মেদিনীপুর, 21 অগস্ট: তৃণমূল কংগ্রেস 2011 সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর গত 11 বছরে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের নির্বিচারে কেস দেওয়া হয়েছে ৷ এমনটাই অভিযোগ বাম নেতৃত্বের ৷ রাজ্যে সেই কেসের সংখ্যা প্রায় সোয়া এক লাখ (More than one lakh case against left supporters in West Bengal) ! এমন দাবিই করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ৷ মেদিনীপুর, জঙ্গলমহলে সেই কেসের সংখ্যা প্রায় 56 হাজার ৷ আর এত কেসের পাহাড়ের আইনি লড়াই লড়তে গিয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা বামেদের ৷ বলা যায় কার্যত পরিত্রাণের পথ খুঁজছে তারা ৷
সিপিএমের অভিযোগ, 2011 সালে রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর থেকেই বামেদের বিরুদ্ধে কোনও কারণ ছাড়াই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে একাধিক কেস দিয়েছে তৃণমূল সরকারের পুলিশ ৷ সেই তালিকায় রয়েছে বাম কর্মী-সমর্থক থেকে নেতা সকলের নাম ৷ যেমন বেনাচাপড়ার কঙ্কালকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে বাম আমলে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের ৷ তেমনই বাড়ি ভাঙচুর, মারামারি, পার্টি অফিস জ্বালানো-সহ একাধিক কেস রয়েছে বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৷ অন্যান্য জেলার তুলনায় জঙ্গলমহল, মেদিনীপুরে এই কেসের সংখ্যা বেশি ৷ সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, এর কারণ হল একসময়ে পশ্চিম মেদিনীপুর ও জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাদের শক্তিশালী সংগঠন ও গণভিত্তি ছিল ৷ কেশপুর, গড়বেতা, শালবনি, চন্দ্রকোনা, পিংলা, ডেবরা, নারায়ণগড়ে ছিল সিপিএমের রমরমা ৷
আরও পড়ুন : দক্ষিণের পর উত্তর, আবার তৃণমূলের নামে হোর্ডিং, আবারও বিতর্ক
উলটোদিকে তৃণমূলের অভিযোগ, ক্ষমতার দম্ভে বলিয়ান হয়ে সেসময়ে মেদিনীপুরে 73টি হার্মাদ ক্যাম্প তৈরি করেছিল সিপিএম ৷ অভিযোগ, সেইসব ক্যাম্পে পাহাড়া দিত সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী ৷ আরও শোনা যায়, মাওবাদী এবং তৎকালীন বিভিন্ন সরকার বিরোধীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেই এইসব ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছিল মেদিনীপুর শহর লাগোয়া এনায়েতপুর, ভাদুতলা, খয়রুল্লাহ, চক নয়াগ্রাম-সহ একাধিক জায়গায় ।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তৃণমূল রাজ্যে 2011 সালে ক্ষমতায় আসার পর, বাম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কেসের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে (case against CPM leaders and workers in West Bengal) ৷ সিপিএমের অভিযোগ, বাংলার মসনদ দখল করার সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বদলা নয় বদল চাই ৷ কিন্তু ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকারের পুলিশ বাম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে একাধিক কেস দিয়েছে ৷ অভিযোগ, ভারতী ঘোষ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, সেই কেসের সংখ্যা আরও বাড়ে ৷ ওঠে মিথ্যা কেস দেওয়ার অভিযোগ ৷ এই কেসেই বর্তমানে আবদ্ধ বহু বাম কর্মী, সমর্থক ৷ এই তালিকায় রয়েছেন ঘরছাড়ারাও ৷ এতবছর ধরে কেস চলায় মারা গিয়েছেন অনেকে ৷ অনেকেই আর্থিক জরিমানা মুচলেকা দিয়ে কোনওক্রমে ফিরে এসেছেন এলাকায় ।