কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: ফের অপেক্ষা। এখনও ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়নি যে কেন শুটিং বন্ধ করতে হল জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং সৃজিত রায়কে। ফেডারেশনের দাবি অনুযায়ী এই দুই পরিচালকই ফেডারেশন বিরোধী কথা বলেছেন। তবে, ফেডারেশন তাদের এই দাবির কোনও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি 5 তারিখ অবধি। পরিচালকদের সংগঠন 6 ফেব্রুয়ারি সন্ধে 7টা পর্যন্ত উত্তরের অপেক্ষা করে। ফেডারেশনের একাংশ কেন শুটিং বন্ধ করেছে, তা জানতে চেয়েই এই সিদ্ধান্ত ।
গত বছর জুলাই মাসে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে যে ঘটনার সূত্রপাত তার ধারাবাহিকতা অব্য়াহত ৷ অভিনেতা-পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, "পরিচালকদের খুব অ-দরকারি মনে হচ্ছে আজ। দর্শকের জন্য তাঁদের বোধহয় কোনও দরকার নেই। তাঁরা বোধহয় গল্প বলেন না। খুব দুঃখের সঙ্গে আজ এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হচ্ছি। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের সিরিজ 'অচিন্ত্য আইচ'-এর সিজন টু'র কাজ কেন শুরু হচ্ছে না তার কোনও উত্তর ওঁর নিজের কাছেই নেই।
ওদিকে পরিচালক-প্রযোজক সৃজিত রায়ের আসন্ন ধারাবাহিকের কাজও শুরু হয়নি। সেট তৈরির কাজই হয়নি। তিনদিন অতিক্রান্ত, কাজ বন্ধ সৃজিতের ফ্লোরের। কেউ জানে না কবে শুরু করতে পারবে কাজ। ফেডারেশনের কাছ থেকে এখনও কোনও সদুত্তর আসেনি জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং সৃজিত রায়ের কাছে যে তাঁরা কবে কাজটা শুরু করতে পারবেন বা আদৌ পারবেন কি না। মুখ্যমন্ত্রী কাজ বন্ধ করতে নিষেধ করার পরেও কীভাবে কাজ বন্ধ করা হয় ভাবনার অতীত।"
পরিচালক সৃজিত রায় বলেন, "ফেডারেশন আমাকে এবং জয়দীপ দা'কে সঠিক ব্যাখ্যা দিক। আমরা ফেডারেশনের মাদার বডির মেম্বার। ফেডারেশন বিনা নোটিসে এটা করতে পারে না। ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী এর অধীনে থাকা কোনও গিল্ডই এটা করতে পারে না। আমরা 6 ফেব্রুয়ারি অবধি সেই ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করব। এরপর পরিচালকরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাতে আমার এবং জয়দীপ দা'র কোনও আপত্তি নেই।"
জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, "30 জানুয়ারি মেল করে জানানো হয় 3 ফেব্রুয়ারি সন্ধে 7টায় একটা মিটিং ডাকা হয়েছে। আমার যে শুটিংটা 27 জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল সেটার মিটিং 3 ফেব্রুয়ারি ডাকলেন। আমার প্রোডাকশন থেকে লোক গেলে তাদের আধ ঘণ্টার উপরে বসিয়ে রাখা হয়। একজন অবশেষে এসে বলে আপনারা 4 তারিখ 1টা নাগাদ ফোন করুন। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব। সেটাও করা হয়। কিন্তু কিছুই জানানো হয়নি। 5 তারিখও চলে গেল। আমার দুপুরের ফেসবুক লাইভের পর জানায় যে সন্ধে 7টার সময় মিটিং করবে। লোক গেলে বলে, আপনারা কি টাকা দেন টেকনিশিয়ানদের? এই সব প্রশ্নের মানে কী বুঝলাম না। মানে ইচ্ছে করেই কাজ বন্ধ করা হচ্ছে।"
ডিরেক্টর্স গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন বলেন, "32 দিনের শিডিউল ছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি 'জংলা'র। সেখানে 1 কোটি 35 লক্ষ টাকাই টেকনিশিয়ানদের। তা হলে এই যে কাজটা বন্ধ রইল তাতে কাদের বেশি ক্ষতি হল? কারা পেল না টাকাটা? "
সুদেষ্ণা রায় বলেন, "ফেডারেশনের কাছ থেকে মেইলের উত্তর পাওয়াই যায় না। তারা নাকি মেইল খুঁজেই পায় না। 15 দিনের মধ্যে তিনজন পরিচালকের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। যার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা নেই। কারা কথা বলতে চাইছে না বোঝাই যাচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যাটা দিয়ে দিক। এখনও অবধি কমিটি গঠন হল না। আমরা 6 ফেব্রুয়ারি সন্ধে 7টা অবধি অপেক্ষা করব ফেডারেশনের কাছ থেকে সঠিক ব্যাখ্যার জন্য।"
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, "সমাধান খুঁজতে গেলে ধৈর্য ধরতে হবে। প্রয়োজনে আরও চার দিন আমরা অপেক্ষা করব। যাতে এই পরিস্থিতি আমরা এড়াতে পারি।" পরমব্রতর কথায়, "আমরা কোনও সংঘাত চাই না। বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান চাই। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে চাইছি।" |
উল্লেখ্য, 4 ফেব্রুয়ারি বেলা 1টার সময় ফেডারেশনের তরফে পরিচালকদেরকে জানানোর কথা ছিল যে কেন জয়দীপ এবং সৃজিতের সঙ্গে কলাকুশলীরা কাজ করতে চাইছেন না। কিন্তু 5 ফেব্রুয়ারি রাত কেটে গেলেও মেলেনি কোনও সদুত্তর। এরই মাঝে 5 ফেব্রুয়ারি সন্ধে বেলা ডিরেক্টরস গিল্ডের অফিসে বৈঠকে বসেন পরিচালকেরা। ছিলেন সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেন, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সৃজিত রায়, অনিন্দ্য সরকার, পারমিতা মুন্সী, দেবালয় ভট্টাচার্য, অভিষেক সাহা, অভিজিৎ গুহ, মানসী সিনহা, অমিত দাস, দেবপ্রতীম দাশগুপ্ত সহ আরও অনেকে। সকলেরই একটাই দাবি, সঠিক ব্যাখ্যা চাই ।