ETV Bharat / technology

সাইবার সুরক্ষায় সতর্কীকরণ: বাড়ছে ফেডএক্স ক্যুরিয়ার প্রতারণা, ঝুঁকির মুখে লক্ষাধিক - Cyber security Alert

FedEx Courier Fraud: ক্রমে বেড়ে চলেছে ফেডএক্স ক্যুরিয়ার প্রতারণা ৷ তার ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ 2024 সালে সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো এখনও পর্যন্ত 1026টি অভিযোগ পেয়েছে ৷ অপরাধীরা 36.74 কোটি টাকা চুরি করেছে ।

ETV BHARAT
বাড়ছে ফেডএক্স ক্যুরিয়ার প্রতারণা (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 29, 2024, 5:30 PM IST

হায়দরাবাদ, 29 মে: বিরাট এক তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে ৷ এমনই তথ্য উন্মোচন করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ৷ এ ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট অনলাইন খুচরো বিক্রেতার ডেটাবেসকে নিশানা করা হয়েছে ৷ তাদের অগণিত গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এমনকি ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ-সহ নানা গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এর ফল খুবই গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে ৷ এই সাইবার অপরাধ লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিচয় চুরি করে তাঁদের আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ৷

তথ্য চুরি

একটি অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে তথ্য চুরি হওয়া শুরু হয়েছিল, যা খুচরো বিক্রেতার সুরক্ষা পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগিয়েছে ৷ হ্যাকাররা গ্রাহকের ডেটা রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা এনক্রিপশন প্রোটোকল এবং ফায়ারওয়ালগুলিকে বাইপাস করে ডেটাবেসে অননুমোদিত অ্যাক্সেস পেতে সক্ষম হয়েছিল । একবার এর ভিতরে ঢুকে তারা ব্যক্তিগত তথ্যের গুপ্তধন চুরি করে নিয়ে যায় । সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা ক্ষতির মূল্যায়নের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছেন । একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, "এই তথ্য চুরির পরিমাণ অভূতপূর্ব ৷ হামলাকারীরা অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ ছিল এবং কোনও চিহ্নই তারা রেখে যায়নি, যার ফলে তাদের পরিচয় চিহ্নিত করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে ।"

হামলার ফল

লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের জন্য এই খবরটি দুঃস্বপ্নের থেকে কিছু কম নয় । চুরি হওয়া তথ্য অননুমোদিত লেনদেন পরিচালনা করতে, ঋণের জন্য আবেদন করতে বা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে । এই অপরাধের শিকার হওয়ার ভয় স্পষ্ট এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, "কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ক্রেডিট রিপোর্টের দিকে নজর রাখুন ৷ অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং সতর্ক থাকুন ।"

একটি নতুন কেলেঙ্কারি: ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি

ডেটা চুরির এই ঘটনার মধ্যেই একটি নতুন সাইবার অপরাধ মাথাচাড়া দিয়েছে : ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি ৷ এই কেলেঙ্কারি মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই অসংখ্য মানুষ এই কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন । এক সন্ধ্যায় রবি নামে হায়দরাবাদের একজন সম্মানিত অধ্যাপক একটি ফোন পান, যা তাঁর জীবনকে বদলে দিতে পারত । অন্য প্রান্তে থাকা কণ্ঠ শান্ত কিন্তু দৃঢ় ছিল ৷ সে বলে, "মিস্টার রবি, 'কাস্টমস' থেকে বলছি । আমরা আপনার নামে একটি প্যাকেজ সনাক্ত করেছি যাতে মাদক ও অস্ত্র রয়েছে । এই ঘটনা সিবিআইয়ের সঙ্গে জড়িত এবং আপনি সহযোগিতা না করলে আপনাকে গ্রেফতার করা হবে ।"

ETV BHARAT
কীভাবে প্রতারণা ? (ইটিভি ভারত)

