পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

মানুষ-পশুর সংঘর্ষ: কোন রাজ্যে কত মৃত্যু, রইল পরিসংখ্যান - human death in Animal attack

Man-Animal Conflicts: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কখনও মানুষ ঢুকে পড়ছে পশুদের আবাস্থলে ৷ আবার খাদ্যের সন্ধানে পশুরা চলে আসছে লোকালয়ে ৷ এর ফলে সরাসরি মানুষ ও পশু পরস্পরের সংস্পর্শ ঘটছে ৷ তাতে প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়ছে ৷ দেখে নিন গত কয়েক বছরে দেশের পরিসংখ্যানটি ৷

Human animal conflict
মানুষ পশুর সংঘর্ষ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 9, 2024, 7:32 PM IST

হায়দরাবাদ, 9 মার্চ: দিনে দিনে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান ও উত্তরাখণ্ড-সহ সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাড়ছে পশু-মানুষের সংঘাতের ঘটনা ৷ এর ফলে প্রাণহানির বহু ঘটনা ঘটছে ৷ বিশেষত বাঘ, হাতি এবং চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দেশে ৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মানুষ-পশুর সংঘাতে দেশের নানা রাজ্যের চিত্রটি ৷

মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত

মানুষ জীবিকার খোঁজে বনে পশুদের বাসস্থানে ঢুকে পড়ে ৷ আবার বন্যপ্রাণীরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে ৷ এর ফলে মানুষ ও পশুদের মধ্যে সংঘাত দেখা যায় ৷ তাতে মানুষ এবং বন্যপ্রাণী উভয়েরই ক্ষতি হয় । অনেক সময় পশুদের হাতে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ৷ আবার উলটোটাও হয় ৷ লোকালয়ে চলে এলে পশুর উপর আঘাত হানা হয় ৷

হাতি ও বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান

এই পরিস্থিতি সারা দেশে মানুষ-বন্যপ্রাণীর সংঘাত মোকাবিলায় নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় ৷ মানুষ-পশুর সংঘাতকে বিস্তৃতভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে ৷ যেমন, মানুষ-বাঘের সংঘাত, মানুষ-চিতাবাঘের সংঘাত এবং মানুষ-হাতির সংঘাত ।

দেশে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের পশুর আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হয় ৷ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ দ্বীপ সুন্দরবন ৷ এখানে 500টিরও বেশি রয়াল বেঙ্গল টাইগারের বাসস্থান ৷ তবে রয়াল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণে প্রতি বছর 50 থেকে 100 জনের মৃত্যু হয় সুন্দরবনে ।

রাজ্য অনুযায়ী মৃত্যুর পরিসংখ্যান

ভারতে মানব-হাতির সংঘর্ষে বছরে 400 জনের প্রাণহানি ঘটে । সংরক্ষণের দিকগুলি দেখাশোনাকারী সংস্থাদের রিপোর্ট অনুসারে এই ঘটনাগুলিতে বেশিরভাগই আর্থ-সামাজিক দিক থেকে দুর্বলদের উপর হামলা হয়েছে ৷

অনুমান অনুযায়ী, চিতাবাঘ অন্যান্য সব মাংসাশী প্রাণীর তুলনায় ভারতে বেশি মানুষকে হত্যা করে ৷ আর মানুষ ও চিতাবাঘের সংঘর্ষের খবর বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং অসম থেকে পাওয়া যায় । উল্লেখযোগ্যভাবে মানব-খাদক চিতাবাঘের জন্য বিখ্যাত উত্তরাখণ্ডের করবেট ন্যাশনাল পার্ক ৷ এখানে মানুষের উপর ঘন ঘন চিতাবাঘের আক্রমণের ঘটনা ঘটে ।

পাহাড়ে মানুষ-পশুর সংঘাত

গত তিন বছরে পশুর হামলায় উত্তরাখণ্ড থেকে 219 জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে । একই সময়ে রাজ্যে এই ধরনের হামলায় 1 হাজার 3জন মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে । 2021 সালে উত্তরাখণ্ডে 71 জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে । পরের বছর এই সংখ্যা বেড়ে 82-এ দাঁড়ায় ৷ যদিও 2023 সালে সংখ্যা কমে গিয়েছিল ৷ সে বছর পশুর আক্রমণে 66 জনের মৃত্যু হয়েছিল ।

