দেগঙ্গা, 11 জুলাই : আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে এবার দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ আনলেন খোদ উপপ্রধান নিজেই !শুধু অভিযোগ আনা নয়,রীতিমতো এই বিষয়ে BDO-র কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি! ঘটনাটি দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রাম পঞ্চায়েতের। এই ঘটনায় ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রধান ও উপ প্রধানের এই দ্বন্দ্ব ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও। আমফানের ক্ষতিপূরণের সরকারি টাকা নিয়ে এতদিন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান,উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজন পোষণের অভিযোগ করছিলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন । কিন্তু এবার সেই অভিযোগ ছাপিয়ে খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন উপপ্রধান নিজেই ! তদন্ত চেয়ে একেবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন । লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেগঙ্গার BDO।
দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উপপ্রধানের
দলীয় পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ করলেন উপপ্রধান ৷ আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে এই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করবেন BDO ৷ ঘটনাটি দেগঙ্গার চৌরাশি গ্রাম পঞ্চায়েতের।
আমফানের ক্ষতিপূরনের টাকা নিয়ে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ এসেছে দেগঙ্গা ব্লক থেকেই । এই অভিযোগে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে শাসকদলের একাধিক পঞ্চায়েত প্রধান উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের । এমনকি দেগঙ্গার BDO অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা । এই ইশুতে কয়েকদিন আগেই ধুন্ধুমার বাঁধে BDO অফিস চত্বর । ভাঙচুর,অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা এলাকা । সেই ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়ে বলেন,দুর্নীতির দায় দল নেবে না । যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি । এরপরই চাপে পড়ে টাকা ফেরাতে শুরু করেন দুর্নীতিগ্রস্তরা । দুর্নীতির অভিযোগে জেলার একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য ও দলীয় নেতাকে শোকজও করা হয় । এসবের মধ্যেই এবার আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বজন পোষণের অভিযোগ করলেন খোদ উপপ্রধান নিজেই । দেগঙ্গার চৌরাশি পঞ্চায়েতের প্রধান পারভিন সুলতানা । উপপ্রধান সইদুল ইসলাম । তাঁদের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের । সেই বিবাদই এবার আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে প্রকাশ্যে চলে এল । যা ঘিরে বিড়ম্বনা বেড়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
এই বিষয়ে চৌরাশি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সইদুল ইসলাম বলেন,"BDO অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নামের তালিকা পাওয়ার পর জানতে পেরেছি প্রধানের গ্রাম সংসদে 62 জনের নামের তালিকা রয়েছে । সেই তালিকায় প্রায় 70 শতাংশ মানুষের কোনও ক্ষতিই হয়নি । অথচ,তারা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গেছেন । এর থেকেই বোঝা যায় ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান"। তাঁর মতে,"এই দুর্নীতি নিয়ে আমি BDO সাহেবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি । আশা করব তিনি যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন"।
এদিকে,উপপ্রধানের অভিযোগ খন্ডন করে পঞ্চায়েত প্রধান পারভিন সুলতানা তাঁর বিরুদ্ধেই চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন,"পঞ্চায়েত গঠনের সময় থেকেই উনি আমার সঙ্গে রেষারেষি করে আসছেন। বদনাম করতেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে "। তাঁর কথায় "চৌরাশি পঞ্চায়েত এলাকায় 359 জনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় জমা দেওয়া হয়েছে BDO-র কাছে । তাই,আমার আশা উপপ্রধান নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিশ্চয় একসময় সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন"। যদিও নিজের অভিযোগে অটল থেকে উপ প্রধান পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন "প্রধান দুর্নীতি করেছেন বলেই অভিযোগ জানানো হয়েছে। তাই সেই অভিযোগ প্রত্যাহারের কোনও প্রশ্নই নেই"। অন্যদিকে,বিষয়টি নিয়ে দেগঙ্গার BDO সুব্রত মল্লিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,"উপপ্রধানের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ বিষয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।"