রবি হতভম্ব হয়ে গেল । এমন প্যাকেজ তিনি কখনও পাঠানইনি । কিন্তু ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি রবির নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিবরণ জানত, যার ফলে হুমকিটি খুব বাস্তব বলে মনে হয় । যা ঘটছে তা বুঝে ওঠার আগেই রবিরা কাছে আরেকটি কল - এটা ছিল একটি ভিডিয়ো কল । ইউনিফর্ম পরা একজন ব্যক্তি নিজেকে একজন সিবিআই অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন, তিনি সেই গুরুতর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন এবং তাঁর দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিচে জাল নথি দেখান । এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রবি ৷ তিনি এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় জানানোর জন্য অনুরোধ করেন । ওই 'অফিসার' তখন সমাধানের উপায় হিসেবে বলেন, টাকা স্থানান্তর করাই একমাত্র উপায় ৷ গ্রেফতারি এড়াতে 99 লাখ টাকা পাঠাতে হবে । প্রচণ্ড চাপে ও আতঙ্কে রবি তাঁর কথা মেনে চলেন ৷ পরে বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন ।

প্রতারিতের পরিসংখ্যান

শুধু রবি নন, আরও এক অধ্যাপকের ক্ষতি হয়েছে 45 লক্ষ টাকা । হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর 80 লক্ষ টাকা প্রতারিত হয়েছে । স্ক্যামারদের কৌশল নির্মম এবং নিরলস । তারা তাদের শিকারদের ফোন করে, হুমকি দিয়ে এবং ম্যানিপুলেট করে চলেন যতক্ষণ না- তারা পছন্দসই পরিমাণে টাকা বের করে আনছেন । একটি বিশেষ যন্ত্রণাদায়ক ঘটনায় একজন মহিলাকে রাতভর স্কাইপ কলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বন্দি করা হয়েছিল । সকাল নাগাদ, সে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে 60 লাখ টাকা ট্রান্সফার করেছে । তাকে প্রতারিত করা হয়েছে বুঝতে পেরে, তিনি অবিলম্বে 1930 কল সেন্টারে যোগাযোগ করেন, যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো তহবিল ফ্রিজ করে দেয় ।

প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই

শুধুমাত্র এ বছর সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো 1026 টি অভিযোগ পেয়েছে, অপরাধীরা 36.74 কোটি টাকা চুরি করেছে । সময়মতো অভিযোগ জানানোর সৌজন্যে কর্তৃপক্ষ 7.46 কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে । অতিরিক্ত ডিজি তথা সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরোর অধিকর্তা শিখা গোয়েল এই সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অগ্রভাগে রয়েছেন । তিনি বলেন, "এই স্ক্যামাররা কোনও কসুর বাকি রাখে না ৷ কিন্তু ভুক্তভোগীরা যদি অবিলম্বে অভিযোগ করেন, তাহলে আমাদের কাছে টাকা আটকে দেওয়ার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ভালো সুযোগ আছে ।"

কোন দিকে নজর রাখতে হবে ?

শিখা গোয়েল বলেন, দেশের কোনও জায়গা থেকে কোনও এজেন্সি থেকে কেউ কারওকে ভিডিয়ো কল করে না । সুতরাং কেউ যদি আপনাকে বলে, একটি ভিডিয়ো কলে আসুন এবং আমরা আপনার বক্তব্য রেকর্ড করব, এটা সত্য নয় ।

তিনি এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, দেশের কোনও সংস্থা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বিবৃতি রেকর্ড করবে না । শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে বিবৃতি রেকর্ড করা হয় বা ভিডিয়ো কনফারেন্সিং করা হয়, যখন আদালত বিচারের সময় এটি করা প্রয়োজন বলে মনে করে । তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তদন্তের সময় এটা কোথাও ঘটতে পারে না । তাঁর কথায়, "সুতরাং যদি কেউ আপনাকে এটা করতে বলে, দয়া করে বিশ্বাস করবেন না ৷"