উত্তরাখণ্ডে 2021 সালে চিতাবাঘের আক্রমণে 23 জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ৷ তারপরে 2022 এবং 2023 সালে যথাক্রমে 22 এবং 18 জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে । রাজ্যে 2021 সালে হাতির আক্রমণে 13 জন মানুষের প্রাণহানির হয়েছে । 2022 সালে পরিসংখ্যানটি ছিল 9 এবং পরের বছর হাতির সঙ্গে সংঘর্ষে আরও পাঁচজন প্রাণ হারায় । রাজ্যে চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যুর হার বেশি।

উত্তরাখণ্ড গত তিন বছরে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা কম ঘটেছে । তবে সংখ্যাটি 2021 সালে 2 ছিল ৷ পরে প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়ে 2023 সালে 17 হয়েছে । 2022 সালে রাজ্যে বাঘের আক্রমণে 16 জনের মৃত্যু হয় ।

হাতি আক্রমণে রাজ্যে অনুযায়ী মৃত্যুর পরিসংখ্যান

এলিফ্যান্ট করিডোরে মানুষ-প্রাণীর সংঘাত

পশ্চিমবঙ্গ হল আরেকটি রাজ্য যেখানে প্রায়শই মানুষ-প্রাণী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । রাজ্যের উত্তর ও পশ্চিম অংশে এলিফ্যান্ট করিডোর বেশি রয়েছে ৷ তাই এমন অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা সাধারণত বেশি ঘটে থাকে ।

2008 সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় 450টি হাতি ছিল । 2010 সালে সংখ্যাটি 530টিতে গিয়ে দাঁড়ায় এবং 2014 সালে সংখ্যাটি বেঁড়ে 640 হয়ে যায় ৷ রাজ্যের উত্তরবঙ্গে বর্তমানে হাতির সংখ্যা প্রায় 700 ৷ তবে এই হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি বন বনদফতরকে সমস্যায় ফেলেছে ৷ কারণ রাজ্যে হাতির সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বনাঞ্চল অনেক কম ৷ তঙ্গল বাড়াল বদলে বরং দিন দিন কমে যাচ্ছে । বন বিভাগের কাছে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, হাতির আক্রমণে প্রতি বছর গড়ে প্রায় 35 থেকে 50 জন মানুষের মৃত্যু হয় বাংলায় ।

জঙ্গলমহলে মানুষ-পশুর সংঘাত

ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নিয়ে গঠিত বাংলার জঙ্গলমহল এলাকা ৷ এখানে ঘন ঘন হাতির আক্রমণের শিকার হয় মানুষজন । প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হাতির করিডোরের কারণে এই এলাকাগুলিতেও গ্রাম এবং কৃষি জমিতে হাতির প্রবেশের ঘটনা ঘটে ৷ এই পরিস্থিতি মানুষের জীবনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী ইটিভি ভারতকে বলেছেন, "মানুষ বন্য হাতির সংস্পর্শে আসার কারণে 1 এপ্রিল 2023 সাল থেকে আমরা এই বছর পর্যন্ত 17 জন মানুষের হতাহতের ঘটনা রেকর্ড করেছি ।"

হাতি আক্রমণে রাজ্যে অনুযায়ী মৃত্যুর পরিসংখ্যান

বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চল সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের জন্যও পরিচিত । ঘন অরণ্য, একের পর এক ঘূর্ণিঝড়, ব্যাপক ক্ষয় এবং মানুষের বাসস্থানের দিন দিন বিস্তার ইতিমধ্যেই সুন্দরবনের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত বনের গভীরে মধু সংগ্রহ করতে ঢুকে পড়ে । এছাড়াও স্থানীয়রা কাঁকড়া ও মাছ ধরার জন্য সুন্দরবনের নদী এবং খালগুলি অতিক্রম করে জঙ্গলের গভীরে বাঘের ডেরার চলে যায় ৷ এর ফলে তারা বাঘের হামলার শিকার হয় । বন কর্মকর্তাদের মতে, সুন্দরবনে সরাসরি বাঘের সংস্পর্শে আসার পর গত পাঁচ বছরে 13 জনের প্রাণহানি ঘটেছে ৷

আরও পড়ুন:

  1. খাবারের সন্ধানে ফুলবাড়ির লোকালয়ে ঢুকে পড়ল দলছুট হাতি
  2. সঙ্গীকে বাঁচাতে বাঘের সঙ্গে লড়াই, সুন্দরবনে দক্ষিণরায়ের হামলায় মৃত্যু মৎস্যজীবীর
  3. ডুয়ার্সে বাড়ছে চিতাবাঘের হামলা, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

ABOUT THE AUTHOR

...view details