চুঁচুড়া, 14 জুলাই: পুলিশের চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল যুবকের । ঘটনাটি ঘটে চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে ৷ মৃত যুবকের নাম আকাশ সিং (22)। প্রতিদিনের মতোই তিনি রবিবার সকালে শারীরিক কসরত করতে গিয়েছিলেন । প্র্যাকটিস শেষে স্নান করছিলেন তিনি । ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের গভীর নলকূপের পাইপে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আকাশ ।
এরপরই তাঁর এক সঙ্গী বিষয়টি আকাশকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে । তবে কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত করছে চুঁচুড়া থানার পুলিশ । সেই সময় ওই নলকূপের অপারেটর কোথায় ছিল, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ । স্থানীয়দের দাবি, অপারেটর থাকলে এই ধরনের অঘটন ঘটত না ৷
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে খবর, চুঁচুড়া পুরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের দত্ত কলোনির বাসিন্দা আকাশ । পুলিশের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে প্রতিদিন দৌড়তে যেতেন চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে । চুঁচুড়া স্টেশনের কাছেই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের ভিতর বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে কৃষি খামার । এই কেন্দ্র একটি সংরক্ষিত জায়গা । ধানের গবেষণার জন্য এই জায়গাটিকে কৃষি খামার হিসাবে ব্যবহার করা হয় । এছাড়াও একাধিক অফিস রয়েছে এখানে ।
চুঁচুড়ার বহু মানুষ সকাল বিকাল ভ্রমণের জন্য সেখানে যান । চাষের জন্য একাধিক গভীর নলকূপ রয়েছে সেখানে । নিজস্ব কৃষিকাজের জন্য অনেকেই সেখানে কাজ করেন । সেখানে ফাঁকা রাস্তায় প্র্যাকটিস করতেন আকাশ । রবিবার সকালে তাঁর সঙ্গে সাগর বিশ্বাস নামে এক বন্ধুও ছিলেন । প্র্যাকটিস শেষ করে গভীর নলকূপের জলে স্নান করেন তাঁরা । নলকূপের পাইপে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আকাশ । পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধু বুঝতে পেরে রাস্তা থেকে টোটো ডেকে আনেন । এক কৃষক তখন জমিতে কাজ করছিলেন । তাঁর সাহায্যে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আকাশকে ।
আকাশের বাবা লক্ষ্মী নারায়ণ সিং দিনমজুর । বাড়িতে আকাশ বড় ছেলে ৷ তাঁর এক ভাই ও এক বোন রয়েছে । সংসারের হাল ধরতে একটা চাকরির জন্য খুব পরিশ্রম করছিলেন তিনি ৷ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য তিনি দৌড়তেন ও শারীরিক পরিশ্রম করতেন । তাঁর মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা রেখা সিং । গভীর শোকাহত প্রতিবেশীরা । এক প্রতিবেশী তাপস সাহা বলেন, "চুঁচুড়ায় যত মাঠ সব ফেন্সিং দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে । শরীরচর্চা বা দৌড়নোর জন্য কোনও মাঠে ঢুকতে দেওয়া হয় না । মাঠের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে । তাই বন্ধুদের সঙ্গে ফার্মে দৌড়তে যেত আকাশ । দৌড় শেষে স্নান করে বাড়ি ফিরত । কিন্তু আজ আর বাড়ি ফেরেনি ।"