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, "প্রতিদিন আমরা 1930 হেল্পলাইনে 20 থেকে 30টি কল পাই, এখন শুধুমাত্র এই ফেডএক্স জালিয়াতির জন্য তেলেঙ্গানায় প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে ৷ সম্প্রতি, একটি একক ক্ষেত্রে একজন প্রতারিত ছয় কোটি টাকা হারিয়েছেন ৷" অন্য একজন প্রতারিত, যিনি সতর্ক ছিলেন, তিনি সম্প্রতি 60 লাখ টাকা ট্রান্সফার করার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পান যে, তিনি কিছু ভুল করেছেন । অবিলম্বে, তিনি 1930 এ কল করেন এবং পুরো 60 লাখ টাকা বাঁচানো সম্ভব হয় ৷

কীভাবে নিরাপদে থাকা যায় ?

যে কোনও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি কোনও অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না । কোনও অজানা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, কেউ যদি বলে যে আপনি কোনও অপরাধ করেছেন তাহলে তা বিশ্বাস করবেন । আপনি যদি সেই কাজটি না-করে থাকেন তবে আপনি কোনও অপরাধ করেননি । কোনও ব্যক্তি/আত্মীয় বিদেশে বসবাস না-করলেও কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা বিদেশ থেকে একটি পার্সেল পেয়েছেন । তাই সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন ।

কোথায় অভিযোগ ?

শিখা গোয়েলের পরামর্শ, যদি কোনওভাবে আপনি এই প্রতারণার শিকার হন, তাহলে অবিলম্বে 1930 ডায়াল করুন (যদি আপনি তেলেঙ্গানায় থাকেন), আমরা আপনার অর্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হব । এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে আমরা টাকা রক্ষা করতে পেরেছি । তেলেঙ্গানা সাইবার ব্যুরো 400 কোটি টাকারও বেশি ফ্রিজ করেছে ৷

অন্যান্য রাজ্য

আপনি যদি প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা হারান, তাহলে আপনাকে জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । এটি করার মাধ্যমে, আপনি যদি কোনও টাকা হারিয়ে ফেলেন, তবে এই অভিযোগের মাধ্যমে আপনার তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে ।

হায়দরাবাদ, 29 মে: বিরাট এক তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছে ৷ এমনই তথ্য উন্মোচন করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ৷ এ ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট অনলাইন খুচরো বিক্রেতার ডেটাবেসকে নিশানা করা হয়েছে ৷ তাদের অগণিত গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এমনকি ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ-সহ নানা গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ৷ এর ফল খুবই গুরুতর এবং সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে ৷ এই সাইবার অপরাধ লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিচয় চুরি করে তাঁদের আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ৷

তথ্য চুরি

একটি অত্যাধুনিক সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে তথ্য চুরি হওয়া শুরু হয়েছিল, যা খুচরো বিক্রেতার সুরক্ষা পরিকাঠামোর দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগিয়েছে ৷ হ্যাকাররা গ্রাহকের ডেটা রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা এনক্রিপশন প্রোটোকল এবং ফায়ারওয়ালগুলিকে বাইপাস করে ডেটাবেসে অননুমোদিত অ্যাক্সেস পেতে সক্ষম হয়েছিল । একবার এর ভিতরে ঢুকে তারা ব্যক্তিগত তথ্যের গুপ্তধন চুরি করে নিয়ে যায় । সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা ক্ষতির মূল্যায়নের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছেন । একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, "এই তথ্য চুরির পরিমাণ অভূতপূর্ব ৷ হামলাকারীরা অবিশ্বাস্যভাবে দক্ষ ছিল এবং কোনও চিহ্নই তারা রেখে যায়নি, যার ফলে তাদের পরিচয় চিহ্নিত করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে ।"

হামলার ফল

লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের জন্য এই খবরটি দুঃস্বপ্নের থেকে কিছু কম নয় । চুরি হওয়া তথ্য অননুমোদিত লেনদেন পরিচালনা করতে, ঋণের জন্য আবেদন করতে বা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে । এই অপরাধের শিকার হওয়ার ভয় স্পষ্ট এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, "কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপের জন্য আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ক্রেডিট রিপোর্টের দিকে নজর রাখুন ৷ অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আপনার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং সতর্ক থাকুন ।"

একটি নতুন কেলেঙ্কারি: ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি

ডেটা চুরির এই ঘটনার মধ্যেই একটি নতুন সাইবার অপরাধ মাথাচাড়া দিয়েছে : ফেডএক্স ক্যুরিয়ার জালিয়াতি ৷ এই কেলেঙ্কারি মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই অসংখ্য মানুষ এই কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন । এক সন্ধ্যায় রবি নামে হায়দরাবাদের একজন সম্মানিত অধ্যাপক একটি ফোন পান, যা তাঁর জীবনকে বদলে দিতে পারত । অন্য প্রান্তে থাকা কণ্ঠ শান্ত কিন্তু দৃঢ় ছিল ৷ সে বলে, "মিস্টার রবি, 'কাস্টমস' থেকে বলছি । আমরা আপনার নামে একটি প্যাকেজ সনাক্ত করেছি যাতে মাদক ও অস্ত্র রয়েছে । এই ঘটনা সিবিআইয়ের সঙ্গে জড়িত এবং আপনি সহযোগিতা না করলে আপনাকে গ্রেফতার করা হবে ।"

ETV BHARAT
কীভাবে প্রতারণা ? (ইটিভি ভারত)

রবি হতভম্ব হয়ে গেল । এমন প্যাকেজ তিনি কখনও পাঠানইনি । কিন্তু ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি রবির নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিবরণ জানত, যার ফলে হুমকিটি খুব বাস্তব বলে মনে হয় । যা ঘটছে তা বুঝে ওঠার আগেই রবিরা কাছে আরেকটি কল - এটা ছিল একটি ভিডিয়ো কল । ইউনিফর্ম পরা একজন ব্যক্তি নিজেকে একজন সিবিআই অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন, তিনি সেই গুরুতর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেন এবং তাঁর দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিচে জাল নথি দেখান । এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রবি ৷ তিনি এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় জানানোর জন্য অনুরোধ করেন । ওই 'অফিসার' তখন সমাধানের উপায় হিসেবে বলেন, টাকা স্থানান্তর করাই একমাত্র উপায় ৷ গ্রেফতারি এড়াতে 99 লাখ টাকা পাঠাতে হবে । প্রচণ্ড চাপে ও আতঙ্কে রবি তাঁর কথা মেনে চলেন ৷ পরে বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন ।

প্রতারিতের পরিসংখ্যান

শুধু রবি নন, আরও এক অধ্যাপকের ক্ষতি হয়েছে 45 লক্ষ টাকা । হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর 80 লক্ষ টাকা প্রতারিত হয়েছে । স্ক্যামারদের কৌশল নির্মম এবং নিরলস । তারা তাদের শিকারদের ফোন করে, হুমকি দিয়ে এবং ম্যানিপুলেট করে চলেন যতক্ষণ না- তারা পছন্দসই পরিমাণে টাকা বের করে আনছেন । একটি বিশেষ যন্ত্রণাদায়ক ঘটনায় একজন মহিলাকে রাতভর স্কাইপ কলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বন্দি করা হয়েছিল । সকাল নাগাদ, সে প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে 60 লাখ টাকা ট্রান্সফার করেছে । তাকে প্রতারিত করা হয়েছে বুঝতে পেরে, তিনি অবিলম্বে 1930 কল সেন্টারে যোগাযোগ করেন, যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো তহবিল ফ্রিজ করে দেয় ।

প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই

শুধুমাত্র এ বছর সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরো 1026 টি অভিযোগ পেয়েছে, অপরাধীরা 36.74 কোটি টাকা চুরি করেছে । সময়মতো অভিযোগ জানানোর সৌজন্যে কর্তৃপক্ষ 7.46 কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে । অতিরিক্ত ডিজি তথা সাইবার সিকিউরিটি ব্যুরোর অধিকর্তা শিখা গোয়েল এই সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অগ্রভাগে রয়েছেন । তিনি বলেন, "এই স্ক্যামাররা কোনও কসুর বাকি রাখে না ৷ কিন্তু ভুক্তভোগীরা যদি অবিলম্বে অভিযোগ করেন, তাহলে আমাদের কাছে টাকা আটকে দেওয়ার এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ভালো সুযোগ আছে ।"

কোন দিকে নজর রাখতে হবে ?

শিখা গোয়েল বলেন, দেশের কোনও জায়গা থেকে কোনও এজেন্সি থেকে কেউ কারওকে ভিডিয়ো কল করে না । সুতরাং কেউ যদি আপনাকে বলে, একটি ভিডিয়ো কলে আসুন এবং আমরা আপনার বক্তব্য রেকর্ড করব, এটা সত্য নয় ।

তিনি এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, দেশের কোনও সংস্থা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বিবৃতি রেকর্ড করবে না । শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রে বিবৃতি রেকর্ড করা হয় বা ভিডিয়ো কনফারেন্সিং করা হয়, যখন আদালত বিচারের সময় এটি করা প্রয়োজন বলে মনে করে । তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তদন্তের সময় এটা কোথাও ঘটতে পারে না । তাঁর কথায়, "সুতরাং যদি কেউ আপনাকে এটা করতে বলে, দয়া করে বিশ্বাস করবেন না ৷"

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, "প্রতিদিন আমরা 1930 হেল্পলাইনে 20 থেকে 30টি কল পাই, এখন শুধুমাত্র এই ফেডএক্স জালিয়াতির জন্য তেলেঙ্গানায় প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে ৷ সম্প্রতি, একটি একক ক্ষেত্রে একজন প্রতারিত ছয় কোটি টাকা হারিয়েছেন ৷" অন্য একজন প্রতারিত, যিনি সতর্ক ছিলেন, তিনি সম্প্রতি 60 লাখ টাকা ট্রান্সফার করার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পান যে, তিনি কিছু ভুল করেছেন । অবিলম্বে, তিনি 1930 এ কল করেন এবং পুরো 60 লাখ টাকা বাঁচানো সম্ভব হয় ৷

কীভাবে নিরাপদে থাকা যায় ?

যে কোনও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি কোনও অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না । কোনও অজানা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, কেউ যদি বলে যে আপনি কোনও অপরাধ করেছেন তাহলে তা বিশ্বাস করবেন । আপনি যদি সেই কাজটি না-করে থাকেন তবে আপনি কোনও অপরাধ করেননি । কোনও ব্যক্তি/আত্মীয় বিদেশে বসবাস না-করলেও কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা বিদেশ থেকে একটি পার্সেল পেয়েছেন । তাই সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন ।

কোথায় অভিযোগ ?

শিখা গোয়েলের পরামর্শ, যদি কোনওভাবে আপনি এই প্রতারণার শিকার হন, তাহলে অবিলম্বে 1930 ডায়াল করুন (যদি আপনি তেলেঙ্গানায় থাকেন), আমরা আপনার অর্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হব । এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে আমরা টাকা রক্ষা করতে পেরেছি । তেলেঙ্গানা সাইবার ব্যুরো 400 কোটি টাকারও বেশি ফ্রিজ করেছে ৷

অন্যান্য রাজ্য

আপনি যদি প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা হারান, তাহলে আপনাকে জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । এটি করার মাধ্যমে, আপনি যদি কোনও টাকা হারিয়ে ফেলেন, তবে এই অভিযোগের মাধ্যমে আপনার তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.