মালদা, 16 জুলাই: কাকীমার সঙ্গে পরকীয়া যুবকের ! এমনই দাবি গ্রামবাসীদের ৷ তারা নাকি হাতেনাতে দু’জনকে ধরেও ফেলেছিল ৷ তারপরই মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হলেন মহিলা এবং ওই যুবক ৷ ঘটনাটি গত রবিবার মালদার কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের একটি গ্রাম ৷ অভিযোগ ওই গ্রামের মোড়ল-মাতব্বরদের একাংশ প্রথমে দু’জনকে ইলেকট্রিক পোলে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে, সঙ্গে চলে অমানুষিক নির্যাতন ৷
অভিযোগ উঠেছে, সালিশি সভা বসিয়ে মহিলা এবং ওই যুবকের মুখে চুনকালি মাখানো হয় ৷ এমনকি গলায় জুতোর মালা পরিয়ে পুরো গ্রামে ঘোরানো হয়েছে তাঁদের ৷ এখানেই শেষ নয়, জুতো মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানোর সময় উৎসবের মেজাজে আতসবাজি ফাটানো হয় বলে অভিযোগ ৷ আর এই ঘটনার খবর যাতে বাইরে না-বের হয়, সেই ব্যবস্থাও করেছিল সালিশি সভার অভিযুক্ত মোড়লরা ৷ সবাইকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷
কিন্তু, সোমবার আক্রান্ত যুবক কালিয়াচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ তখনই হইচই পড়ে যায় পুরো এলাকায় ৷ অভিযোগ পেয়ে 18 জনকে গ্রেফতার করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ নির্যাতিতা মহিলা বর্তমানে মালদার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷ নার্সিংহোম সূত্রে খবর, তিনি ওই ঘটনার বিভৎসতার জেরে ট্রমায় রয়েছেন৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নির্যাতনের পরিকল্পনার মূলে ওই গ্রামের এক সিপিআইএম পঞ্চায়েত সদস্য ৷ অভিযোগ তাঁর কথাতেই গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয় ৷ সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরকীয়া করায় যুবক এবং তাঁর কাকিমার মুখে চুন-কালি মাখানো হবে ৷ সঙ্গে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো হবে ৷ অভিযোগ এরপর ঘণ্টাতিনেক ধরে দু’জনের উপর চলে মধ্যযুগীয় অত্যাচার ৷ গ্রামের প্রভাবশালীদের দাপটে কেউ কোনও প্রতিবাদ করেনি বলে দাবি করা হয়েছে ৷
তবে, গ্রামের কয়েকজন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ গোপনে নির্যাতনের সেই ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে লালবাজারে পাঠিয়ে দেন ৷ সেই ভিডিয়ো ক্লিপ দেখেই নড়েচড়ে বসেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা ৷ তাঁরা কালিয়াচক থানার আধিকারিকদের দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন ৷ এরই মধ্যে আক্রান্ত যুবক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ এরপরেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত 18 জনকে আটক করে ৷ পরবর্তীতে 11 জনকে গ্রেফতার করা হয় ৷
আক্রান্ত যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ৷ ওই মহিলা তাঁর কাকিমা ৷ তাঁর কাকা বর্তমানে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন ৷ যুবককে কাকিমার দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর কাকা ৷ কোনও প্রয়োজনে কাকিমাকে সাহায্য করতে বলেছিলেন ৷ তাই তিনি মাঝেমধ্যে কাকুর বাড়িতে গিয়ে কাকিমার খোঁজখবর নিতেন ৷ তাঁর বাড়ির কাজকর্মও করে দিতেন ৷ এর সঙ্গে পরকীয়ার কোনও সম্পর্ক নেই ৷
গোটা ঘটনায় সিপিআইএমের পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, জেলা নেতৃত্ব এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ৷ সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের বক্তব্য, "আমি এসবের কিছুই জানি না ৷ আগে বিষয়টি জানতে হবে ৷ তারপরেই কিছু বলতে পারব ৷" তবে, জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, "এই ঘটনায় ইতিমধ্যে 18 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে আজ ধৃতদের মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হবে ৷ আর কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"