ভাঙড়, 27 এপ্রিল : সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট-সহ বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন বছর ৩৫-এর গৃহবধূ পুষ্প মণ্ডল । তাঁর কোভিড পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে । এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বাড়িতেই ছিলেন । কিন্তু সোমবার ভোর থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা তাড়দহ গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ভাঙড়-১ ব্লকের নলমুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন । টানা রোদে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে পার্কিং এরিয়াতেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ওই অ্যাম্বুল্যান্স । অভিযোগ, কোনও চিকিৎসক তাঁকে এসে দেখেননি । অন্যান্য রোগীর আত্মীয়রাও দুর্ব্যবহার করেন করোনা আক্রান্তদের পরিবারের লোকেদের । এই ভাবে আধঘন্টা সময় কাটার পর চিকিৎসা শুরুর আগেই ওই রোগী মারা যান৷
মৃতার পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, কয়েকবছর আগে পুষ্প মণ্ডলের স্বামী মারা যান । তাঁর দুই ছেলে সুজন ও সঞ্জয় । বড় ছেলে সুজনের বয়েস 15 আর ছোট ছেলে সঞ্জয়ের বয়েস 10 । আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতা আর পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন ওই মহিলা । সপ্তাহখানেক আগে করোনার উপসর্গ-সহ কাশি, জ্বর হয় তাঁর । অভাবের সংসারে প্রথম কয়েকদিন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি তিনি । পরে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখালে তাঁর কোভিড পরীক্ষা করার কথা বলা হয় । সেখানেই তাঁর রিপোর্ট পজেটিভ আসায় বাড়িতে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন তিনি ।
পরিবারের দাবি, সোমবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট বাড়লে সাড়ে 10টা নাগাদ সুজন মণ্ডল একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাকে নিয়ে নলমুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে । সেই সময় কোভিডের টিকা নেওয়ার জন্য ইমার্জেন্সির গেট আটকে লাইন দিয়ে ছিলেন কয়েকশো রোগী । তাঁরাই চিল চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন করোনা রোগী নিয়ে এখান দিয়ে ঢোকা যাবে না । হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সিং স্টাফরা জানান, ইমার্জেন্সিতে এখন কোনও চিকিৎসক নেই । রোগীর করোনা টেস্টের কাগজপত্রও দেখতে চান নার্সরা । কিন্তু বাড়ির লোক প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে পারেননি । এভাবেই আধঘণ্টা কেটে যায় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি ।