হায়দরাবাদ: নতুন বছর শুরুর আগে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো আবার নজিরগড়ার পথে ৷ আরও উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে ৷ আজ, সোমবার রাত 10টায় অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে শুরু হবে ইসরোর নতুন মিশন ৷ এটি ডকিং নামে পরিচিত এক জটিল প্রযুক্তি চালু করতে এবং রোভার অনুসন্ধানের পরবর্তী পদক্ষেপ ।
SpaDeX নামের এই মিশনে পৃথিবীর কক্ষপথে জোড়া উপগ্রহ সংযোগ করার জন্য এই পরীক্ষা হবে । আজ রাতে অত্যাধুনিক PSLV (পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল)-C60 রকেট এই স্যাটেলাইটগুলিকে মহাকাশে পাঠানো হবে । এই পরীক্ষাটি সফল হলে ভারত ডকিং ক্ষমতা অর্জনকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে পরিচিত হবে ।
এবার জেনে নেওয়া যাক ডকিং কি ? ডকিং হল একটি বিশেষ প্রযুক্তি যখন দু’টি পৃথক মহাকাশযান কক্ষপথে মিলিত হয় । প্রযুক্তিগতভাবে এই পক্রিয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। মহাকাশযান প্রতি ঘণ্টায় কয়েকহাজার কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে ৷ তবে এই গতি প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । দু’টি মহাকাশযানের গতির তারতম্য ঘটলে তখনই সংঘর্ষ হয়, তার ফলে ধ্বংস হয়ে যায় মহাকাশযানগুলি ৷
পিছিয়ে গেল Proba-3 মিশন, লক্ষ্মীবারে মহাশূন্য়ে রওনা দেবে PSLV-C59
প্রয়োজনীয়তা : সাধারণত রকেট ইউনিটগুলিকে এক এক করে কক্ষপথে একত্রিত করে এবং ডকিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে । আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। এই স্টেশনগুলিতে ডকিংয়ের মাধ্যমে অন্য স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য মহাকাশচারী এবং রকেটের প্রয়োজন হয় । ভারতও নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে চলেছে । এই অভিযান তারই প্রথম পদক্ষেপ ৷
- ডকিং প্রযুক্তি 'গগনযান উৎক্ষেপণে কাজে লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
- ইসরোর লক্ষ্য চন্দ্রযান-4 এর চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনা । এই উদ্দেশ্যে দু’টি রকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মডিউল মহাকাশে পাঠানো হতে পারে । এগুলিকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবী এবং চাঁদের কক্ষপথে ডকিং করা হবে ৷
- এই ডকিং সিস্টেমটি কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলির মেরামত, রিফুয়েলিং এবং আধুনিকীকরণের জন্য দরকারী। এতে ওই স্যাটেলাইটগুলোর আয়ুষ্কাল বাড়বে।
SpaDeX কী আছে ?
- চেজার স্যাটেলাইট (SDX01)
- টার্গেট স্যাটেলাইট (SDX02)
- প্রতিটির ওজন: 220 কেজি
পরীক্ষাটি কেমন ? SpaDeX মিশনে দু’টি উপগ্রহ চেজার এবং টার্গেট স্যাটেলাইট দু’টিকে আলাদাভাবে উৎক্ষেপণ করা হবে । পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল PSLV-C60-এর মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে ৷
- পৃথিবী থেকে প্রায় 470 কিলোমিটার দূরে একটি বৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথকভাবে তাদের উৎক্ষেপণ করা হবে। দু’টি স্যাটেলাইটের মধ্যে গতির দিক থেকে সামান্য পার্থক্য রয়েছে । ফলে কক্ষপথে উভয়ের মধ্যে দূরত্ব (Dift) বাড়তে থাকবে ৷
- উভয় উপগ্রহর ডকিং পদ্ধতি একই ৷
- দু’টি উপগ্রহের মধ্যে দূরত্ব 20 কিলোমিটারে হলে সমস্যা শুরু হতে পারে । উভয় স্যাটেলাইট বহনকারী রকেট একসঙ্গে উৎক্ষেপণ করা হয় ৷
পাওয়ার সাপ্লাই: ডকিং করার পর, বিজ্ঞানীরা কার্যত দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে কাজ করবেন। এই ক্ষমতা ভবিষ্যতে স্পেস রোবোটিক্সের জন্য প্রয়োজন।
আনডকিং কি ? ডকিং পরীক্ষা শেষ করার পর দু’টি উপগ্রহ আলাদা হয়ে যায় । এই প্রক্রিয়াকে আনডকিং বলা হয়। এরপর সাধারণ স্যাটেলাইটের মতো মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করা হয় । মিনিয়েচার মাল্টিস্পেকট্রাল পেলোড নামে আরেকটি যন্ত্র প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যবেক্ষণ এবং সবুজায়নের উপর গবেষণা চালানো হবে।
রেডিয়েশন মনিটর পেলোড নামক একটি যন্ত্র মহাকাশযানে তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করবে। এর ডেটা ভবিষ্যতের মহাকাশচারীদের নিয়ে মহাকাশ মিশনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ইসরো এই দুটি স্যাটেলাইটকে আবার ডকিং-য়ের চেষ্টা করবে কি না সেটা এখনই জানা যায়নি । এগুলো পক্রিয়া দুই বছরের জন্য বৈধ । নতুন বছরের 4 জানুয়ারি থেকে 10 জানুয়ারি মধ্যে এই ডকিংয়ের কাজ শুরু হবে ৷
অত্যাধুনিক ডকিং প্রযুক্তি ব্য়বহারের ক্ষেত্রে চতুর্থ দেশ হিসেবে রয়েছে ভারত ৷ মহাকাশ অভিযানের মতো জটিল ক্ষেত্রে ভারতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ ইসরোর PSLV-C60 SpaDeX মিশনে খুলে যাবে মহাকাশ গবেষণার একাধিক পথ ।
স্পেসএক্সের রকেটে মহাশূন্যে স্যাটেলাইট GSAT-20, মাঝ আকাশে মিলবে ইন্টারনেট