জলের জন্য টানা তিনদিন ধরে ডাকাডাকি করেছেন । তবে তাদের ছেলের কোনও সাড়া পাননি। জানা গিয়েছে, এই এলাকায় ওই দম্পতি প্রায় 40 বছর ধরে রয়েছেন ৷ দম্পতির সঙ্গে তাঁদের বছর বত্রিশের ছোট ছেলে প্রমোদ থাকতেন ৷ স্থানীয়দের দাবি, প্রমোদ ছিল মদ্যপ ৷ এই কারণেই তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যান বছর খানেক আগে ৷
পুলিশের অনুমান, অত্যাধিক মদ্যপানের কারণেই অসুস্থ হয়ে গত শনিবার, 26 অক্টোবর মৃত্যু হয় প্রমোদের ৷ কিন্তু, ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতেই পারেননি দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ দম্পতি ৷ সোমবার দুপুরে পচা, দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন ৷ পুলিশ এসে দেখে, ঘরে পড়ে রয়েছে প্রমোদের দেহ ৷ পাশেই বিছানায় শুয়ে রয়েছেন তিনদিন ধরে অভুক্ত বৃদ্ধ দম্পতি ৷ এর পরই পুলিশের তরফে দেহ উদ্ধার করে ওসমানিয়া মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় এবং খবর দেওয়া বৃদ্ধ দম্পতির বড় ছেলে প্রদীপকে ৷